ফজল মাহমুদ, গোলকধাঁধা হাতে গল্পকার

১৯২৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তৎকালীন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন ফজল মাহমুদ। বাবা গুলাম মোহাম্মদ ছিলেন লাহোরের ইসলামিয়া কলেজের অধ্যাপক। ওই কলেজ থেকেই পরবর্তীকালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন ফজল মাহমুদ।

৩৪ টেস্টে ২৪.৭০ গড়ে ফজল মাহমুদের সংগ্রহ ১৩৯ উইকেট। টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েছেন ৪ বার, ইনিংসে ৫ উইকেট ১৩ বার। এছাড়া ১১২ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৮.৯ গড়ে নিয়েছেন ৪৬৬ উইকেট। ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন ৮ বার, ইনিংসে ৫ উইকেট ৪৩ বার।

কেমন বোলার ছিলেন ফজল মাহমুদ? লেখাটা যারা পড়ছেন তাদের প্রায় সবার মনেই এ প্রশ্নটা আসা স্বাভাবিক। পরিসংখ্যান দেখে হয়ত কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন; তারপরেও চলুন এই প্রশ্নের উত্তরটাই একটু জানানোর চেষ্টা করি।

পঞ্চাশ দশকের সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন, ডান-হাতি পেসার ফজল মাহমুদ ছিলেন মূলত সুইং বোলার। তাঁর হয়ত এক্সপ্রেস গতি ছিল না, তবে সহায়ক কন্ডিশনে বলকে দু’দিকেই সুইং করাতে পারতেন তিনি। আর ছিল লেগ কাটার; ফজল মাহমুদের ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ উইকেটই এসেছে স্পেশাল এই ডেলিভারি থেকেই।

ক্রিকেট ইতিহাসের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার এই লেগ কাটার। বিশেষ করে সাবকন্টিনেন্টের মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে এটি অত্যন্ত কার্যকরী অস্ত্র। আর এই লেগ কাটার বোলিংকে রীতিমত শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ফজল মাহমুদ। লেগ কাটারের পাশাপাশি অফ কাটারও পারতেন তিনি। ফজল মাহমুদের ভাষায়, ‘The ball would be delivered on a right-handed batsman’s middle and leg stump, with the ball making a final, late deadly turn squaring him up.’

কিংবদন্তী অলরাউন্ডার ও সাবেক লেগ স্পিনার রিচি বেনো মনে করেন, ফজল মাহমুদের লেগ কাটার তাঁর (বেনোর) লেগ ব্রেকের চাইতেও ভয়ংকর ছিল কেননা ফজলের বলের গতি ছিল দ্বিগুণ। গতির সাথে টার্নের ভয়ংকর এক কম্বিনেশনই ছিল তাঁর সাফল্যের মূল রহস্য।

ফজল মাহমুদের বোলিংয়ের ধরণকে তুলনা করা হত সমসাময়িক আরেক গ্রেট স্যার অ্যালেক বেডসারের সাথে। কেননা উনিও লেগ কাটারে পারদর্শী ছিলেন। কিংবদন্তী ক্রিকেট সাহিত্যিক নেভিল কার্ডাস ফজল মাহমুদকে তুলনা করতেন ইংলিশ লিজেন্ড সিডনি বার্নসের সাথে।

ইংল্যান্ডের কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার ফ্রাঙ্ক টাইসন ফজল সম্পর্কে বলেছেন, ‘লেগ কাটার করতে জানেন এমন মিডিয়াম পেসারদের মধ্যে তিনিই সেরা। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং কিংবদন্তী নিল হার্ভের মতে, ‘বলকে কথা বলাতে পারতেন ফজল।’

১৯৪৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে উত্তর ভারতের পক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক। রঞ্জী ট্রফিতে দক্ষিণ পাঞ্জাবের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ১১ নম্বরে নেমে করেছিলেন অপরাজিত ৩৮ রান এবং উইকেট নিয়েছিলেন ৩টি। তাঁর প্রথম শিকার ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় অলরাউন্ডার লালা অমরনাথ। পশ্চিম ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি একাই নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।

ঘরোয়া প্রতিযোগিতার একটি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে একবার ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন ফজল মাহমুদ। তাঁর ওই পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ১৯৪৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে দলে নিতে চেয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন অধিনায়ক নবাব ইফতিখার আলী খান পতৌদি। কিন্তু ফজলের বয়স মাত্র ১৯ বছর হওয়ায় তাঁকে স্কোয়াডে নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন প্রধান নির্বাচক সি কে নাইডু।

সেটা হলে তাঁর হয়ত অনেক আগেই ভারতের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয়ে যেতে পারত; দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা হয় নি।

১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় ভারত। রঞ্জী ট্রফির দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে ভারতীয় স্কোয়াডে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন কুড়ি বছরের তরুণ ফজল মাহমুদও। তবে সফরের ঠিক পূর্বেই ভারতবর্ষ বিভাজনের ফলে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের প্রেক্ষিতে দল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন ফজল মাহমুদ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন তিনি।

পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল পাঞ্জাব ও সিন্ধুর মধ্যে, ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে। ফজল প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন পাঞ্জাবের। ৬০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত ফার্স্ট ক্লাস পর্যায়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দলের বিপক্ষে বল হাতে ধারাবাহিক সফলতা পেয়েছেন। ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে সিলনের (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) বিপক্ষে এক ম্যাচেই নিয়েছিলেন ১৬ উইকেট।

১৯৫১-৫২ মৌসুমে করাচীতে একটি আনঅফিশিয়াল টেস্ট ম্যাচে শক্তিশালী ‘এমসিসি’কে হারিয়েছিল পাকিস্তান; ৪০ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ফজল মাহমুদ। পাকিস্তানের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পেছনেও ফজল মাহমুদের ধারাবাহিক বোলিং পারফরম্যান্সের একটা বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন অনেকে।

১৯৫২ সালে বিশ্বের সপ্তম দেশ হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে পাকিস্তান। অক্টোবরে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে অংশ নেয় তাঁরা। অভিষেক টেস্টে অবশ্য তেমন কিছু করতে পারেন নি ফজল মাহমুদ, ৯২ রান খরচায় নিয়েছিলেন মাত্র ২ উইকেট। পাকিস্তান হেরেছিল এক ইনিংস ও ৭০ রানের ব্যবধানে।

লক্ষ্ণৌতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের ‘দ্বিতীয়’ টেস্টেই প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান। ভারতকে ইনিংস ব্যবধানে হারানো ‘ঐতিহাসিক’ সেই বিজয়ের নায়ক ছিলেন ডান-হাতি ফাস্ট বোলার ফজল মাহমুদ।

অস্ট্রেলিয়ার কলিন ম্যাকডোনাল্ডের বিপক্ষে বল করছেন ফজল মাহমুদ। ১৯৫৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে তোলা ছবি।

দুই ইনিংস মিলিয়ে (৫/৫২ ও ৭/৪২) মাত্র ৯৪ রান খরচায় তিনি নিয়েছিলেন ১২ উইকেট। যা বিদেশের মাটিতে এখনও পর্যন্ত কোন পাকিস্তানি বোলারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।

১৯৫৪ সালে টেস্টে প্রথমবারের মত ‘ইংল্যান্ডের মাটিতে’ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বড় ‘অঘটন’ ঘটিয়েছিল পাকিস্তান। উল্লেখ্য, এটাই ছিল দেশটির প্রথম ইংল্যান্ড সফর এবং ইংলিশ কন্ডিশনে প্রথম সাফল্য।

ওভাল টেস্টে ইংলিশদের বিপক্ষে একাই ১২ উইকেট নিয়ে ‘অবিস্মরণীয়’ সেই বিজয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যথারীতি সেই ফজল মাহমুদ। দুই ইনিংসে তাঁর বোলিং ফিগার ছিল যথাক্রমে ৩০-১৬-৫৩-৬ এবং ৩০-১১-৪৬-৬!

চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৬৮ রান। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে এক পর্যায়ে তাদের স্কোর ছিল ১০৯/২। কিন্তু ফজল মাহমুদের বিধ্বংসী এক স্পেলে মাত্র ৩৪ রানের মধ্যে শেষ ৮ ব্যাটসম্যানকে হারিয়েছিল তারা; যার ছয়টিই নিয়েছিলেন এই ডান-হাতি সিমার। দুই ইনিংসেই ফজল মাহমুদের বলে কট বিহাইন্ডের শিকার হয়েছিলেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক ও কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান লেন হাটন।

১৯৫৫ সালে ইতিহাসের ‘প্রথম’ পাকিস্তানি ক্রিকেটার হিসেবে উইজডেন মনোনীত বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার গ্রহণ করেন ফজল মাহমুদ।

১৯৫৬ সালে করাচী টেস্টে তৎকালীন ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম ‘পরাশক্তি’ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে রীতিমত অসাধ্য সাধন করেছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রথম অজি বধের ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের নায়ক ছিলেন ‘ওয়ান এন্ড অনলি’ ফজল মাহমুদ!

১১৪ রানে ১৩ উইকেট নিয়ে পেয়েছিলেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানই হয়েছিলেন ফজল মাহমুদের শিকার। ফজলের বোলিং বিশ্লেষণটাও ছিল দেখার মত ২৭-১১-৩৪-৬! রিচি বেনোর নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৮০ রানে।

রোমে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের কন্যা নাজমা ও সালমাকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন ফজল মাহমুদ ও ডেনিস কম্পটন।

দ্বিতীয় ইনিংসেও সফরকারীদের প্রথম চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছিলেন ফজল মাহমুদ (৪৮-১৭-৮০-৭)। ৯ উইকেটের ব্যবধানে হেসেখেলে ম্যাচটা জিতেছিল পাকিস্তান।

বিখ্যাত ক্রিকেট সাময়িকী উইজডেন সেই ম্যাচে ফজল মাহমুদের বোলিং কৌশল সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল, ‘maintaining an accurate length and varying his swing with a mixture of leg-cutters and breakbacks.’

পাকিস্তানের তৎকালীন উইকেটরক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, ‘Fazal never wavered in length and direction, and he moved the ball both ways intelligently…For one whole over from Fazal in the first innings, even the great Miller had no clue.’

১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল পাকিস্তান। তাদের জন্য খুবই কঠিন একটা সফর ছিল সেটা। পুরো সিরিজে প্রায় ২৫০ ওভারেরও বেশি বল করতে হয়েছিল ফজল মাহমুদকে!

সিরিজটা বিখ্যাত হয়েছিল অবশ্য অন্য কারণে। স্যার গ্যারি সোবার্সের কনিষ্ঠতম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ড এবং ক্রিকেটের প্রথম লিটল মাস্টার খ্যাত হানিফ মোহাম্মদের ৩৩৭ রানের ‘মহাকাব্য’ রচিত হয়েছিল ওই সিরিজেই।

পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই পরাজিত হয় সফরকারী পাকিস্তান। তবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শেষ টেস্টে। পরাক্রমশালী ক্যারিবিয়ানদের বিধ্বস্ত করেছিল ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে।

ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে বিদেশের মাটিতে গৌরবোজ্জ্বল সেই বিজয়ের অন্যতম নেপথ্য কারিগর ছিলেন ফজল মাহমুদ! ম্যাচের প্রথম বলেই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইনফর্ম ওপেনার কনরাড হান্টকে (০); বেশিক্ষণ টিকতে পারেন নি স্যার গ্যারি সোবার্সও (১৪)। ফজল মাহমুদের বিখ্যাত লেগ কাটারের শিকার হয়েছিলেন তিনিও।

ক্যারিবিয়ানদের প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে ফজলের বোলিং ফিগার ছিল যথাক্রমে ৩১-১০-৮৩-৬ এবং ৯-১-৩৫-২! ১৯৫৯ সালে ফিরতি সিরিজে আবারও মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

করাচীতে সিরিজের প্রথম ম্যাচটা তারা জিতেছিল ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট (৪/৩৫ ও ৪/৮৯) নিয়ে সেই জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন ফজল মাহমুদ। দুই ইনিংসেই স্যার গ্যারি সোবার্সকে (০ ও ১৪) আউট করেছিলেন তিনি। ওই টেস্টেই প্রথম পাকিস্তানী ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন ফজল মাহমুদ, মাত্র ২২ ম্যাচে। তাঁর শততম টেস্ট উইকেটটি ছিলেন স্যার গ্যারি সোবার্স।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তান জিতেছিল ৪১ রানে। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে নিশ্চিত হয়েছিল সিরিজ জয়টাও। প্রথমবারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজ হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল ফজল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দলটি।

ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচেই টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪র্থ বারের মত ১০ উইকেট শিকার করেছিলেন ফজল মাহমুদ। ডানহাতি এই পেসারের বোলিং তোপেই (৬/৩৪) প্রথম ইনিংসে মাত্র ৭৬ রানে অলআউট হয় সফরকারী ক্যারিবিয়ানরা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম সাত উইকেটের ছয়টিই নিয়েছিলেন ফজল (৬/৬৬)। তাঁর ম্যাচ ফিগার দাঁড়িয়েছিল ১২/১০০।

১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজে পর পর দুই ম্যাচে এক ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেন ফজল মাহমুদ। প্রথমটি ছিল ঢাকায় (৫/৭১) এবং দ্বিতীয়টি ছিল করাচিতে (৫/৭৪)।

ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ – পৃথক চারটি দেশের বিপক্ষে টেস্টে ১২ বা ততোধিক উইকেট লাভের কৃতিত্ব অর্জনকারী প্রথম বোলার হলেন ফজল মাহমুদ।

১৯৫৭, ১৯৫৮ ও ১৯৫৯ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে। এ তিন মৌসুমে তিনি হ্যাটিট্রিক করেছিলেন ৪ বার। এক ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন ২ বার। ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ৬ বার।

১৯৫৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজের ঠিক পূর্বে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান পাকিস্তানের বর্ষীয়ান অধিনায়ক আবদুল হাফিজ কারদার। তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হন ফজল মাহমুদ। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত মোট ১০টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানের জয়-পরাজয় ছিল দুটি করে; বাদবাকী টেস্টগুলো ড্র হয়েছিল।

১৯৬২ সালে দেশের মাটিতে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর আন্তর্জাতিক ও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেন কিংবদন্তী এই ডান-হাতি পেসার। ২০০২ সালে ‘ডাস্ক টু ডন: অটোবায়োগ্রাফি অব আ পাকিস্তানি ক্রিকেট লিজেন্ড’ নামে একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বের করেছিলেন ফজল মাহমুদ।

ক্রিকেট বাদে অন্য খেলাতেও রয়েছে তাঁর অবদান। নিজেও এক সময় ভাল হকি খেলতেন, পাকিস্তানে হকির উন্নয়নেও নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন দীর্ঘসময় ধরে। ২০০৫ সালের ৩০ মে, লাহোরে অবস্থিত নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

খেলোয়াড়ি জীবনের সতীর্থ ও সাবেক গ্রেট হানিফ মুহম্মদের ভাষায়, ‘ও (ফজল) দারুণ একজন মানুষ ছিল। সব সময় যে কাউকে সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিল। টেস্ট খেলা শুরুর পর যত জয় এসেছে আমাদের, সবগুলোর জন্য ওর কাছে আমরা ঋণী।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link