জিম্বাবুয়ের পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই সিরিজে জয়। মিরপুরের উইকেট নিয়ে সমালোচনা হলেও দিনশেষে জয়ের খাতায় যোগ হয়েছে দুইটি সিরিজ। আপাতত বিশ্বকাপের আগে পিচের ব্যাপারটা আলোচনার বাইরে থাকুক; অবশ্য এ নিয়ে লিখালেখি কিংবা বিশ্লেষণও কম হয়নি। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়কেও কোনো ভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন অনেক ভক্ত সমর্থকরা।
দলের সাথে সাথে সফলতার কৃতিত্ব পেয়েছেন হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। সবশেষ ১২ টি-টোয়েন্টিতে ৯ জয়! শুধু পরিসংখ্যান বিবেচনায় রাসেল ডমিঙ্গো কোচ হিসেবে এখনো পর্যন্ত বেশ সফল বলা চলে। আর সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর সফলতা ও বিশ্বকাপ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় ক্রিকেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইএসক্রিকইনফোতে।
পর পর দুটি সিরিজ জয়। আর সেটি দলের মধ্যে যেমন পজিটিভ ইমপ্যাক্ট ফেলবে তেমনি ওয়ার্ল্ডকাপেও এটি কাজে দিবে। দলের মধ্যে উন্নতিও বেশ চোখে লেগেছে। এমন কথায় ডোমিঙ্গো বলেন, ‘এই দুই সিরিজে জয়-পরাজয় দুটোই নেমে এসেছিলো বেশ ছোট মার্জিনে, আমরা বিগ মোমেন্ট গুলোই জিতেছি। বোলিংয়ে যখন চাপের মুখে ছিলাম আমরা নার্ভ ধরে রেখেছিলাম। আবার যখন চেজ করতে নেমে ব্যাটিংয়ে চাপের মুখে ছিলাম তখনো আমরা ব্যাট হাতে নার্ভ ঠিক রেখেছি। আমি মনে করি আমরা চাপের মুহূর্তগুলোতে দুই সিরিজেই বেশ ভালো খেলেছি। এটাই আমার চোখে লেগেছে। টি-টোয়েন্টিতে এই দুই দলকে এর আগে আমরা কখনো হারাতে পারিনি। আমি খুব খুশি যে ছেলেরা সেখানে এতো ধৈর্য্য দেখিয়েছে।’
দলে পরিবর্তন না করার মানসিকতা নিয়ে বাংলাদেশের এই হেড কোচ বলেন, ‘আমি সেরকম কেউ নই যে বাদ দেওয়া কিংবা দলে পরিবর্তন করতে খুব বেশি পছন্দ করি, বিশেষ করে কোনো ম্যাচ হারের পর। আমি খুব বেশি পরিবর্তন আনতে চাই না। আমি প্রত্যেককে তাদের ভূমিকায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে চাই। আর এই জিনিসটাই আমি সবসময় করতে চাই। হ্যাঁ, কখনো কখনো আপনাকে কন্ডিশন ও ট্যাকটিস বিবেচনায় দলে পরিবর্তন আনতে হয়। তবে, যখন কন্ডিশন একই থাকবে তখন প্রথম ম্যাচের একাদশই পরের দুই ম্যাচের জন্য থাকবে। আমি শুরুর একাদশ (প্রথম ম্যাচ) থেকে সম্ভাব্য খুব কমই পরিবর্তন করতে চাই।’
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশংসা করেন ডমিঙ্গো। দলের খেলোয়াড়েরা তাকে সেরাটা উপহার দিচ্ছে বলেও জানান ডোমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘রিয়াদ অধিনায়ক হিসেবে অসাধারণ। দেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করতে সে প্যাশন এবং ভালো করার মানসিকতা দুটোই দেখিয়েছে। সে অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। দলের খেলোয়াড়েরা তাঁর জন্য সেরাটা দিচ্ছে, এটা যেকোনো অধিনায়কের জন্য বেশ বড় ব্যাপার।’
মিরপুরের স্লো উইকেট নিয়ে ডমিঙ্গো জানান ওয়ার্ল্ডকাপেও প্রায় এই ধরনের উইকেট হবার সম্ভাবনা আছে। একই সাথে সাকিব-মুশফিকদের উপর তাঁর ভরসা আছে যে তারা বিশ্বমঞ্চে সেরাটা উপহার দিবেন।
ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমার মনে হয় বিশ্বকাপে উইকেট কিছুটা মন্থর হবে। আমরা মিরপুরে যেমন উইকেটে খেলেছি এমন কাছাকাছি ধরনের উইকেটেই খেলা হবে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমরা অন্তত একটা কঠিন কন্ডিশনেতো খেলেছি। মুশফিক এবং সাকিব দুইজনই অভিজ্ঞ এবং ম্যাচ উইনারও। মুশফিক ধরে রেখে খেলতে পারে, অপরদিকে সাকিব পাওয়ারপ্লেতেও পজিটিভ ব্যাট করতে পারে আবার মিডল ওভারেও ভালো খেলতে পারে। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমি আশা করি বিশ্বকাপে তাঁরা বড় ইমপ্যাক্ট ফেলবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ দুর্দান্ত ফর্মে আছে মুস্তাফিজুর রহমান। তাঁর কাছ থেকে তরুন ক্রিকেটাররাও শিক্ষা নিচ্ছেন বলে জানান ডোমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘ও দুর্দান্ত একজন বোলার, যার কবজি বেশ ফ্লেক্সিবল। সে জানে তাঁকে কোথায় বল করতে হবে এবং কখন তাঁকে ভিন্ন কিছু করতে হবে। তাঁর অভিজ্ঞতা দলের তরুণ ছেলেদেরও বেশ সাহায্য করছে।’
মিরপুরের উইকেটের সাথে বিশ্বকাপে উইকেট প্রায় মিল থাকবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের হেড কোচ। সেই সাথে স্পিনাররা সেখানে ভূমিকা পালন করবেন বলেও তিনি জানান। যার কারণে বেশিরভাগ দলই তাদের স্কোয়াডে বেশ কিছু স্পিনার রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় সেখানকার পূর্বের স্কোরগুলো দেখেই বেশ কিছু স্কোয়াডেই দলগুলো স্পিনার বেশি নিয়েছে। আমার মনে উইকেট কিছুটা স্লো থাকবে বিশ্বকাপে, কারণ এর আগে আইপিএলের ম্যাচও হবে। আমরা হয়তো প্রায় কাছাকাছি ধরনের উইকেটেই খেলবো যেটা সম্প্রতি আমরা খেলছি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। আমি মনে করি অন্তত বিশ্বকাপের আগে আমরা কঠিন কন্ডিশনে প্রস্তুতি নিয়েছি।’
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটসম্যানদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে ডমিঙ্গো জানান ভালো উইকেট পেলে তারা আবার সেরাটা দিতে পারবে। তিনি মনে করেন বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যাটসম্যানরা সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে ভীত হবেন না।
ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমি মনে করি একটা সময় পর ব্যাটসম্যানরা ভালো রান করতে পারবে। যারা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রান করতে স্ট্রাগল করেছে। আমি মনে করিনা ব্যাটসম্যানরা কোনো ধরনের ভয় নিয়ে বিশ্বকাপে যাবে। আমি মনে করি অন্যান্য দিকের চেয়ে খারাপ পিচ থেকে খেলে ভালো পিচে খেলতে যাওয়াটা সবসময়ই বেশ সহজ হয়।’
‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ কঠিন সময় গিয়েছে গত কয়েক সপ্তাহ। তবে, এখান থেকে আমরা বেশ কিছু ইতিবাচক ব্যাপার পেয়েছি। আমরা যখন ওয়ার্ল্ডকাপে এর চেয়ে ভালো উইকেট পাবো আশা করি আমাদের খেলোয়াড়দের সেরাটা দিতে বেশি সময় লাগবে না।’, যোগ করেন তিনি।
দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মধ্যে বোঝাপড়া, একজন আরেকজনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব রাখা এগুলো নিয়ে ডোমিঙ্গো জানান, ‘কোচ হিসেবে আপনি সবসময়ই চাইবেন টিমটা একসাথে থাকুক। আপনি চাইবেন আপনার দলে কারো প্রতি কারো ইগো না থাকুক। অবশ্যই আপনি চাইবেন দল জিতুক কিন্তু সবার সাথে সবার বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব থাকুক সেটাও প্রয়োজন। যখন আপনি জানেন যে প্রত্যেকেই একজন আরেকজনের জন্য খেলছে; প্রত্যেক কোচ এটাই চায়। দলের সবাই সবার জন্য খেলুক এটাই কোচরা চায়। যখন দলের মধ্যে এই কালচারটা আপনি তৈরি করতে পারবেন, তখনি আপনি কোচ হিসেবে সফল হবেন।’