একজন অলরাউন্ডারকে মাপার সবচেয়ে জুতসই মাপকাঠি কি হতে পারে? ব্যাপারটা নির্ধারণ করা সহজ নয়। এখনো অব্দি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাপকাঠি হলো ব্যাটিং ও বোলিং গড়ের আঙ্কিক তফাৎ। কিন্তু সেই মাপকাঠি কি সব উত্তর দেয়? জানি না।
তাই আমি নিজের মতো করে একটা অনুশীলন করার চেষ্টা করেছি অলরাউন্ডারদের নিয়ে। আজ সেই অনুশীলনের চতুর্থ পর্ব। আগেই বলে রাখি, আমি অল-রাউন্ডার নির্বাচন করার সময় শুধু মাত্র তাঁদেরই বেছে নিয়েছি যাঁদের কমপক্ষে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেট রয়েছে। এই অনুযায়ী, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে খেলোয়াড় দাঁড়াচ্ছেন ৩১ জন। এই পরিসংখ্যানের সময়সীমা গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর অবধি।
আজ চতুর্থ পর্বে আমরা দেখে নেবো, টেস্ট প্রতি উইকেটের হিসাবে কে কোথায় দাঁড়িয়ে। গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছি টেস্ট প্রতি রান নিয়ে। এই সূচকটিও একেবারে এক। শুধু এখানে রানের বদলে উইকেট। একটা উদাহরণ দিয়ে নি। ধরে নেওয়া যাক, সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় হলেন কিথ মিলার। মিলার ৫৫ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ১৭০ উইকেট। তাহলে তাঁর টেস্ট প্রতি উইকেটের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩.০৯১ (১৭০/৫৫) । আমরা দেখে নেবো, টেস্ট প্রতি উইকেটের হিসাবে প্রথম ও শেষ পাঁচ জন কারা কারা।
প্রথম পাঁচ জন হলেন –
- রবিচন্দ্রন অশ্বিন – ৫.১৪১
- রিচার্ড হ্যাডলি – ৫.০১২
- শেন ওয়ার্ন – ৪.৮৮৩
- অনিল কুম্বলে – ৪.৬৮৯
- মিশেল জনসন-৪.২৮৮
শেষ পাঁচ জন হলেন –
- কার্ল হুপার – ১.১১৮
- জ্যাক ক্যালিস – ১.৭৫৯
- রবি শাস্ত্রী – ১.৮৮৮
- ট্রেভর বেইলি – ২.১৬৪
- উইলফ্রেড রোডস – ২.১৯০
আবারো গত পর্বের মতো আমি বার করে নিয়েছি মিডিয়ান টেস্ট প্রতি উইকেট। এবারে মিডিয়ান টেস্ট প্রতি উইকেটের সংখ্যা হলো ৩.৩১৩। এবং মিডিয়ান ব্যক্তিটি হলেন কপিল দেব। মিডিয়ানের দুই দিকে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা খেলোয়াড়রা হলেন –
মিডিয়ানের ওপরে
- ক্রিস কেয়ার্নস (৩.৫১৬)
- স্টুয়ার্ড ব্রড (৩.৫৯৪)
- ভিনু মানকর (৩.৬৮২)
- সাকিব আল হাসান (৩.৭৫০)
- ইয়ান বোথাম (৩.৭৫৫)
মিডিয়ানের নিচে
- ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৩.২০৪)
- চামিন্দা ভাস (৩.১৯৮)
- কিথ মিলার (৩.০৯১)
- মঈন আলী (৩.০১৭)
- ট্রেভর গোডার্ড (৩.০০০)
আবারো দেখা যাচ্ছে, স্বীকৃত অলরাউন্ডাররা মূলত মিডিয়ানের কাছাকাছি বিরাজ করছেন। একেবারে উপরে যাঁরা আছেন, হ্যাডলি ও অশ্বিন ছাড়া সকলেই মূলত বোলার। আবার একেবারে নিচে যাঁরা আছেন, বেশিরভাগেরই দলে তাঁদের বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ের গুরুত্বই ছিল বেশি। কিন্তু এই হিসাবে একটা ছোট্ট গোলমাল রয়েছে। উইকেট সংখ্যা শুধু নয়। বোলিংয়ের সময় কত বল অন্তর উইকেট নিচ্ছেন সেটাও দেখা জরুরি। কাজেই স্ট্রাইক রেটের হিসাবে, কে কোথায় আছেন একবার দেখে নি।
প্রথম পাঁচ
- রিচার্ড হ্যাডলি – ৫০.৮
- মিশেল জনসন – ৫১.১২
- রবিচন্দ্রন অশ্বিন – ৫২.৪
- ক্রিস কেয়ার্নস – ৫৩.৬
- ইমরান খান – ৫৩.৭
এঁদের মধ্যে, হ্যাডলি, জনসন ও অশ্বিন টেস্ট প্রতি উইকেটের সংখ্যাতেও প্রথম পাঁচে রয়েছেন। কিন্তু এখানে যাঁর কথা বলা জরুরি তিনি হলেন ক্রিস কেয়ার্নস। তাঁর টেস্ট প্রতি রান ৫৩.৫৪৮, যা কিনা চার আলোচিত অলরাউন্ডার (বোথাম, ইমরান ইত্যাদি) দের চেয়ে বেশি। এই নিরিখে তিনি রয়েছেন ৮ নম্বরে।
এরপর টেস্ট প্রতি উইকেটের নিরিখে তাঁর স্থান ১৫ নম্বরে। তিনি টেস্ট প্রতি ৩.৫১৬ উইকেট নিতেন। যা এমনকি অনেক স্বীকৃত বোলারের চেয়েও বেশি। যেমন চামিন্ডা ভাস। যেটা সবচেয়ে আশ্চর্য্যের, তিনি প্রতি ৫৩.৬ বল অন্তর উইকেট নিতেন। যা কিনা আকরাম, ইমরান দের চেয়েও বেশি।
এই তালিকায় যত অলরাউন্ডার আছেন, তাঁদের মধ্যে যদি দেখা যায় তবে, একইসাথে টেস্ট প্রতি ৫০ রান বা তার ওপর, টেস্ট প্রতি ৩.৫ উইকেট বা তার ওপর এবং স্ট্রাইক রেট ৬০ বা তার নিচে-এই ধরণের মাত্র দুজন খেলোয়াড় রয়েছেন। একজন ইয়ান বোথাম (৫০.৯৮০, ৩.৭৫৫, ৫৬.৯), অপরজন কেয়ার্নস (৫৩.৫৪৮, ৩.৫১৬, ৫৩.৬)। অথচ টেস্ট অলরাউন্ডার হিসাবে কেয়ার্নস কে নিয়ে আর কতই বা আলোচনা হয়? প্রায় হয়ই না।
বোলিং স্ট্রাইক রেটের হিসাবে শেষ পাঁচ জন হলেন –
- কার্ল হুপার – ১২১
- রবি শাস্ত্রী – ১০৪.৩
- ট্রেভর গোডার্ড – ৯৫.৪
- গ্যারি সোবার্স – ৯১.৯
- ভিনু মানকর – ৯০.৬
এদের মধ্যে খুব অদ্ভুত কেস হলেন ট্রেভর গোডার্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার টেস্ট প্রতি ৩ উইকেট নিতেন। এই তালিকায়, বোলিং গড়ের নিরিখে, গোডার্ড রয়েছেন ৮ নম্বরে। মাত্র ২৬.২২ গড়ে তিনি ১২৩ উইকেট নিয়েছেন। এতো অবধি পড়ে অবশ্য আশ্চর্য্যের কিছু নেই।
কারণ, মানকর একইরকম কৃপণ বোলার ছিলেন। এবং স্পিনার হিসাবে লম্বা লম্বা স্পেল করে যেতেন একদিকে। কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপার এটাই, যে গোডার্ড হলেন বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার। পেসার হয়ে এতো বেশি বল করা, এতো কৃপণ ভাবে। সত্যি ভাবা যায় না। টেস্ট প্রতি বল করার সংখ্যা গোডার্ডের ২৮৬.২৪।
এই অলরাউন্ডারদের মধ্যে, তাঁর ওপরে শুধু মানকর, কুম্বলে ও বেনো। এছাড়াও টেস্ট প্রতি রানের হিসাবে, গোডার্ড করেছেন ৬১.৩৬৬ রান। এই নিরিখে তিনি ছয় নম্বরে। অর্থাৎ, বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের জন্যে তিনি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন এবং কি পরিমান পরিশ্রম করতেন।
আজকের পর্বে আলাদা করে ইমরান, হ্যাডলি, কপিল ও বোথাম কে নিয়ে আর কিছু বললাম না। কারণ তাঁদের নিয়ে সব তালিকাগুলোতেই আলোচনা হয়ে গেছে। আজ থাক এই অবধি। পরের পর্বে থাকবে, খেলোয়াড়দের ওয়ার্কলোড নিয়ে বিশ্লেষণ।