প্রফেসরের পাঠশালায় স্বাগতম

তাঁকে বলা হয় ‘প্রফেসর’ – সেটা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক দুই অর্থেই খাটে। শক্ত চেহারা আর ড্রেসিংরুমে মুখে কখনোই কুলুপ আটতে পারেন না বলে তাঁর এই নামকরণ হয়েছে। এই কারণটা নেতিবাচক। আর ইতিবাচক ব্যাপার হল, মোহাম্মদ হাফিজ যাই বলেন – তাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনেন সতীর্থরা। তাই, ‘প্রফেসর’ নামকরণে অবশ্যই হাফিজের পড়াশোনা আর প্রজ্ঞা আর সবাইকে প্রভাবিত করাও বড় একটা কারণ।

তাঁকে বলা হয় ‘প্রফেসর’ – সেটা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক দুই অর্থেই খাটে। শক্ত চেহারা আর ড্রেসিংরুমে মুখে কখনোই কুলুপ আটতে পারেন না বলে তাঁর এই নামকরণ হয়েছে। এই কারণটা নেতিবাচক। আর ইতিবাচক ব্যাপার হল, মোহাম্মদ হাফিজ যাই বলেন – তাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শোনেন সতীর্থরা। তাই, ‘প্রফেসর’ নামকরণে অবশ্যই হাফিজের পড়াশোনা আর প্রজ্ঞা আর সবাইকে প্রভাবিত করাও বড় একটা কারণ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি রান, ২০০’র বেশি উইকেট পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। ক্রিকেটের পাতায় এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা হল মাত্র ১১ জন।

তাদেরই একজন হলেন পাকিস্তানের হাফিজ। স্বয়ং ইমরান খানের নামও এই তালিকায় নাই। তাই, অন্তত ইমরান খানের পর পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে হাফিজের নাম অনায়াসেই নেওয়া যায়।

মোহাম্মদ হাফিজের এই অলরাউন্ডার পরিচয়টা আরও জাঁকজমকের সাথে বলার সুযোগ ছিল। তবে, ব্যাপার হল অবৈধ অ্যাকশনের জন্য বারবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছে হাফিজের বোলিং।

শুধু ব্যাটসম্যান পরিচয়ে কখনো খেলেছেন, কখনোটা টেকনিক্যাল ঘাটতির কারণে সেই সুযোগ পাননি। তাই, সেই ২০০৩ সালে অভিষেকের পরও তার আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা আহামরি নয়।

তবে, বারবারই দলে জায়গা হারানোর পর তিনি সংগ্রাম করে ফিরে এসেছেন, আর বারবারই প্রমাণ করেছেন বয়স যতই হোক তিনি ফুরিয়ে যাননি। তবে, অসংখ্যবার ফিরে এসেও তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য একটা আক্ষেপের নাম।

হাফিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্বর্ণালী সময় আসে ২০১১ সালে। সেই সময় এক বছরে সব ফরম্যাট মিলে মোট ১০টি ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন।

সেবার শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসের পর মাত্র তৃতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডেতে এক হাজার রান ও ৩০ টি উইকেটের মাইল ফলকে পৌঁছান তিনি। সেখান থেকে অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁর যে মান আর মাইল ফলক ছোঁয়া সম্ভব ছিল, সেটা পারেননি হাফিজ।

টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবেও সুনাম ছিল হাফিজের। ২৯ টি ম্যাচ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পাকিস্তানকে, তাতে পাকিস্তান জিতেছে ১৭ টিতে। হেরেছে ১১ টিতে। তিনি টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের অবিসংবাদিত সেরা অধিনায়ক। তিনি ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড় যিনি এই ফরম্যাটে এক হাজার রান ও ৪০ টি উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন।

তিনি একমাত্র পাকিস্তানি অধিনায়ক যিনি টানা তিনটি টি-টোয়েন্টিতে হাফ-সেঞ্চুরি পেয়েছেন। সেটা ২০১২ সালের ঘটনা। এর দু’টি ছিল ভারতের বিপক্ষে, আর একটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

এক সময় হাফিজ ছিলেন ডেল স্টেইনের ‘বানি’। এক পঞ্জিকা বর্ষে প্রোটিয়া এই পেসার ১০ বার সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন এই হাফিজকে।

টেস্টে হাফিজের সর্বোচ্চ স্কোর ২২৪। এর আগেই তিনি দু’বার ১৯০-এর ঘরে আউট হন। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে করেন ১৯৬। এরপর ২০১৪ সালে নিউজিজল্যান্ডের বিপক্ষে আউট হন ১৯৭ রানে। হাফিজ তৃতীয় পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে দু’বার ১৯০-এর ঘরে আউট হন। বাকি দু’জন হলেন – ইউনুস খান ও মোহাম্মদ ইউসুফ।

মোহাম্মদ হাফিজ পাকিস্তান ক্রিকেটের দু’টি যুগের মেলবন্ধন করেছেন। ২০০৩ সালে যখন অভিষেক হয়, দলে তখন ইউনুস খান, শোয়েব আখতার, আব্দুল রাজ্জাক, রশিদ লতিফ কিংবা মিসবাহ উল হকরা ছিলেন।

আজ ইউনুস-মিসবাহ কোচ বনে গিয়ে আবার বিতাড়িতও হয়েছেন, শোয়েবকে নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আলোচনা চলেছে ক’দিন আগেও, রশিদ লতিফ-আব্দুর রাজ্জাকদের এখন শুধু টক-শোতেই দেখা যায়; অথচ খেলোয়াড় হিসেবে হাফিজ টিকে ছিলেন নিজের ৪১ বছর বয়স অবধি, দিব্যি পারফর্মও করে গিয়েছেন। আজকালকার ক্রিকেট দুনিয়ায় এমন নজীর সহজে পাওয়া যায় না!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যতগুলো হয়েছে, তাঁর মধ্যে একটা আসর বাদে সবগুলোই খেলেছেন হাফিজ। যেটা খেলেননি সেটাতে, মানে ২০০৯ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। না, আক্ষেপ নেই হাফিজের। বিদায় বেলায় বরাবরের মত আবারও স্পষ্ট ভাষায় সেটাই জানিয়ে দিয়েছেন।

২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, ২০২০ সালে আবার ফিরে আসেন। কাটান অবিস্মরণীয় একটা সময়। সে বছর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ৮৩ গড় আর ১৫২ স্ট্রাইক রেটে।

৫৫ টি টেস্ট, ২১৮ টি ওয়ানডে আর ১১৯টি টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে সাড়ে ১২ হাজারের ওপর রান আর ৩২টি ম্যাচ সেরার পুরস্কার ও নয়টি সিরিজ সেরার নিয়ে তিনি প্রফেসরের পাঠশালার ইতি টানেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। পাকিস্তান ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে বেশি ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন কেবল তিনজন – শহীদ আফ্রিদি (৪৩), ওয়াসিম আকরাম (৩৯) ও ইনজমাম উল হক (৩৩)।

আর সিরিজ সেরায় তিনি যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ইমরান খান, ইনজামাম ও ওয়াকার ইউনুসের সাথে। যদিও, এই সব কিছুই অতীত, প্রফেসরের পাঠশালায় এখন অনির্দিষ্টকালের ছুটি!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link