১২ জন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার আর শ’খানেকের বেশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ভারতীয় ক্রিকেটকে দিয়েছিলেন তারক সিনহা। ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে যিনি বেশ পরিচিত নাম। অনেকেই ডাকেন ‘উস্তাদজি’ বলে। প্রায় চার জেনারেশন ধরে তার একাডেমি থেকে ক্রিকেটার পেয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলেও! সেই ‘উস্তাদজি’ খ্যাত তারক সিনহা হঠাৎ করেই চলে গেলেন পরপারে।
শনিবার সকালে ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিখ্যাত সনেট ক্লাবের অন্যতম এই কারিগর। ক্রিকেটার তৈরির এই সুনিপুণ কারিগরের বিদায়ে ভারতীয় ক্রিকেটে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সনেট ক্লাব থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তারাক সিনহাকে নিয়ে খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা শেয়ার করতে হচ্ছে। এই সনেট ক্লাব গঠনের কারিগর তারক সিনহা আজ রাত তিনটায় আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।’
১৯৬৯ সাল থেকেই তিল তিল করে গড়ে তোলা সনেট ক্লাবকে তিনি বানিয়েছিলেন ক্রিকেটার তৈরির কারখানা। মনোজ প্রভাকর, রমন লাম্বা, আশিষ নেহরা, শিখর ধাওয়ান, আকাশ চোপড়া, অজয় শর্মা থেকে ঋষাভ পান্ত প্রত্যেকেই এই তারক সিনহার হাতে গড়া।
১৯৬৯ সাল থেকে দিল্লির বিখ্যাত সনেট ক্রিকেট ক্লাব পরিচালনা করে আসছেন তিনি। কোচ হিসেবে নিজের মধ্যে সবকিছুই আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন তিনি। যদিও ক্যারিয়ারে হতে চেয়েছিলেন একজন প্রোফেশনাল ক্রিকেটার। কিন্তু অনূর্দ্ধ-১৬ তে স্কুল ট্রায়ালে বাদ যাওয়ার পর ক্ষোভের বশেই কিনা যোগ দেন কোচিং করাতে। ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন সনেট ক্রিকেট ক্লাব। ক্রিকেটার হতে না পারলেও কোচ হিসেবে বনে গেছেন সেরাদের একজন।
ক্যারিয়ারে যা অর্জন করেছেন যা কামিয়েছেন তার সবটাই দিয়েছেন এই ক্লাবে। এমনকি একটা সময় অর্থাভাবে বাসা ভাড়া করেও থেকেছেন তিনি, সাহায্য পেয়েছিলেন তাঁরই ছাত্রদের কাছ থেকে। আশিষ নেহরা, ঋষাভ পান্তরা কখনোই ফেলতে পারেননি গুরুর কথা। বিপদে আপদে সবসময়ই ছিলেন পাশে।
ভারতীয় ক্রিকেটকে দু’হাত ভরে দেওয়া সেই উস্তাদজি চলে গেলেন ৭১ বছর বয়সে। একজন ক্রিকেটার গড়তে যেখানে অনেকেই বছরের পর বছর ক্রিকেটে দিয়েছেন। সেখানে ভারতীয় ক্রিকেটকে একটা ক্রিকেট টিমই উপহার দিয়েছেন এই সিনহা। ঘরোয়া ক্রিকেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁরই ক্লাব থেকে বের হওয়া শ’খানেকের বেশি ক্রিকেটার।
উস্তাদজি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন কোটি ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে। ভারতকে দু’হাত ভরে দেওয়া মানুষটি ক্যারিয়ার জুড়ে বিনিময়ে নেননি কিছুই! তারক সিনহার বিদায়ে যেনো ভারতীয় ক্রিকেট হারালো অমূল্য এক রত্নকে।