অপ্রাপ্তির আক্ষেপ মেটানোর পালা

ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিলো স্বপ্নের মতো। জাতীয় দলে অভিষেকের পরই প্রতিভা আর সামর্থ্য দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন বহু ক্রিকেট ভক্তের মনজুড়ে। বেশ সম্ভাবনা নিয়ে দলে আসলেও ধীরে ধীরে ফর্ম হারিয়ে বনে গেছেন চরম অধারাবাহিক।

বাজে ফর্ম আর দলে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকায় যে সম্ভাবনা দেখিয়ে দলে এসেছিলেন সেটির পূর্ণ প্রতিফলন এখনো দেখাতে পারেননি। তবে ব্যাট হাতে অফ ফর্মে থাকা সত্ত্বেও পাইপলাইনে ওপেনার সংকট আর অভিজ্ঞতার খাতিরে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন সৌম্য সরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে বেশ বাজে ফর্মেই আছেন তিনি। সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজে করেছিলেন ২ ফিফটি। এরপর থেকেই রান খরায় ভুগছেন সৌম্য। গেলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউডের সামনে ছিলেন নড়বড়ে!

একে তো উইকেটে থিতু হতে পারছিলেন না, তার উপর নার্ভাসনেস বোঝা যাচ্ছিলো স্পষ্ট। ৬ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ২৮ রান! যার মধ্যে এক ম্যাচে ১৬ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোয় ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের কোটা! সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ছিলেন চরম ব্যর্থ।

এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। করেন মাত্র ৪ রান! সেই ব্যর্থতার চাদরে থেকেই পাড়ি জমান ওমানে। লক্ষ্য আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আনঅফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের রান বন্যার দিনে তিনে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮ রানে আউট হন সৌম্য! ওমানের দূর্বল বোলিং শক্তির বিপক্ষেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন তিনি।

কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ নড়বড়ে সৌম্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঠিক কতটা ভালো করবে সেটা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। ফ্লাট উইকেট কিংবা ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে সৌম্যর রেকর্ড যতটা ভালো ঠিক তার উলটো চিত্র ‘স্লো উইকেটে’! টার্ন কিংবা স্যুইংয়ের বিপক্ষে বার বারই তিনি ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আরব আমিরাতে একই উইকেটে খেলা হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। যার কারণে বিশ্বকাপে উইকেট কিছুটা স্লো থাকার সম্ভাবনাই বেশি। যার কারণে সৌম্য সরকারের সাম্প্রতিক ফর্ম মোটেও ভরসার জায়গা তৈরি করতে পারছে না বাংলাদেশী ক্রিকেট সমর্থকদের মনে।

সেদিক বিবেচনায় টুর্নামেন্টের প্রথমদিকের কিছু ম্যাচে খুব সম্ভবত নাইম-লিটনের জুটি দেখা যাবে ওপেনিংয়ে। তবে এই দুইজনের কেউ ব্যর্থ হলে কিংবা দলের ভরাডুবিতে উইকেট বিবেচনায় একাদশে সুযোগ পেতে পারেন সৌম্য সরকার। ওপেনিং ছাড়া অন্য পজিশনে দলে সুযোগ পাওয়াটা সৌম্যর জন্যও বেশ কঠিন! সাকিব, মুশফিক, আফিফ, রিয়াদদের ভীড়ে কারো ইনজুরি ব্যাতিত মিডল অর্ডারে জায়গা করাটাও প্রায় অসম্ভব।

সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় ওপেনিংয়ে জায়গা পেতে হলে বেশ কঠিন লড়াই উতরে আসতে হবে সৌম্যকে। নাইম শেখ ধারাবাহিক রান করায় সৌম্যর জন্য সেই লড়াইটা যেনো আরো কঠিন। অপরদিকে, লেফট-রাইট কম্বিনেশনে নাইম-লিটন জুটিই যে আপাতত কোচ এবং নির্বাচকদের পছন্দ সেটা প্রমাণ নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ।

বলতে গেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাকআপ হিসেবেই আছেন সৌম্য। চলতি বছর ১২ টি-টোয়েন্টিতে ১৯ গড়ে রান করেছেন ২২৪। আছে তিন ফিফটিও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের মাটিতে খেলেছেন ২৭ বলে ৫১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন জিম্বাবুয়ের মাটিতেও। দেখা পেয়েছিলেন ২ ফিফটির।

তবে, এরপর মিরপুরের উইকেটে হটাৎ নিজেকে হারিয়ে ফেললেন। পেস, বাউন্স, স্যুইংয়ের বিপক্ষে ঠিকভাবে ডিফেন্সটাও করতে পারছিলেন না। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড এবং এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভালো করলেও বিশ্বকাপের আগের খেলা ৬ ম্যাচেই ছিলেন চরম ব্যর্থ।

একে তো রান পাচ্ছিলেন না, তার উপর তাঁর আউটের ধরনও ছিলো দৃষ্টিকটু, বাজে ফুটওয়ার্ক! সব মিলিয়ে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন সৌম্য। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে সুযোগ পেলে পেছনের সব ব্যর্থতা মুছে ফেলে নতুন করে শুরু করতেন চাইবেন তিনি। নিজের সেরাটা দিয়ে চাইবেন আবারো ফর্মে ফিরতে।

ক্যারিয়ারের শুরুতে ভবিষ্যত তারকা খ্যাতি পাওয়া সৌম্য সরকার এখন জাতীয় দলের অনিয়মিত মুখ। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একাদশে জায়গা করতে পারবেন কিনা বা কয় ম্যাচে সুযোগ পাবেন সে নিয়েই আছে সংশয়। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আবারো ব্যাট হাতে সেই আগ্রাসী সৌম্যকে দেখা যাবে এমনটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত-সমর্থকদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link