বাংলাদেশ সফরে এসে অবশেষে জয়ের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে তিন উইকেটে হারিয়ে স্বস্তির জয় পেয়েছে সফরকারীরা। সিরিজ প্রথম তিন ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
আগের দুই ম্যাচের থেকে আজ আরও সহজ লক্ষ্য পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সাকিব আল হাসানের বিভীষিকাময় এক ওভারে ১০৫ রানের লক্ষ্যটা ছোট হয়ে আসে আরো। পাঁচ ছক্কার সেই ওভার থেকেই মোমেন্টাম পায় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের মাঝপথে চাপ পড়লেও শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে অজিরা।
আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন আজ যেন আবার সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। আজও বল হাতে আগুনে ছিলেন এই পেসার, সাথে যোগ দিয়েছিলেন শেখ মেহেদী হাসান। তবে আজ আর দলকে জেতাতে পারেননি তারা। দারুণ বোলিংয়ে দুজনই শিকার করেছেন দুটি করে উইকেট।
তবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। ছোট পুঁজি নিয়ে যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল তেমনই পেয়েছিল বাংলাদেশ। শেখ মেহেদী হাসানের একটু জোড়ের উপর করা ডেলিভারি রাউন্ড দ্য উইকেটে খেলতে এসে বোল্ড হয়ে যান ম্যাথু ওয়েড। ৩ বলে ২ রান করে ওয়েডের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান।
উইকেটে এসে ক্রিশ্চিয়ান যেটা করেন সেটার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। এই উইকেটে যেখানে রান বের করাই কষ্টকর, বাংলাদেশের স্পিনের সামনে প্রতি ম্যাচেই ভুগছে সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। সেখানে সাকিব আল হাসানের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে পাঁচটি ছয় মেরে বসেন ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। ওভারের প্রথম তিন বলে টানা তিন ছয় মারার পর তিন নম্বর বল মিস করলেও পরের দুই বলে আবারো ছয় মারেন।
সাকিবের ওভার থেকে আসে ৩০ রান। সেই ওভারেই মোমেন্টাম পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে সেটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি তারা। পরের ওভারে নাসুম আহমেদের একটু ফ্লাইটের উপর করা টার্ন নেওয়া বলে লাইন মিস করে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন বেন ম্যাকডারমট।
৫ রান করে ম্যাকডারমট ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ক্রিশ্চিয়ানকে ফিরিয়ে দেন আগের ম্যাচে দারুণ বল করা মুস্তাফিজুর রহমান। ১৫ বলে ৩৯ রান করে ফিরে যান ক্রিশ্চিয়ান। এরপর ৯ বলে ৪ রান করা মোজেস হেনরিকস রান আউটের ফাঁড়ের পড়ার পর অ্যালেক্স ক্যারিকে মুস্তাফিজ ফিরিয়ে দিলে ৬৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
এরপর সিরিজের আগের তিন ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করা মিশেল মার্শ বিদায় নিলে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। মেহেদীর বলে বোল্ড হয়ে ২৫ বলে ১১ রান করে ফিরে যান মার্শ। মার্শ যখন ফিরে যান তখন অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ৬৫ বলে ৩৯ রান। ৩৪ রানের দারুণ এক জুটিতে দলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে দেন অ্যাশটন অ্যাগার ও অ্যাশটন টার্নার।
২৭ বলে ২৭ রান করে অ্যাগার ফিরে গেলেও ২০ বলে ৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন টার্নার। বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর দুটি করে উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদী হাসান। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন নাসুম আহমেদ।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত সেটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। জশ হ্যাজেলউডকে নাঈম শেখ টানা দুটি বাউন্ডারি মারার পরের ওভারে অ্যাশটন অ্যাগারকে ছয় মারেন সৌম্য। উদ্বোধনী জুটিতে দুই ওপেনার তুলে ফেলেন ২৪ রান। তবে এই স্বস্তি থাকেনি বেশিক্ষণ। আরো একবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান সৌম্য।
হ্যাজেলউডের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল পুল শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে এই ওপেনার ফিরে যান ১০ বলে ৮ রান করে। সৌম্যর বিদায়ের পর উইকেটে এসে রানের জন্য সংগ্রাম করতে থাকেন সাকিব আল হাসান। ছন্দই খুঁজে পাচ্ছিলেন না এই অলরাউন্ডার। হ্যাজেলউডকে একটি চার মেরে রানে ফেরার চেষ্টা করলেও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।
হ্যাজেলউডকে রাউন্ড দা উইকেটে খেলতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ২৬ বলে মাত্র ১৫ রান করে ফিরে যান সাকিব। এরপর ৪৮ রানে দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংসে জোড়া আঘাত হানেন মিশেল সোয়েপসন। পরপর দুই বলে রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পরে
ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও নুরুল হাসান সোহান।
টানা দুই উইকেট হারানোর পর ৩৬ বলে ২৮ রান করা নাঈম শেখ ফিরে গেলে ৬৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর আগের তিন ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করা আফিফ হোসেন ব্যাটে রানের গতি ফিরলেও তিনি উইকেটে থাকতে পারেননি বেশিক্ষণ। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ১৭ বলে ২১ রান করে ফিরে যান আফিফ।
৭৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর শেষের দিকে শেখ মেহেদী হাসানের ১৬ বলে ২৩ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১০৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পক্ষে তিনটি উইকেট শিকার করেন মিশেল সোয়েপসন ও অ্যান্ড্রু টাই। দুটি উইকেট পেয়েছেন জশ হ্যাজেলউড।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১০৪/৯ (ওভার: ২০; নাঈম- ২৮, সৌম্য- ৮, সাকিব- ১৫, মাহমুদউল্লাহ- ০, সোহান- ০, আফিফ- ২১, শামিম- ৩,মেহেদী- ২৩) (অ্যাগার- ৪-০-২২-১, সোয়েপসন- ৪-০-১৩-৩, টাই- ৩-০-১৮-৩)
অস্ট্রেলিয়া: ১০৫/৭ (ওভার: ১৯; ওয়েড- ২, ম্যাকডারমট- ৫, ক্রিশ্চিয়ান- ৩৯, মার্শ- ১১, অ্যাগার- ২৭, টার্নার- ৯*) (মেহেদী- ৪-০-১৭-২, মুস্তাফিজ- ৪-১-৯-২, শরিফুল- ২-০-৮-১)
ফলাফল: অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে।