হঠাৎ হারানো অতিথি পাখি

ভারতের ক্রিকেট আকাশে এসেছিলেন এক অতিথি পাখির মত করে।

১৯৯৭ সালে মাত্র এক বছরে বল হাতে নিয়েছিলেন ৫০টি আন্তর্জাতিক উইকেট। সে বছর ভারতীয় পেসারদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তবে তিনি যে শুধুই অতিথি, ঘর বাঁধতে তিনি আসেননি। তাই ক্রিকেটের আকাশে খুব বেশি ওড়া হয়নি তার। হঠাৎই হারিয়ে গেছেন সেই অতিথি পাখি আবে কুরুভিল্লা।

আবে কুরুভিল্লার ক্রিকেটে আসাটাও ছিল এক বিস্ময়কর ঘটনা। ছয় ফুট ছয় ইঞ্চির দীর্ঘদেহী কুরুভিল্লা হয়তো কখনোই স্বপ্ন দেখেননি তিনি ক্রিকেটার হবেন। তবুও পেস বোলারদের জন্য যেই আদর্শ দৈহিক গঠন তাঁর ছিল সেটিই হয়তো চাইতো কুরুভিল্লা বল হাতে ছুটে বেড়াক।

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের সাথে ছিলেন। তবে কখনো পুরো মনোযোগ দিয়ে কাজটা করেননি। বাইশ বছর বয়সে  বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ক্লাস শেষ করে একদিন সিনেমা দেখতে যাওয়ার সময় দেখলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পেস বোলারদের ট্রায়াল হচ্ছে। কুরুভিল্লাও শখ করে কয়েকটা বল ছুঁড়লেন। এরপর তিনি আবার চলে গেলেন সিনেমা দেখবেন বলে।

তবে আবে কুরুভিল্লার জীবনটাই যে এক সিনেমার চিত্রনাট্য। তাই সিনেমা দেখার বদলে সিনেমার মত করেই চলে এলেন তিনি ক্রিকেটে। সেই বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলাটা নিয়ম করে শুরু করেন। মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই সেই সময় বোম্বের অধিনায়ক সঞ্জয় মাঞ্জরেকার তাঁকে নিয়ে গেলেন বোম্বে দলের ট্রায়ালের জন্য।

নেটে সেদিন দীলিপ ভেঙসরকার, শচীন টেন্ডুলকারদের মত ব্যাটসম্যানদের বল করেছিলেন। সবাই সেদিন একবাক্যে শিকার করেছিলেন, এই ছেলেকে তাঁদের দলে চাই। আবে কুরুভিল্লার ক্রিকেট যাত্রা আর কে আটকায়। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল ম্যাচে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন তিনি।

পুরো ব্যাটিং উইকেটেও সেই ম্যাচে ১২৮ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। পরের বছর ২২.৭০ গড়ে নিয়েছিলেন মোট ৫১ টি উইকেট। তখনই ভাবা হচ্ছিল সে বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে ডাক পাবেন এই পেসার। তবে সেবার আর সুযোগ হয়নি তাঁর।

কুরুভিল্লার সুযোগ হয়েছিল আরো ছয় বছর পরে। জগাভাল শ্রীনাথের ইনজুরির কারণে ১৯৯৭ সালে ভারত দলে প্রথম ডাক পান তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ৮২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। এর মধ্যে ছিল লারার উইকেটও। দ্বিতীয় ইনিংসেও শিব নারায়ন চন্দরপালের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এই পেসার।

হঠাত করেই ভারতের ক্রিকেটে এক তারকা হয়ে গেলেন এই পেসার। পুরো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেই দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। এমনকি ওই বছর ভারতের ক্রিকেটার অব দ্য ইয়্যারও হয়েছিলেন তিনি। সেই বছর ভারতের হয়ে টানা ম্যাচ খেলতে থাকেন এই পেসার। অল্প সময়ের মধ্যেই ভেঙ্কটেশ প্রসাদের সাথে ভারতের মূল পেসার হয়ে ওঠেন তিনি।

সেই বছর আবে কুরিভিল্লার বোলিং পরিসংখ্যান একটু তুলে ধরা যাক। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেট মিলিয়ে নিয়েছিলেন মোট ৫০ টি উইকেট। সেই বছর তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছিলেন শুধু অনিল কুম্বলে। তিনি নিয়েছিলেন ৬১ উইকেট। পেসারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সেরা পারফর্মার।

তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, এর মধ্যেই ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে এলেন শ্রীনাথ। আর তখনই ভারতীয় দলে নিজের জায়গা হারিয়ে ফেললেন এই পেসার। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত নিজেকে প্রমান করার চেষ্টা করে গিয়েছেন তবে তাতে বিশেষ কোন লাভ হয়নি। সেই ১৯৯৭ সালই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কুরুভিল্লার প্রথম ও শেষ বছর।

হ্যাঁ সত্যিই, এরপর আর কখনো ভারতীয় দলে জায়গা হয়নি তাঁর। মাত্র এক বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয় এই পেসারের। তবে সেই বছর ভারতের হয়ে খেলেছিলেন মোট ১০টি টেস্ট। সেখানে তাঁর ঝুলিতে ছিল ২৫ উইকেট। এছাড়া ২৫ ওয়ানডে ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট। মাত্র এক বছরে নেয়া এই ৫০ টি উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয় এই পেসারকে।

তারপর লম্বা সময় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পর বিদায় জানিয়েছেন এই খেলাটাকে। অবশ্য এরপর কোচিং কেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ২০১১-১২ সালের ভারতে জুনিয়র সিলেকশন কমিটির প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পান তিনি। পরের বছরই মুম্বাইয়ের নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ পান এই পেসার।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link