আফগানিস্তানকে আক্ষরিক অর্থেই উড়িয়ে দিয়ে জয়ে ফিরেছে ভারত, বাঁচিয়ে রেখেছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন। তবে, ম্যাচ শেষে ম্যাচের ক্রিকেটীয় বিষয়াদি নিয়ে যত না আলোচনা হচ্ছে তাঁর চেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে অক্রিকেটীয় বিষয় নিয়ে।
কেউ কেউ তো ম্যাচের মধ্যে অন্য অনেক রকম গন্ধও পাচ্ছেন। এমনকি কারো কারো দাবি ‘আফগানিস্তান ইচ্ছা করে ম্যাচ ছেড়েছে’। বিস্ময়কর এক অভিযোগ, আইসিসি ইভেন্টে যা আজকের দিনে প্রায় অকল্পনীয় ব্যাপার।
ঘটনার সূত্রপাত টস থেকে। টস কয়েন ছুঁড়ে মারেন বিরাট কোহলি। টস জিতেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত টস হারলেন কোহলি। নবী আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্ত মাইকে জানানোর আগে বিরাটের সাথে হাত মিলিয়ে ভারতের অধিনায়ককে বলেন, ‘আমরা বোলিং করবো।’ এরপর মাইকে নিজের সিদ্ধান্ত জানান ও কারণ ব্যাখ্যা করেন।
এটা খুব সাধারণ একটা কার্টেসি, নিয়মিত একটা দৃশ্য মাঠের। যদিও, এটা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, বিরাট কোহলিই নাকি টসের পর নবীকে বোলিং করতে বলেন। আর এমন মন্তব্য ও বক্তব্যের জের ধরে অহেতুক চাঞ্চল্য আর সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়াও ম্যাচে আফগানিস্তানের কৌশলগত কিছু সিদ্ধান্ত, ফিল্ডিং মিসকেও সহজ চোখে দেখছেন না অনেক দর্শক। বিষয়গুলো পাকিস্তানের খেলাধুলা বিষয়ক চ্যানেল ‘এ স্পোর্টস’-এর এক অনুষ্ঠানেও উঠে আসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের চার গ্রেট ক্রিকেটার – ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, ওয়াহাব রিয়াজ ও মিসবাহ উল হক।
টস বিতর্ককে রীতিমত এক বাউন্সার দিয়ে উড়িয়ে দেন ওয়াকার ইউনুস। ক’দিন আগেও পাকিস্তানের বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করা ওয়াকার বলেন, ‘কথাটা বিরাট কোহলি বলেছেন বলে কেউ কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন। তবে, এটা একটা ভুল অভিযোগ।’
তাঁর সাথে সুর মিলিয়ে ওয়াহাব রিয়াজও বলেন, ‘টস হওয়ার পর যখন ম্যাচ রেফারি ইশারা করে জানিয়ে দেন নবী টস জিতেছে, তখন সে বিরাটের সাথে হাত মিলিয়ে আগে তাঁকে এরপর মাইকে নিজের সিদ্ধান্ত জানান যে – আমরা আগে বোলিং করবো। এটা মাঠের খুব সাধারণ ঘটনা। টসের পর অধিনায়করা হাত মিলিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তটা জানিয়ে তারপর আনুষ্ঠানিক ভাবে বলেন।’
ওয়াসিম আকরামও ‘ম্যাচ পাতানো’র ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করছেন না তিনি বলেন, ‘এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে কেন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রচনা করা হবে? সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, ভারত অনেক ভাল দল, শুধু এই বিশ্বকাপের শুরুটা ভাল হয়নি। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন খেলা তখন ভারতই তো এগিয়ে থাকবে। কোনো ভাবেই আফগানিস্তান ওদের চেয়ে ভাল দল নয়। আর এত বড় দলের বিপক্ষে খেলার সময় অনেক কিছুই ঘটতে পারে। চাপ সামলাতে না পেরে ভুল করবে, কিছু সিদ্ধান্তও ভুল হবে। কয়েকজন স্পিনার বোলিং কোটা পূরণ করেনি, কারণ পিচ থেকে তো কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। আর রান করেছে কে? রোহিত শর্মা – ও এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।’
এখানে ওয়াহাব রিয়াজ বলেন, ‘আর ভারতের এখন হারানোর কিছু নেই। তাঁরা অনেক কঠিন হয়েই যে ফিরে আসবে – সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। ওদের শরীরি ভাষা, যেখাবে আফগানিস্তানকে আক্রমণ করেছে – তাতে পরিস্কার যে একদম চাপমুক্ত হয়ে খেলেছে ওরা। আর এর জন্য ভারতকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এখানে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে আফগানিস্তান ইচ্ছা করে ম্যাচ হেরেছে। এটা খেলার অংশ – এখানে হারজিত থাকবেই। আফগানিস্তান ভাল খেলতে পারেনি। ভারত পেরেছে, সেই কৃতীত্ব তাঁদের।’
সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক মিসবাহ উল হক মনে করেন, আবুধাবির ব্যাটিং ট্র্যাকের শতভাগ সদ্ব্যবহার করতে পেরেছে ভারত। তিনি বলেন, ‘এটা দারুণ একটা ব্যাটি ট্র্যাক। এমনকি রশিদ খানও কোনো টার্ন বের করতে পারছিলেন না। আবুধাবিতে আগে আমরা পেসারদের দেখেছি বাউন্স করাতে, স্যুইং করাতে – এবার কিছুই হচ্ছিল না। ব্যাটে বলগুলো সহজেই আসছিল। সেজন্য দেখবেন এবার অনেক ছক্কা হয়েছে।’
এই একই উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা আছে ওয়াহাব রিয়াজেরও, পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল)। সেটা মনে করিয়ে দেন ওয়াসিম আকরাম। এখানে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের ২৪০ রানের জবাবে ওয়াহাবের নেতৃত্বে পেশোয়ার জালমি করেছিল ২৩০ রান। ওয়াসিম আকরাম মনে করিয়ে দেন, সর্বশেষ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ১৯০ রানের লক্ষ্য ১৭ ওভারের মধ্যে তাড়া করে জিতে যায় রাজস্থান রয়্যালস।
আর এই আলোচনার শেষ ভাগে সবচেয়ে মোক্ষম কথাটা বলেন ওয়াকার ইউনুস, ‘এখানে কোনো বিতর্ক খোঁজার আগে একটু বুদ্ধি ব্যবহার করলেই হয়। যদি ওদের বিরাট কোহলির এরকম কিছু করারই থাকতো, তাহলে সেটা নবীকে ড্রেসিং রুম থেকেই বলে আসতে পারতো। মাঠে এসে কেউ বলবে নাকি যে – এটা না ওটা করো।’