নয় হাজার দুই শত পাঁচ। নেহাৎ একটি সংখ্যা কি। আসলেই কি তাই? শুধুই কি সংখ্যা? না ৯২০৫ এটা শুধুই সংখ্যা না। এটা ২০০৭ থেকে এখন অবধি করা রোহিত শর্মার ওয়ানডে রান। বর্তমান বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের মধ্যে রোহিত শর্মার নামটা যেন এক ধ্রুবক। যেমন বিধ্বংসী তেমনি ধৈর্য্যশীল ব্যাটার রোহিত শর্মা।
ভারতীয় সাবেক কিংবদন্তি ব্যাটার রাহুল দ্রাবিড় ভারত জাতীয় দলের কোচ হয়ে আসার পর রোহিত বর্তমানে দায়িত্ব পেয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্বের। রোহিতের সাথে দ্রাবিড়ের একটা মেলবন্ধন রয়েছে। রোহিতের যেবার অভিষেক ঘটে সেবার দ্রাবিড় ছিলেন ভারত দলের অধিনায়ক। ঠিক চৌদ্দ বছর পর দ্রাবিড় যখন ফিরলেন জাতীয় দলে কোচ রুপে তখনই গুরু দায়িত্ব পেয়ে গেলেন রোহিত।
ঘটনাটা নিছক এক কাকতালীয় ঘটনা হিসেবেই মেনে নেওয়া যায়। তবে দ্রাবিড়ের জহুরীর চোখের একটু প্রশংসা করা বাঞ্ছনীয়। রোহিতের মধ্যে এমন কোন এক সুপ্ত ঘটনা সেই ২০০৭ সালে দ্রাবিড় নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। হয়ত সেই কারণেই দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বের সময়কালে অভিষিক্ত হয়েছিলেন রোহিত।
কিন্তু শুরুর দিকে রোহিত ছিলেন সাদামাটা ক্রিকেটার। একেবারে গড়পড়তা ধরণের খেলোয়াড়। অভিষেক ম্যাচে ব্যাটিং-এ সুযোগ না পাওয়া রোহিত শুরুর দিকের দশ ওয়ানডে ইনিংসে অবশ্য হাকিয়েছিলেন দুই অর্ধশতক। তারপরও তাঁর সামর্থ্য নিয়ে অনেকেই সেই সময়ে নানারকম প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই প্রশ্নগুলোর কারণ ছিলো পরবর্তী ম্যাচগুলোতে রোহিতের বড় রান তুলতে না পারার ব্যর্থতা।
কালেভদ্রে তিনি দুই একটা অর্ধশতক হাকিয়ে আবার মিলিয়ে যেতেন সময়ের সাথে। রোহিত তাঁর প্রথম অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলে অভিষেকের তিন বছর পর, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ততদিনেও টেস্ট দলে নিজের জায়গা করে নিতে পারেননি টেস্ট দলে। তবে টি-টোয়েন্টি দলে জায়গাটা পেয়ে গিয়েছিলেন সেই ২০০৭ সালেই। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য তিনি টি-টোয়েন্টি সুলভ রান তুলে যাচ্ছিলেন ধারাবাহিকভাবে।
তবে ওইযে তাঁর মধ্যে ছিল কোন এক সুপ্ত প্রতিভা। নিজের মধ্যে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার তীব্র তাড়না থেকেই রোহিত নিজের ব্যাটিয়ের উন্নতি ঘটালেন সময়ের পরিক্রমায়। ধীরে ধীরে বনে গেলেন বিশ্বক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যার কি না রেকর্ড রয়েছে ওয়ানডেতে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাবার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৪ সালে কোলকাতায় করা ২৬৪ রানের ইনিংসটা ক্রিকে ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ৩৩ চারের মারের সেদিন ১৭৩ বলে করেছিলেন সেই রেকর্ড গড়া ব্যক্তিগত রানের পাহাড়।
বর্তমানে সব ফরম্যাট মিলিয়ে রোহিতের শতক ৪১টি। তাছাড়া তিনি নিজের মধ্যে এমন অসাধারণ এক প্রতিভার সঞ্চার ঘটিয়েছেন যে যেকোন ফরম্যাটে যেকোন পরিস্থিতিতে তিনি দলের জয়ে রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। নিজেকে এমন ঢেলে সাজাবার টোটকা হয়ত নিয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকেই।
রোহিতের প্রথম অধিনায়ক রাহুলও তাঁর জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে খানিক দোলাচলের মধ্য দিয়ে পার করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য এক উচ্চতায় বনে গিয়েছিলেন ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের দূর্গ।
রোহিত আবার পেলেন দ্রাবিড়ের সান্নিধ্য। খেলোয়াড় হিসেবে যতটা না রোহিতের ভুলত্রুটি দেখিয়ে দিতে পেরেছিলেন দ্রাবিড় তাঁর থেকে অন্তত কোচ হিসেবে একটু বেশিই পর্যালোচনা করতে পারবেন তিনি। রোহিত শর্মা এখন ভারতের হয়ে সব ফরম্যাটেই নিয়মিত মুখ। দ্রাবিড়ের কার্যকরী টোটকা এবং অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এই দুজনের মেলবন্ধনের ফলাফল যেমন রোহিতের জন্যে হবে উপরকারি তেমনি হবে ভারতের জন্যেও।
দ্রাবিড়ের উপর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের যেমন প্রত্যাশা আকাশচুম্বী এবং তাঁর সাথে সমর্থকরাও প্রত্যাশার ঝুলি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন দ্রাবিড়ের কোচিং ক্যারিয়ারের সাফল্য দেখবার জন্যে। সেই প্রত্যাশার ঝুলিতে রোহিতকে একেবারের অপ্রতিরোধ্য করে তোলার আশাও নিশ্চয়ই রয়েছে। কেননা রোহিতের উন্নতিতে তো আখেরে লাভ ভারতেরই।
একটা তথ্য দিয়ে শেষ করি, রাহুল দ্রাবিড় আর রোহিত শর্মা – এই দু’জনই কেবল ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে প্রথম চারটি সিরিজে জিততে পেরেছেন। তো, ‘কানেকশন’টা তাঁদের সাফল্যতেও আছে। এবার এর দীর্ঘসূত্রিতা চললেই হয়।