টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের শুরুতেই পাকিস্তানের বিপক্ষে দশ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে বেশ চাপেই আছে ভারত। এর মধ্যে দুশ্চিন্তার আরেক কারণ হার্দিক পান্ডিয়া। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগ থেকেই পান্ডিয়ার ইনজুরি নিয়ে চলছিলো বেশ আলোচনা। তিনি যে সম্পূর্ণ ফিট নন সেটা জানো বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) থেকে শুরু করে ফিজিও, কোচ এমনকি অধিনায়কও।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) আরব আমিরাতের অংশে বল তো করেনইনি ব্যাট হাতেও ছিলেন চরম ব্যর্থ। পুরো টুর্নামেন্টে ১২ ম্যাচে ১৪ গড়ে করেছিলেন মাত্র ১২৭ রান। এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স আর ফিটনেস সমস্যা থাকার পরেও বিশ্বকাপের স্কোয়াডে পান্ডিয়াকে রেখে দেওয়া নিয়েও কম সমালোচনা হয়নি। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারার দিন ব্যাট হাতে ধুঁকতে দেখা গেছে পান্ডিয়াকে। খেলার মাঝেই আরেকবার হাতে ব্যাথাও পান!
এদিকে পান্ডিয়াকে একাদশে রাখা নিয়ে পাকিস্তানের ম্যাচের পর থেকেই সমালোচনার মাত্রাটা বেড়েছে কয়েকগুন। সাবেক ক্রিকেটাররাও ক্ষোভ ঝেড়েছেন মিডিয়ায়।
সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক এবং প্রধান নির্বাচক দিলীপ ভেৎসরকার জানান, ‘পান্ডিয়ার ব্যাপারে কোচ, অধিনায়ক, ফিজিও এবং নির্বাচকদের উচিত ছিলো সবাই এক হয়ে পান্ডিয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
আরেক সাবেক ক্রিকেটার এবং নির্বাচক সন্দীপ পাতিল মনে করেন ফিট না থাকার পরেও তাকে দলে রাখাটা নির্বাচকদের ভুল সিদ্ধান্ত। বিশ্বকাপের আগে পান্ডিয়ার ফিটনেস টেস্ট করা হলো না কেনো সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক এই নির্বাচক।
তিনি বলেন, ‘বিসিসিআই তার ব্যাপারে জানে। তাকে একাদশে রাখার সিদ্ধান্ত অধিনায়ক এবং কোচের উপর নির্ভর করবে। কিন্তু যদি কোনো খেলোয়াড় ফিট না থাকে তাহলে সেটা নির্বাচকদের মাথায় রাখা উচিত। পুরো আইপিএলে যেহেতু সে বোলিং করেনি নির্বাচকদের এটা ভাবা উচিত ছিলো। বিশ্বকাপের দলে নেওয়ার আগে তার ফিটনেস টেস্ট করা দরকার ছিল।’
‘আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী সে যদি ফিট না থাকে তাহলে তার বদলি আরেকজনকে দলে নেওয়া যেতো। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কোচ ও অধিনায়ক ছাড়াও নির্বাচকরা এ বিষয়টি কি খেয়াল করেনি? ফিজিওর কাছ থেকে তো জানার কথা কারা কারা খেলার জন্য ফিট।’, যোগ করেন তিনি।
আইপিএলে কোনো ম্যাচেই তিনি বল করেননি। তবুও স্রেফ ব্যাটার হিসেবে পান্ডিয়াকে খেলানো নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ ঝাড়েন পাতিল।
তিনি বলেন, ‘কোচ রবী শাস্ত্রী এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি। রোহিত শর্মা এবং আজিঙ্কা রাহানে বলেছে সে ফিট। কিভাবে আপনি বলতে পারেন যে সে ফিট যেখানে সে ম্যাচের আগে ফিট না সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মানে এটা তো বিশ্বকাপ! অন্য কোনো ম্যাচ বা সিরিজ নয়! সে আইপিএলে একটা বলও করেনি। আর আপনি তাকে বিশ্বকাপে খেলাচ্ছেন। তাও তাকে কোন ভূমিকায় খেলাচ্ছেন! তাকে জাদেজার পরে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়েছে। পান্ডিয়ার ব্যাপারে তাই অনেক প্রশ্ন উঠছে।’
বিশ্বকাপের বেশ আগ থেকেই পান্ডিয়ার ইনজুরি নিয়ে আলোচনা হলেও নির্বাচকরা যে সেটি মাথায় নেননি সেটা এখন স্পষ্ট। হার্দিকের জায়গায় বেশ কিছু ফর্মে থাকা খেলোয়াড়ও যে সুযোগ পাচ্ছেননা।
পাতিল বলেন, ‘আপনি এমন একজনকে দলে নিয়েছেন যার ফিটনেস নিয়ে গত ৬ মাস ধরেই আলোচনা হচ্ছে। এখন বলছেন তার কাধের ইনজুরি! আপনি একজন হাফ ফিট প্লেয়ারকে খেলাচ্ছেন যেটা দলের জন্য অবশ্যই শুভকর নয়। তার জন্য ভালো পারফরম করা অনেকেই তো সুযোগ পাচ্ছে না। একা হাতে আপনার দলকে জিতাই দিবে, এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ সে?’
তিনি আরো বলেন, ‘আগের দিনে আমরা হাফ ফিট ক্রিকেটারদের নিয়ে খেলেছি। সুনীল গাভাস্কার যদি হাফ ফিট থাকতো আমরা তাকে অবশ্যই খেলাতাম। কিন্তু এখন কি সেই সময় আছে? এখন তো সম্পূর্ণটা ফিটনেসের উপর। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে অলরাউন্ডার হিসেবে পান্ডিয়ার পারফরম্যান্স ভালো নয়। এক বছর একটা ক্রিকেটারকে বিচার করার জন্য বেশ ভালো সময়।’
অপরদিকে পান্ডিয়ার ব্যাপারে সাবেক ভারতীয় পেসার ও বর্তমানে মুম্বাইয়ের প্রধান নির্বাচক সলিল আঙ্কোলা বলেন, ‘যদি পান্ডিয়া বল করতে না পারে তাহলে তাকে একাদশে রাখার কোনো মানে হয় না। আমি মুম্বাইয়ের সাথে আছি বলে বলছি এমনটা না। যাদের ক্রিকেটের প্রতি নূন্যতম জ্ঞান আছে সে পান্ডিয়ার জায়গায় শার্দুল ঠাকুরকে খেলাবে। শার্দুল নিজেকে প্রমাণের কয়টা সুযোগ পেয়েছে? যখনি সে সুযোগ পেয়েছে তখনি নিজেকে প্রমাণ করেছে। ৬ নম্বরে যদি আপনি একজন অলরাউন্ডার চান তাহলে শার্দুলই এখন সেরা। সে বিশ্বের যেকোনো দলেই সুযোগ পাবার মতো। আর যদি এই স্পটে কোনো ব্যাটার চান তাহলে সেটা হতে পারে শ্রেয়াস আইয়ার।’