আগের ম্যাচটাই বিভীষিকাময় ছিল সাকিব আল হাসানের। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাটে বলে ব্যর্থ ছিলেন এই অলরাউন্ডার। তবে নিজের চেনা রূপে ফিরে আসতে বেশি সময় নিলেন না সাকিব। সিরিজের শেষ ম্যাচেই বল হাতে তান্ডব চালালেন সাকিব। সাথে যোগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
দু’জনের বোলিং তোপেই সিরিজের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১২২ রানের জবাবে মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। এটা টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার নজীর।
ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে ৩.৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে চার উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। এছাড়া সাইফউদ্দিন পেয়েছেন তিন উইকেট। আর শুরুতে দুই উইকেট শিকার করে পথ দেখিয়ে ছিলেন নাসুম আহমেদ।
সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল স্বাগতিকরা। চতুর্থ ম্যাচ হারার কারণে ৪-১ ব্যাবধানে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোন ফরম্যাটে এটিই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।
১২৩ রান তাড়া করতে নেমে আজও শুরুটা ভালো করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদের খাটো লেন্থের বল পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান আগের ম্যাচে ঝড় তোলা ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান। আজ ওপেনিংয়ে নেমে এই অলরাউন্ডার করেন ৩ বলে ৩ রান। এক ওভার পরেই এই স্পিনারকে স্লগ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মিশেল মার্শ।
মার্শের ব্যাট থেকে আসে ৯ বলে ৪ রান। ১৭ রানে দুই উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে তৃতীয় আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। এই স্পিনারকে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান বেন ম্যাকডারমট। ম্যাকডারমটের ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ১৭ রান। এরপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের তান্ডবে অ্যালেক্স ক্যারি, মোজেস হেনরিকস ও অ্যাশটন অ্যাগার ফিরে গেলে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া।
মাঝে অ্যাশটন অ্যাগারকে ফিরিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শততম শিকার ধরেন সাকিব। এরপর সাকিবের আবার জোড়া আঘাতে ১৩.৪ ওভারে ৬২ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সাকিব আল হাসান চারটি ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তিনটি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টসে জিতে দুই পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। শামিম হোসেন পাটোয়ারি ও শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে একাদশে জায়গা ফেরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। সিরিজে প্রথম বারের মত শুধু একাদশেই নয়, ওপেনিং জুটিতেও পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে নাঈম শেখের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠানো হয় শেখ মেহেদী হাসানকে।
ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন এনে আজ সফলও হয় বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে দুই ওপেনার ৪.৩ ওভারে তুলে ফেলেন ৪৩ রান। কিন্তু ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বেশি বড় করতে পারেননি কেউই। অ্যাশটন টার্নারের শর্ট লেংথ বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিং মিস করে টার্নারের হাতেই ক্যাচ দিয়ে মেহেদী ফিরে যাওয়ার একটু পরই ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ানের শর্ট বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বেকওয়ার্ড পয়েন্ট ক্যাচ দেন নাঈম।
১২ বলে ১৩ রান করেন মেহেদী আর নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ২৩ রান। নাঈমের ইনিংসে একটি চারের সাথে ছিল একটি ছয়। ৫৭ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসান ফিরে গেলে অনেকটাই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। উইকেটে অনেকক্ষণ কাটিয়েও ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না সাকিব। রানের জন্য সংগ্রাম করতে থাকা সাকিব অ্যাডাম জাম্পার দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন।
এর আগে কখনো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হননি সাকিব। এই অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ২০ বলে মাত্র ১১ রান। এরপর ৬০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সৌম্য সরকার। এই জুটিতে থমকে যাওয়া রানে গতি এসেছিল। তবে সেই স্বস্তি থাকেনি বেশিক্ষণ। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ইনিংস বেশি খুব বেশি দূর টানতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য।
অ্যাশটন অ্যাগারের শর্ট বল লেগে ঘুরাতে গিয়ে টাইমিং মিস করে অ্যাগারের হাতেই ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। পরের ওভারে দারুণ এক ছয় মারার পরের বলেই আবার ছয়ের চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন সৌম্য। সৌম্য করেন ১৮ বলে ১৬ রান ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ১৯ রান। ৯৬ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর শেষের ঝড়ও তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।
শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করতে পারে মাত্র ২০ রান। আফিফ হোসেন করেন ১১ বলে ১০ রান ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত করেন ৮ বলে ৪ রান। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ করে ১২২ রান।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ভিতর দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন নাথান এলিস ও ড্যানিয়েল ক্রিশ্চিয়ান। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন অ্যাশটন টার্নার, অ্যাশটন অ্যাগার ও অ্যাডাম জাম্পা।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ১৩০/৬ (ওভার: ২০; নাঈম- ২৩, মেহেদী- ১৩, সাকিব- ১১, মাহমুদউল্লাহ- ১৯, সৌম্য- ১৬, সোহান- ৮, আফিফ-১০) (অ্যাগার- ৪-০-২৮-১, জাম্পা- ৪-০-২৪-১, ক্রিশ্চিয়ান- ৪-০-১৭-২, এলিস- ৪-০-১৬-২)
অস্ট্রেলিয়া: ৬২/১০ (ওভার: ১৩.৪; ওয়েড- ২২, মার্শ- ৪, ম্যাকডারমট- ১৭, ক্যারি- ৩, অ্যাগার- ২, টার্নার- ১) (সাকিব- ৩.৪-১-৯-৪, সাইফউদ্দিন- ৩-০-১২-৩)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী।
সিরিজ: বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী।