ম্যাচের আগে মাঠ এবং মাঠের বাইরে উত্তাপ ছড়াচ্ছিলেন দুইদলের খেলোয়াড়-সমর্থকরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নের সাথে বিশ্ব র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দলের লড়াই, সাথে রোনালদো আলি দাইয়িকে ছাড়িয়ে যাবেন কিনা সেটাও ছিল দেখার। কিন্তু পারলেন না রোনালদো, পারলো না পর্তুগালও। পর্তুগালের শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে শেষ আটে পা রাখল রবার্তো মার্টিনেজের শিষ্যরা। ৪২ মিনিটে থোরগান হ্যাজার্ডের চোখধাঁধানো এক গোলে ম্যাচ জিতে নেয় লাল-কালোরা।
বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের একসাথে সম্ভবত এটাই শেষ ইউরো। গত কয়েক আসর ধরেই শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। নিয়মিত ভালো ফুটবল খেললেও নকআউট গেলেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন বেলজিয়ানরা।
বিশ্বকাপ-ইউরো মিলিয়ে টানা চার টুর্নামেন্টে কোয়ার্টারে উঠলেও পাল্টেনি শিরোপাভাগ্য। এবার তাই সেই অভিশাপ ঘুচাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কেভিন ডি ব্রুইনা-ইডেন হ্যাজার্ড-রোমেলু লুকাকুরা। টুর্নামেন্টে এসেছেন বিশ্ব র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবে, এখনো পর্যন্ত দল খেলছেও এক নম্বরের মতোই।
মিরাকল না ঘটলে টানা পাঁচ ইউরো খেলা রোনালদোর এটাই শেষ ইউরো। অথচ এই বয়সে এসেও ব্রুনো ফার্নান্দেজ, জোয়াও ফেলিক্স, ডিয়েগো জোটা, বার্নান্দো সিলভাদের পেছনে ফেলে পর্তুগালের মূল তারকা তিনিই। পারফরমেন্সও সেই কথাই বলে, এবারের ইউরোতে পর্তুগালের সাত গোলের পাঁচটিই তার। এক রেনাতো সানচেজ বাদে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই।
নখদন্তহীন মিডফিল্ড, ডিফেন্সের হাস্যকর ভুল, বাকি ফরোয়ার্ডের বাজে ফিনিশিং, সিদ্ধান্তহীনতা সত্ত্বেও পর্তুগালকে টেনেছেন একাই। আজকের ম্যাচের আগেই ছুঁয়েছিলেন আলি দাইয়ির রেকর্ড ১০৯ গোলের মাইলফলক, ভক্তরা অধীর আগ্রহে ছিলেন আজকে তার এককভাবে সিংহাসনে বসার।
কিন্তু, বেলজিয়ান ডিফেন্ডারদের কড়া মার্কিং আর দুর্ভেদ্য থিবো কোর্তোয়াতে বারবার আটকে গেছেন সিআর সেভেন। ফলে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বাড়ি ফেরার বিমান ধরতে হয়েছে পর্তুগিজদের। হ্যাজার্ড বলতেই মনে পড়ে চেলসির নীল জার্সি পড়ে বামপ্রান্ত দাপিয়ে বেড়ানো এক ফুটবলারের কথা।
তিনি এডেন হ্যাজার্ড, যার পায়ের জাদুতে মোহাবিষ্ট ছিল পুরো লন্ডনবাসী। কিন্তু রিয়ালে যোগ দেবার পর থেকেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি, ক্রমাগত ইনজুরিতে পরে একরকম ক্যারিয়ারের শেষবেলায় পৌঁছে গেছেন তিনি। অন্যদিকে ক্যারিয়ারে পুরোটা সময় বড় ভাইয়ের ছায়ায় ছিলেন ছোটভাই থোরগান হ্যাজার্ড। তিনিও খেলেন বাঁপ্রান্ত দিয়েই, তবে তার দায়িত্ব আরো বেশি।
আক্রমণে অংশ নেবার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করে দেবার দায়িত্বও তার কাঁধে। গোল করেছিলেন আগের ম্যাচেও কিন্তু তারপরও গোলের জন্য আজকের ম্যাচে তার উপর নজর ছিল না কারোর, লুকাকু-রোনালদোদের প্রতিই দৃষ্টি ছিল সবার।
কিন্তু বড় ভাইকে ছাপিয়ে নিজের প্রতিভার জানান দিতে আজকের ম্যাচকেই বেছে নিলেন তিনি। মুনিয়েরের পাস থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে তার দুর্দান্ত শটটি রুখবার সাধ্য ছিল না পর্তুগালের গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিওর। পুরো ম্যাচে বেলজিয়ামের শট অন টার্গেট একটিই, সেটাকেই তিনি পরিণত করেন গোলে।
শেষ আটে হ্যাজার্ডদের প্রতিপক্ষ দুরন্ত ফর্মে থাকা ইতালি। অন্যদিকে বেলজিয়াম শিবিরে দুশ্চিন্তার ভাঁজ, কেভিন ডি ব্রুইনা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মাঠ ছেড়েছেন ইনজুরিতে পড়ে। তবে থোরগান হ্যাজার্ড যদি নিজের দুরন্ত ফর্ম ধরে রাখেন তবে রবার্তো মার্টিনেজের দুশ্চিন্তা কেটে যাবে দ্রুতই সে ব্যাপারে বোধহয় কেউই দ্বিমত পোষণ করবেন নাহ।