সুযোগ পেয়েও প্রতিবাদী অবসর মানসের!

বাবা দেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী প্রবাল চৌধুরী। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামের নাম সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ছেলে বাবার মতোই কণ্ঠশিল্পী হবে এমনটা আশা করাই ছিল স্বাভাবিক। সবার প্রত্যাশার সাথে সঙ্গতি রেখে নিজের ক্যারিয়ারটাকে সাজিয়েছেন মানস চৌধুরী।

বাবা দেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী প্রবাল চৌধুরী। বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামের নাম সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ছেলে বাবার মতোই কণ্ঠশিল্পী হবে এমনটা আশা করাই ছিল স্বাভাবিক। সবার প্রত্যাশার সাথে সঙ্গতি রেখে নিজের ক্যারিয়ারটাকে সাজিয়েছেন মানস চৌধুরী।

এক নামের ভেতরে তার একাধিক পরিচয়। চিকিৎসক, কন্ঠশিল্পী ও টেবিল টেনিস খেলোয়াড়, এই তিন পরিচয়ে সারাদেশের মানুষ মানসকে চিনে থাকেন। রক্তে তার গান, নেশায় টিটি খেলোয়াড় আর পেশা হিসেবে চিকিৎসাকে পাথে করে বছরের পর বছর পার করে দিয়েছেন। পারতপক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোন আসরই মিস করতে চান না। বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন আয়োজিত ফেডারেশন কাপ র‌্যাংকিং টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতার পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের এই প্রতিযোগী।

তাতেই খুজে গিয়েছিল এশিয়ান টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার সুযোগ। কিন্তু এটিকে তিনি সাদরে গ্রহন করেননি। প্রতিবাদ জানিয়ে লাল সবুজ জার্সিতে না খেলার কথা পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। একজন সোজা সাপ্টা কথা বলার মতো মানুষের আরেকটি প্রতিবাদ দেখা গেল।

কিন্তু কেন মানস চৌধুরী এমনটি করলেন যা নিয়ে কমবেশি আলোচনাই হচ্ছে এখন। সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রথমবার দল গড়েই ফেডারেশন কাপে সেরা সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ টিটি দল। সেই সাফল্যে বড় একটি নাম এই মানসের। ফেডারেশন কাপ র‌্যাংকিং টেবিল টেনিসের এককের শিরোপা জেতেন মানস চৌধুরী ও সাদিয়া রহমান মৌ। দুজনই আবার বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিযোগী।

এর আগে দলগত পুরুষ ও নারী বিভাগের শিরোপাও জিতেছিল দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসেবে ট্রিপল শিরোপা জেতা হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। পুরুষ এককের ফাইনালে পুলিশের মানস চৌধুরী ৪-৩ সেটে ওয়ারির রামহীম বমকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখান। মানসের বয়স এরই মধ্যে ৪৫ পেরিয়ে গেছে।

পেশায় একজন চিকিৎসক হয়েও টেবিল টেনিসের র‌্যাকেট হাতে নিয়মিতই টেবিলে ঝড় তুলে থাকেন। এই বয়সে তার খেলার কথা না থাকলেও নতুনরা সেভাবে পেরে ওঠছেন না বলেই কোর্টে নামার সুযোগটা পান সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেও সুনাম কুড়ানো মানস। মূলত জাতীয় দল গঠনের প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ না হওয়ার প্রতিবাদে জাতীয় দলে না খেলার ঘোষনা দিয়েছেন মানস।

নিজের প্রতিবাদ জানানোর বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানস বলেন, ‘আমি আর কখনোই জাতীয় দলে খেলব না, এটা লিখে দিতে পারেন। কারণ জাতীয় দল গঠন প্রক্রিয়ায় ফেডারেশনের যারা থাকেন, তারা স্বজনপ্রীতি করে থাকেন আর এখনো করে যাচ্ছেন।’

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর কাতারের রাজধানী দোহায় কোর্টে গড়াবে এশিয়ান টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে তিনজন করে পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়কে সব ধরনের সুবিধা দেবেন আয়োজকরা। কিন্তু র‌্যাঙ্কিংয়ে ২ নম্বরে থাকলেও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশে না যাবার ঘোষনা দিয়েছেন জাতীয় দলের খেলোয়াড় মানস। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি তিনি দোহা না যাওয়ার বিষয়টি ই-মেল বার্তায় জানিয়ে দিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহাঙ্গীর আলমকে।

এশিয়া সেরা আসরে পৃষ্ঠপোষকতা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে ফেডারেশন কাপ রানারআপ রামহীম বমকে। তাতে ছয়জানের দল একজন বেড়ে হয়ে যাচ্ছে সাতজনের। এটাকেই স্বজনপ্রীতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে মানস বলেছেন, ‘দুই বছর আগের পরিসংখ্যান ঘেটে দেখেন, ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ায়ও ছয়জনের দল ছিল। সেবারও বাড়তি একজন খেলোয়াড় যাওয়ার জন্য আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত আর নেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আনসারের কোচ মোহাম্মদ আলী ও পুলিশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আমি জানিয়েছি।’

কিন্তু, দুই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কি প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে সেটি জানা যায়নি। কিন্তু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহাঙ্গীর আলম মানসের কথা এড়িয়ে বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, মানসের শ্বশুর অসুস্থ। এছাড়া সে চট্টগ্রামের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসকও। তাই ঢাকা এসে তিনি সময় দিতে পারেন না বলে মনে হয়েছে আমার। সে কারণে আমি বলছি, জাতীয় দলের ক্যাম্পে অংশ নেওয়া ছাড়া তিনি যত বড় খেলোয়াড়ই হোন না কেন, জাতীয় দলে খেলার জন্য বিবেচিত হবেন না। রামহীমকে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে নিয়ে যাচ্ছি, অন্য কিছু নয়। কারণ মানুষের অসুস্থতার কথাতো বলা যায় না। তাই আমরা পৃষ্ঠপোষকতা জোগাড় করেই রামহীমকে কাতার নিয়ে যাচ্ছি।’

এশিয়ার সেরা আসরে র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী যাওয়ার কথা মুহতাসিন আহমেদ হৃদয়, মানস চৌধুরী ও সাব্বির হোসেন এবং সাদিয়া রহমান মৌ, সোনম সুলতানা সোমা ও নওরিন সুলতানা মাহি’র। মানস না গেলে পরিবর্তে র‌্যাঙ্কিংয়ের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে মোফরাদুল সজীবের যাবার কথা।

ফেডারেশনের কাছে লেখা চিঠি মানস যদিও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন, তবে জাতীয় দলে আর না খেলার ঘোষণা দেন মানস। ক্যারিয়ারের শেষবেলায় এসে ফেডারেশনের সাথে সম্পর্ক তিক্ত না করতেই সিদ্বান্ত নিয়েছেন। তবে যে কথাগুলো একেবারে না বলার মতো সেটি তিনি বলছেন না। যেহেতু এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে নিয়ম মেনে দল গঠন করা হয়নি।

তাই, মানস সুযোগ পেয়েও দোহায় যাবেন না। অথচ দীর্ঘদির পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর বেশ খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু তার এই আনন্দ মিলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। নিজেকে একজন তরুনের চেয়ে বেশি ফিট রেখে দেশকে আরও কিছু দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফেডারেশনের স্বজনপ্রীতি তাকে আর সেই সুযোগ দিলনা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...