বীর-বোলার!

ভারত ক্রিকেটকে ব্যাটার তৈরির একটা খনি বলা হলে খুব যে একটা ভুল বলা হয় তা কিন্তু নয়। সুনীল গাভাস্কার, শচিন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলিদের মতো ব্যাটাররাই এই বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমাণ দেয়। তাই বলে যে ভারত ক্রিকেট ভুগেছে বোলার শূন্যতায় তাও নয়। এক সময় ভারতের দখলে ছিলো টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহের রেকর্ড। সেই রেকর্ডটা দখলে রেখেছিলেন কপিল দেব।

ভারত ক্রিকেটকে ব্যাটার তৈরির একটা খনি বলা হলে খুব যে একটা ভুল বলা হয় তা কিন্তু নয়। সুনীল গাভাস্কার, শচিন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলিদের মতো ব্যাটাররাই এই বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রমাণ দেয়। তাই বলে যে ভারত ক্রিকেট ভুগেছে বোলার শূন্যতায় তাও নয়। এক সময় ভারতের দখলে ছিলো টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহের রেকর্ড। সেই রেকর্ডটা দখলে রেখেছিলেন কপিল দেব।

ভারতের বোলারদের নিয়ে আজকে এক ভিন্নরকমের আলোচনা রয়েছে। পুরোটাই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে। তবে এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে ভারতের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে সর্বাধিক উইকেট নেওয়া বোলাররা। তারপর কোন ফরম্যাটে কোন বোলার ভারতের ইতিহাস সেরা সেই একটা ফলাফল দেওয়ার প্রচেষ্টাও থাকবে।

উইকেট বিচারে সবার উপরে রয়েছেন অনিল কুম্বলে, ৯৫৬ উইকেট নিয়ে। তারপরের অবস্থানে থাকা কপিল দেবের  উইকেট সংখ্যা ৬৮৭টি। কপিল দেবের পরে রয়েছেন হরভজন সিং। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৬৬৫ উইকেট। উইকেট বিচারে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন জহির খান ৫৭৩ উইকেট নিয়ে। পঞ্চম স্থানটা নিজের দখলে রেখেছেন জাভাগাল শ্রীনাথ। তিনি নিয়েছেন ৫৫১ উইকেট। 

এখন অংকের সাগরে ডুব দেই। প্রথমে ওয়ানডেতে কে সেরা তাঁর একটা হিসেব করে নেওয়া যাক। ক্রমান্বয়েই যাই। অনিল কুম্বলের ওয়ানডে ইকোনমি রেট ৪.৩০। এরপর রয়েছেন কপিল দেবের ইকোনমি রেট ৩.৭১। তৃতীয় স্থানে থাকা হরভজন সিংয়ের ইকোনমি রেট ৪.৩০। জহির খান তাঁর ক্যারিয়ারে ৪.৯৩ ইকোনমি রেটে বল করেছেন। তাছাড়া জাগাভালের ইকোনমি রেট ৪.৪৪। এই দিক থেকে কপিল দেব থাকছেন এগিয়ে।

এখন আসি স্ট্রাইকরেটে। এখানটায় এগিয়ে থাকছেন জহির খান। বা-হাতি এই পেসারের বোলিং স্ট্রাইক রেট ৩৫.৮। তারপরের অবস্থানে থাকছেন জাভাগাল শ্রীনাথ। তাঁর স্ট্রাইকরেট ৩৭.৮। ৪৩ স্ট্রাইকরেট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকছেন অনিল কুম্বলে। আর কপিল দেব ও হরভজন সিংয়ের স্ট্রাইকরেট যথাক্রমে ৪৪.২ ও ৪৬.৫। এখানটায় সবার থেকে এগিয়ে জহির খান থাকছেন এগিয়ে।

এবার তবে গড় নিয়ে আলোচনা করা যাক। ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ কার্যকরী একজন বোলার ছিলেন জহির খান। তবে গড়ের হিসেবে এগিয়ে থাকছেন কপিল দেব। তাঁর বোলিং গড়টা ২৭.৪৫। তারপরে যথাক্রমে রয়েছেন জাভাগাল শ্রীনাথ(২৮.০৮), জহির খান(২৯.৪৩), অনিল কুম্বলে(৩০.৮৯) ও হরভজন সিং(৩৩.৪০)। হিসেবটা একটু জটিল হচ্ছে ক্রমশই।

এখন পর্যন্ত দেওয়া পরিসংখ্যানে আসলে উপসংহারে আসা সম্ভব নয়। আচ্ছা, তাহলে আরো একটি ক্যাটাগরির হিসাব করে নেওয়া যাক। নিজেদের পারফরমেন্স দিয়ে খেলোয়াড়রা দলের জয়ে ঠিক কতখানি কাজে এসেছে সেই ইমপ্যাক্ট হিসেবে একটা মানদণ্ড হতে পারে ম্যাচ সেরা হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন।

বোলারদের খেলা ম্যাচের সংখ্যা এবং ম্যাচ সেরা হওয়ার একটা অনুপাত করলে সংখ্যাগুলো দাঁড়ায়, যথাক্রমে, জহির খান(০.০৩০), অনিল কুম্বলে(০.০২২), জাভাগাল শ্রীনাথ (০.০২১), হরভজন সিং(০.০১৩) এবং পরিশেষে কপিল দেব (০.০০৮)

এখন হিসেবটা মোটামুটি পরিষ্কার। দুইটি ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন জহির খান। অন্য দুই ক্ষেত্রে একটিতে তাঁর অবস্থান চতুর্থ ও তৃতীয় অবস্থানে। তবে সেই হিসেবটা করলে বলে দেওয়া সম্ভব ইমপ্যাক্ট বিবেচনায় জহির খান ওয়ানডেতে ভারতের সেরা বোলার। পরিসংখ্যানের উপর আসলে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগটা খুব কম। শুধু সংখ্যার বিচারের আজকের এই সেরা বোলার নির্ধারণ।

রঙিন পোশাকের সেরা বোলারকে বের করা হলো আর সাদা পোশাকে ভারতের সেরা বোলার বের করা হবে না তা কি করে হয় বলুন। তাই এবার এই সংখ্যার খেলায় নির্ধারণ করার প্রচেষ্টা ভারতের টেস্ট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বোলারকে। আগের নিয়ম মেনেই এবারের হিসেবটাও করা হবে। তবে টেস্টে ইকোনমি রেটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। সে বিবেচনায় বাদ যাচ্ছে এই ক্যাটাগরি।

সুতরাং প্রথমেই থাকছে স্ট্রাইকরেট। সেদিক থেকে বাকি সবার চাইতে এগিয়ে রয়েছে ওয়ানডের সেরা বোলার জহির খান। তাঁর স্ট্রাইক রেট ৫৮.৬। তারপরের অবস্থানে ৬৩.৯ এমন একটা সংখ্যা নিয়ে অবস্থান করছেন কপিল দেব। তৃতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে জাভাগাল শ্রীনাথ(৬৪), অনিল কুম্বলে(৬৫.৯) ও হরভজন সিং(৬৮.১)। সোজা হিসেবে জহির খান থাকছেন এগিয়ে। ধৈর্য্য ধরুণ এখনই উপসংহার টেনে দেওয়ার সময় হয়নি।

বোলিং গড় বিবেচনায় আবার এগিয়ে থাকছেন কপিল দেব। গড়টা ২৯.৬৪। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অনিল কুম্বলের সাথে ব্যবধান ০.০১। কুম্বলের গড় ২৯.৬৫। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাভাগাল শ্রীনাথের বোলিং গড়টাও যে খুব বেশি তা নয়। শ্রীনাথের গড় ৩০.৪৯। এরপরে প্রায় একই বোলিং গড় নিয়ে পরপর অবস্থান করছেন জহির খান (৩২.০৬) ও হরভজন সিং(৩২.২২)। বেশ মুশকিল।

আবারও সেই জয়ের দিনে নির্দিষ্ট বোলারের অবদান বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। এদিক থেকে বাকি সবার চাইতে বনেদি ফরম্যাটে এগিয়ে রয়েছেন জাভাগাল শ্রীনাথ ০.১৮৪ তাঁর ম্যাচ সেরা হওয়ার অনুপাত। তাঁর নিকটবর্তী অবস্থানে থাকা অনিল কুম্বলের অনুপাত ০.০৭৫।

তারপর অবস্থান করছেন জহির খান(০.০৫৮)। অন্যদিকে কপিল দেব ও হরভজন সিং যৌথভাবে অবস্থান করছেন চতুর্থ স্থানে ০.০৬১ অনুপাত নিয়ে। সুতরাং আবার সেই ম্যাচ জয়ে অবদান রাখার পরিসংখ্যানটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর সেই পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করেই টেস্টে ভারতের সর্বকালের সেরা বোলার জাভাগাল শ্রীনাথ।

স্ট্রাইকরেট ও গড়ের পরিসংখ্যানের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। আর শেষে ম্যাচ সেরা হওয়ার পরিসংখ্যানে বাকি সবার থেকে অনেকটাই এগিয়ে থেকে তিনি দখল করে নিলেন সেরাদের সেরার অবস্থান।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...