আসিফ আলীর দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে আফগানিস্তানকে ৫ উইকেটের হারিয়ে টানা তিন জয়ে সেমিতে নিজেদের টিকে প্রায় নিশ্চিত করে নিলো পাকিস্তান। হেরে গেলেও টি-টোয়েন্টিতে আরেকবার নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখল আফগানিস্তান দল। মূলত অন্তিম মুহূর্তের লড়াইয়ে আসিফ আলীর ক্যামিওর কাছেই হার মানতে হয় তাঁদের।
১৪৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালোভাবে করতে পারেনি পাকিস্তান। দলীয় ১২ রানেই ব্যক্তিগত ৮ রানে মুজিবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমের সাথে জুটি গড়েন ফখর জামান। ঘুরে দাঁড়িয়ে দুজনে মিলে গড়েন পঞ্চাশের জুটি।
দলীয় ৭৫ রানে ব্যক্তিগত ৩০ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে শিকার হয়ে আউট হন ফখর। এরপর মোহাম্মদ হাফিজও যেতে পারেননি বেশদূর। ৯৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। তবে একপ্রান্তে থিতু হয়ে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন বাবর আজম। আরেকপ্রান্তে তার সঙ্গি হন শোয়েব মালিক।
শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন ছিলো ৩৮ রান। ১৭ তম ওভারে রশিদ খানের বলে বাবর আজম ক্যাচ তুলে দিলেও ধরতে পারেননি নাভিন উল হক! কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলে বাবরকে বোল্ডকে ঠিক নিজের শিকার বানান রশিদ। বাবর আজম ফেরেন ৪৭ বলে ৫১ রানে। ১২২ রানে চার উইকেট হারায় পাকিস্তান। শেষ ৩ ওভারে দরকার ২৮ রান! ক্রিজে আগের ম্যাচে জয়ের দুই নায়ক শোয়েব মালিক ও আসিফ আলী।
১৮ তম ওভারে নাভিন উল হকের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মালিক বিদায় নিলে ম্যাচের মোড় পালটে যায়। ২ ওভারে প্রয়োজন ২৪ রান! ১৯ তম ওভারে করিম জান্নাতের এক ওভারে চার ছক্কা হাঁকান আসিফ আলী। ওই ওভারেই ম্যাচ শেষ করেন এই পাওয়ার হিটার। সেই সাথে সেমিতে প্রায় নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করে ফেললো পাকিস্তান। টান দ্বিতীয়বারের মত ব্যাট দিয়ে একদম খাঁদের কিনারা থেকে পাকিস্তানকে ফেরালেন আসিফ আলী।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানি বোলারদের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে আফগানিস্তানের টপ অর্ডার। ইমাদ ওয়াসিমের বলে শূন্য রানেই ফেরেন হজরতউল্লাহ জাজাই। শাহীন আফ্রিদির বলে দ্রুত ফেরেন মোহাম্মদ শাহজাদও। এক ছক্কায় আশা দেখালেও তাড়াহুড়োই উইকেট দিয়ে আসেন আসগর আফগান ও তরুণ রহমানউল্লাহ গুরবাজ। মাত্র ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে আফগানরা।
পঞ্চম উইকেটে করিম জান্নাত ও নাজিবুল্লাহ জাদরান চেষ্টা করেন ভীত গড়ার। কিন্তু ২৫ রানের জুটির পথে করিম ফেরেন ব্যক্তিগত ১৭ বলে ১৫ রানে। ভালো আশা দেখালেও বড় স্কোর গড়তে পারেনি নাজিবুল্লাজ জাদরানও। ২১ বলে ৩ চার ও ২২ রানের ইনিংস শেষে আউট হন তিনি। দলের রান তখন ৬ উইকেটে ৭৬!
খাদের কিনারে থাকা দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ নবী ও গুলবাদিন নাইব। প্রথমে ধীরে ধীরে দুই প্রান্তে দু’জনে থিতু হন। রান নিয়ে যান একশোর কোটায়। সেখান থেকেই ফিনিশিংয়ে ঝড় তুলেন নবী ও নাইব। ১৭ ওভারে রান ছিলো ১০৪! সেখান থেকে এই দুইজনের ব্যাটিং ঝড়ে ২০ ওভার শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৪৭ রান। শেষ ৩ ওভারেই দু’জনে মিলে করেন ৪৩ রান!
আফগানিস্তানের পক্ষে নবী ৩২ বলে ৩৫ ও নাইব অপরাজিত থাকেন ২৫ বলে ৩৫ রানে। পাকিস্তানের পক্ষে ইমাদ ওয়াসিম সর্বোচ্চ ২ এবং আফ্রিদি, হাসান আলীরা নেন একটি করে উইকেট। শেষের দিকে ব্যাটিং ঝড় তুলেও জয় নিশ্চিত করতে পারেনি আফগানরা।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান – ১৪৭/৬ (২০ ওভার); নাইব ৩৫(২৫)*, নবী ৩৫(৩২)*, নাজিব ২২(২১); ইমাদ ৪-০-২৫-২, শাদাব ৪-০-২২-১, আফ্রিদি ৪-০-২২-১।
পাকিস্তান – ১৪৮/৫ (১৯ ওভার); বাবর ৫১(৪৭), ফখর ৩০(২৫), আসিফ আলি ২৫(৭)* মালিক ১৯(১৫); মুজিব ৪-০-১৪-১, রশিদ ৪-০-২৬-২।
ফলাফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: আসিফ আলী (পাকিস্তান)।