বাংলাদেশ ক্রিকেট দল একটি তত্ত্ব নিয়ে সবসময়ই বেশ সিরিয়াস। সেটি হচ্ছে ডানহাতি-বামহাতি তত্ব। সেটা বোলিং কিংবা ব্যাটিং দুইক্ষেত্রেই বেশ গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। লম্বা সময় ধরেই এই কাজটি করে আসছে বাংলাদেশ। এই নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে। এই সময়ে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ডান-বাম কম্বিনেশন বজার রাখা কী আদো যৌক্তিক।
এই প্রশ্ন প্রায়ই সংবাদ সম্মেলনে উঠে। ক্রিকেটাররাও বেশিরভাগ সময় উত্তরে জানান যে তাঁরাও বিশ্বাস করেননা এটি সবসময় মেনেই চলতে হবে। তবে মাঠে সেই কথার মিল থাকেনা। মাঠে বাংলাদেশ এই তত্ত্বের একনিষ্ঠ ভক্ত। বাংলাদেশের খেলা দেখলে মনে হয় দুজন বাঁ-হাতি কিংবা দুজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান যেনো একসাথে ব্যাটিং ই করতে পারবেন না। কিংবা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে একজন বাঁহাতি স্পিনার যেনো বোলিং করতেই পারেন না। এমনকি সাকিব আল হাসানও না।
এর আগে আমরা টেস্ট ক্রিকেটে দেখেছি তামিম ইকালের সাথে ওপেন করার জন্য সাদমান ইসলাম ফর্মে থাকা সত্বেও তাঁকে ড্রপ করা হয়েছে। কারণ সাদমান বাঁ-হাতি। ওদিকে কখনোই সেভাবে প্রমাণ করতে না পারা সাইফ হাসানকে খেলিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও এই তত্ত্ব অতি যত্নের সাথে লালন করা হয়।
আমরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফিফকে উপরে পাঠানো উচিৎ। যেনো তিনি সময় পান, ইনিংস বিল্ড আপ করতে পারেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে আফিফকে প্রমোশন দিয়ে পাঁচে পাঠানো হলো। তবে এতে কী আমরা খুশি হতে পারলাম? যেই সময় আফিফকে পাঠানো হলে সেই সময় আফিফের চেয়ে বরং রিয়াদ কিংবা সোহানই বেশি কার্য্যকর।
একজন স্লগার প্রয়োজন ছিল যিনি একটি ক্যামিও খেলে দিবেন। অধিনায়ক নিজেও আসতে পারতেন। আগেই ম্যাচেই তিনি দারুণ একটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু আফিফকে পাঠানো হলে কেননা মুশি ক্রিজে ছিলেন। আফিফ বাঁহাতি ছিল বলেই তাঁকে নামানো হলো। এছাড়া প্রমাণিত স্লগারদের রেখে আফিফকে নামানোর তো অন্য কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিনা।
এবার আসি এই লিখাটা যে কারণে লিখতে বসেছি সেই জায়গাতে। কাল বাংলাদেশে বিশেষ করে অধিনায়ক রিয়াদ এই ডানহাতি-বাঁহাতি তত্বের এক অনন্য প্রদর্শন দেখালেন। সাকিব এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন। এরপর সাইফউদ্দিন হাসারাঙ্গাকে ফিরালে ৭৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে একটু স্মার্ট ক্রিকেট খেললে বাংলাদেশের ম্যাচ জিততে কোন অসুবিধা হওয়ার কোন কথা ছিল না।
পঞ্চম জুটিতে দুই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে অদ্ভুত সব পরীক্ষা চালালেন রিয়াদ। আগের ওভারেই দুই উইকেট নেয়া সাকিবকে রিয়াদ আর বোলিং এ আনলেন। কারণ ক্রিজে দুইজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছেন। আপনার সেরা বোলারকে আপনি বোলিং এ না এনে বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের ম্যাচ বের করে নিয়ে যেতে দিলেন। এমনকি একই কারণে নাসুম ও মুস্তাফিজকেও বোলিং এ আনা হলো না।
সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকুর রহিমকে প্রশ্ন করেছিলাম সাকিব কী বাঁহাতিদের বিপক্ষে বোলিং না করেই আজকের সাকিব আল হাসান হয়েছেন কিনা। মুশফিক জানালেন সাকিব নাকি ডেথ ওভারেও বল করতে পারেন। তাই সাকিবকে শেষ পর্যন্ত রেখে দেয়া হলো। সাকিবকে আবার যখন ১৭ তম ওভারে নিয়ে আসা হলো তখন ম্যাচ ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে।
অথচ বাঁহাতিদের বিপক্ষে সাকিব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়েছেন ৩৯ টি উইকেট। বাঁ-হাতিদের বিপক্ষে তাঁর বোলিং গড় ১৭.১ এবং ইকোনমি রেট মাত্র ৬.৮৭। ওদিকে নাসুমও বাঁহাতিদের বিপক্ষে একইরকম সফল। তিনি নিয়েছেন ৭ টি উইকেট। বোলিং গড় ১৭.৭১ এবং ইকোনমি রেট ৬.৪১।
অথচ সাকিব, নাসুম কিংবা মুস্তাফিজেও ভরসা না রেখে রিয়াদ আফিফ ও নিজেকে বোলিং এ আনলেন। সেই তিন ওভারে দুজন মিলে দিলে ৩৬ রান। ম্যাচের মোমেন্টাম আসলে সেখানেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। পরের ওভারেই আবার সাইফউদ্দিন দেন ২২ রান। ফলে সাকিব, নাসুমদের আবার যখন বোলিং এ আনা হয় তখন আর তাঁদের কিছুই করার ছিল না। ফলে আরেকটি সহজ ম্য্যচ প্রতিপক্ষকে উপহার দিয়ে আসি আমরা। তাতে কী, তত্বটা আমরা ঠিকঠাকই পালন করেছি।