‘গাই দ্য গোরিলা’ এবং একটি টেস্ট

ক্রিকেট ইতিহাসে ‘guy the gorilla’ নামে পরিচিত ছিলেন ইয়ান বোথাম। এ নাম কেন তাঁর ওপর আরোপিত হয়েছিল তা অন্য প্রসঙ্গ। তবে তাঁর সম্বন্ধে বলতে গেলে বহু কথা এসে পড়ে।

ইতিহাসের সেরা মানের অলরাউন্ডারদের নাম আসলে তার মাঝে যিনি ঝলমল করেন তিনি ইয়ান বোথাম। ১০৩ কেজি ওজনের এই দৈত্যাকার ক্রিকেটার ব্যাটিং , বোলিং এবং ফিল্ডিং ( এক সর্বোত্তম স্লিপ ফিল্ডার) সম্রাটতুল্য রূপে খেলে গিয়েছেন দুই দশক।

সাতের দশকটা ছিল বোলার বোথামের সেরা সময়। এই সময় তাঁর স্ট্রাইক রেট ৪৬। আর আটের দশকটা ব্যাটসম্যান বোথামের। ১০ টা শতরান আসে এ দশকে। ব্যাটিং এ ধারাবাহিকতা আসায় আটের দশকের প্রথম পর্বে বথাম ব্যাটে বলে কিছু অলৌকিক প্রদর্শন রেখে গিয়েছেন। তেমন একটি আজকের আলোচ্য।

১৯৮০ সালে বোর্ড অব  কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) আয়োজন করে জুবিলি টেস্টের। একটি মাত্র টেস্ট। ভারতের অধিনায়ক ছিলেন গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ আর ইংল্যাণ্ডের মাইক ব্রিয়ারলি। খেলা হয় বোম্বাইতে।

ভারত টসে জিতে ব্যাট করতে নামে। ওপেনার গাভাস্কারের সঙ্গী হন কর্ণাটকের নিয়মিত ওপেনার রজার বিনি। কিন্তু ‘গায় দ্য গরিলা’ সেদিন সর্বোত্তম ছন্দে ছিলেন। চার ব্যাটসম্যান সহ ছটি উইকেট তুলে নিলেন স্যুইং আর সীম মুভমেন্ট এর অপরূপ প্রদর্শন তুলে ধরে। মাত্র ২৪২ রানে অলআউট হয়ে গেলো ভারত। সর্বোচ্চ রান সুনীল গাভাস্কারের। মাত্র ৪৯। বোথামের বোলিং গড় দাঁড়ালো ২২.৫-৭-৫৮-৬ ।

পেস সহায়ক পিচে ব্যাট করতে নেমে একই রকম বিপদে পড়লো ইংল্যান্ড। গুচ, বয়কট, গাওয়ার, লারকিন্স, ব্রিয়ারলি কেউ দাঁড়াতেই পারলেন না কপিল, ঘাউড়ির বোলিং এর সামনে। কিন্তু বথাম হলেন বথাম। তিনি অতিমানবিক। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কীপার টেলরকে সঙ্গী নিয়ে ১৪৪ বলে ১১৪ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন।

১৭ টা বাউন্ডারি ছিল সে ইনিংসে। ইংল্যাণ্ড ইনিংস থামলো ২৯৬ রানে। পাঁচটা উইকেট বাঁ হাতি পেসার ঘাউড়ির আর তিনটে শিকার কপিলের। ইংল্যান্ডের অর্ধেক রান বোথামের। পরের সর্বোচ্চ হলো বব টেলরের ৪৩। এরপর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। মাত্র ৫৬ রানে এগোলেও এই পিচে তা অনেকটা রানের ব্যবধান।

আবার ব্যাট করতে নেমে বিপাকে পড়লো ভারত। আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন বোথাম। স্যুইং আর সিম মুভমেন্টে বিপর্যস্ত করে দিলেন ভারতের ব্যাটসম্যানদের।

১৪৯ রানে গুঁড়িয়ে গেলো গাভাস্কার, বিনি, বিশ্বনাথ,ভেঙসরকার, যশপাল, পাতিল, কপিল, কিরমানি-সহ পুরো ব্যাটিং লাইন আপ। ৫০ ওভারও তারা খেলতে পারলেন না। বথাম এবার নিলেন সাত উইকেট। গড় – ‘২৬-৭-৪৮-৭’। সঙ্গী পেসার লিভার নিলেন ৩ উইকেট।

মজা হলো গোটা ম্যাচে স্পিনার জন এমবুরিকে হাত ঘোরাতেই হয় নি। আর এক স্পিনার আন্ডারউড বল করেন মাত্র ৭ ওভার। এতটাই বিক্রম ছিলো বোলার বোথামের। জিততে দরকার ছিলো ৯৪ রান আর সেটা বয়কট গুচ অতি সহজেই তুলে নিলেন।

ক্রিকেট ইতিহাসে গ্রেট অলরাউন্ডারদের অনেক অলৌকিক কীর্তি রয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ একা ব্যাটে বলে বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জয়ের এমন ঘটনা কমই ঘটেছে।

ম্যাচে প্রথম ইনিংসে এক তৃতীয়াংশ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধেক বল তিনি করেছেন। ব্যাটেও ইনিংসের এক চতুর্থাংশ বল খেলে অর্ধেক রান তিনি করেছেন। ইতিহাস খুঁজে এমন প্রদর্শন পাওয়া মুশকিল। তাই তো তিনি গ্রেট। গ্রেট কথাটা যত্র তত্র আজকাল প্রযোজ্য হয় বটে কিন্তু ব্যাপারটা এতো সহজলভ্য নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link