একটা সময় বেশ বয়স্ক লোকদেরও পেশাদার ক্রিকেট খেলতে দেখা যেতো। তবে আধুনিক ক্রিকেটে ফিটনেস এক মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে একটা বয়সের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা মোটামুটি অসম্ভবই হয়ে যায়। এখনকার সময়ে অনুর্ধব-১৯ দলের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদেরই জাতীয় দলে সুযোগ দেয়া হয়। ফলে বিশ-একুশ বছরেই অধিকাংশ ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়ে যায়।
অনেকে আবার বয়সের এই বাঁধাকে দিব্যি এড়িয়ে যেতে পারেন। ইতিহাস ঘাটলে অনেক ক্রিকেটারকেই দেখা যায় যাদের অভিষেক হয়েছে বয়স ৩০ হয়ে যাওয়ার পর। আন্তর্জার্তিক ক্রিকেটে দারুণ সাফল্যও পেয়েছেন তাঁরা।
- বিজয় হাজারে (ভারত)
ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটার ৩১ বছর বয়সে দেশটি হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এরপর সাত মৌসুম ক্রিকেট খেলে ১৯৫৩ সালে অবসরে গিয়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম বারের মত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ভারত।
এছাড়া ১৯৪৭-৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন বিজয় হাজারে। সবমিলিয়ে ভারতের হয়ে ৩০ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৫২ টেস্ট ইনিংসে ৪৭.৬৫ গড়ে করেছিলেন ২১৯২ রান। তাঁর ঝুলিতে আছে সাতটি সেঞ্চুরি ও নয়টি হাফ সেঞ্চুরি।
- রায়ান হ্যারিস (অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ক্রিকেটারও টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ৩১ বছর বয়সে। তবুও অজি এই পেসটার দেশটির অন্যতম সেরা পেসারদের একজন হয়ে উঠেছিলেন। ২০১৩ সালে অ্যাশেজ জয়ের পিছনে মূল ভূমিকা ছিল এই পেসারের। সেই সিরিজে ১৯.৫৮ গড়ে নিয়েছিলেন ২৪ উইকেট।
এরপরের অ্যাশেজ সিরিজেও ২২ উইকেট নিয়েছিলেন হ্যারিস। ২০১৫ সালে হাটুর ইনজুরির কারণে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন তিনি। তিবে এর আগে ২৭ টেস্ট ম্যাচে ২৩.৫২ গড়ে হ্যারিস নিয়েছিলেন ১১৩ উইকেট।
- ক্রিস রজার্স ( অস্ট্রেলিয়া)
অস্ট্রেলিয়ার আরেকজন ক্রিকেটার যিনি ৩০ বছর বয়সে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে অভিষেক হলেও এরপর আবার ছিটকে যান তিনি।
২০১৩ সালে আবার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ফিরে আসেন এই ব্যাটসম্যান। এখন অবধি ২৫ টেস্টে ৪২.৮৭ গড়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ২০১৫ রান। তাঁর ঝুলিতে আছে পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ১৪ টি হাফ সেঞ্চুরি।
- সাঈদ আজমল (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সাবেক স্পিনার সাঈদ আজমল টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সে। সেই বছরউ ৫০ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এই স্পিনার। সবমিলিয়ে এখন আজমলের ঝুলিতে আছে ১৭৮ টি উইকেট।
১০ বার পাঁচ উইকেট ও ৪ চার দশ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে এই বোলারের। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটেও তাঁর ঝুলিতে আছে ১৮২ উইকেট। যদিও তাঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। সেটা না হলে, ক্যারিয়ার আরো লম্বা হত।
- মাইকেল হাসি (অস্ট্রেলিয়া)
এই তালিকার সবচেয়ে বড় নাম সম্ভবত মাইকেল হাসিই। অস্ট্রেলিয়ার পরিচিত এই ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন তাঁর ৩০ তম জন্মদিনেই। রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্কদের সাথে তাঁর ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল।
সবমিলিয়ে ৭৯ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন হাসি। সেখানে ৫১.৫২ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৬২৩৫ রান। এছাড়া তাঁর ঝুলিতে আছে ১৯ টি সেঞ্চুরি। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপও জিতেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। তিনি মিস্টার ক্রিকেট নামে বিখ্যাত, তাঁর মত নিপাট ভদ্রলোক এই খেলাটিতে আর আসেননি বললেই চলে।