বিতর্কের নাম জাভেদ আখতার

শারজায় পেপসি কাপের ফাইনাল টা মাঝে মাঝেই টিভিতে দেখায়। বহুবার দেখা। কিন্তু যতবার দেখি, শচীন টেন্ডুলকারের অদ্ভুতুড়ে সব শট ( যার মধ্যে শেষের দিকে মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচকে মারা একটা সোজা লিফট যেটা ত্রিপলের ছাউনির উপরে গিয়ে পড়েছিল, আমার মতে ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা) দেখতে দেখতেও শেষে গিয়ে যার কথা সবচেয়ে বেশি মাথায় স্ট্রাইক করে, তিনি হলেন আম্পায়ার জাভেদ আখতার। পাকিস্তানি আম্পায়ার।

ওই ত্রিদেশীয় সিরিজে শচীনের দুটো মরুঝড় ইনিংসেই ভুল আউট দিয়েছিলেন। ফাইনালেরটা তো একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝবে যে কোনোদিন এলবিডব্লিউ হয়না। টনি গ্রেগের সেই অমর কমেন্ট্রি – This little man has hit the big man out of the park, what a player!! ( টম মুডি কে মারা ছক্কা) বা This is high in the air!! What a six!! What a six!! ( কাস্প্রউইচ কে মারা সোজা ছয়টা) শুনতে শুনতেই শচীন আউট আর টনি গ্রেগ এর চাঁছাছোলা কমেন্ট – ‘Was it pitching outside leg? Probably yes! Was it going to hit the of stump? No way!! But it’s all over; Sachin Tendulkar is back to the pavilion!’

শুধু শচীন নয়, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকেও অবিশ্বাস্য আউট দেন আখতার। ফাস্ট বোলার মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচ লেগসাইড ওয়াইড বল, গিলি আপিলও করেন নি। ক্যাসপ্রোভিচ একটা হেরে যাওয়া ম্যাচে শেষ চেষ্টা হিসেবে আপিল করে নিজেই অবাক হয়ে যান জাভেদ আখতারকে আঙুল তুলতে দেখে।

আজহার বহুদিন বাদে একটা ম্যাচে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় এনে দিয়েও ফিনিশ করতে না পারার হতাশায় কথা কাঁটাকাঁটি তে জড়িয়ে পড়েন। যদিও তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অজয় জাদেজা আর হৃষিকেশ কানিতকার বাকি সামান্য কিছু রান তুলে ফেলতে কোনো   ভুল করেন নি।

আজকে মনে হয়, ওই দুটো জঘন্য ভুল আউট না হলে ম্যাচটা আরো বড় উচ্চতায় উঠতো কিনা! এই কারণেই আজকে ডিআরএস এত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত দলগুলির কাছে একটা চান্স থাকে আম্পায়ারের চূড়ান্ত ভুল যাতে ম্যাচের রেজাল্ট পাল্টে না দেয় সেটা ঠিক করার।

জাভেদ আখতার ইচ্ছাকৃভাবেই ভুল আউট দিয়েছিলেন কিনা সেটা আজ আর জানার কোনো উপায় নেই। তবে যদি সেটা হিউম্যান এরর হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রায়াশ্চিত্ত তিনি করেছিলেন, পরের বছর ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ভারত বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচে। যে জিতবে সে সুপার সিক্সে যাবে এমন অবস্থায় মরণ-বাঁচন ম্যাচে ভারত আগে ব্যাট করলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি।

প্রথম ম্যাচে ওপেন করেছিলেন শচীন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে, কিন্তু বিশেষ রান পাননি। এরপরে পিতৃবিয়োগ এবং ফিরে এসে কেনিয়ার সঙ্গে চার নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করার পরে গ্রুপ লিগের বাকি সব ম্যাচে চারেই খেলেন। সৌরভ গাঙ্গুলী, সদাগোপন রমেশ, রাহুল দ্রাবিড়, শচীন, আজহার সবাই সিমিং কন্ডিশনে সাবধানী ইনিংস খেলেন এবং দলের রান ২৩২/৮ এ দাঁড়ায়।

নিজেদের ঘরের মাঠে এই টার্গেট ইংল্যান্ডের পক্ষে খুব শক্ত হবে না এমনই মনে হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই অ্যালেক স্টুয়ার্ট আর গ্রায়েম হিক কে দুরন্ত সুইং এ ফিরিয়ে দেন দেবাশিস মহান্তি। এর মত দুদিকেই সুইং করানোর ক্ষমতাসম্পন্ন বোলার ভারত খুব কমই পেয়েছে পরে।

এরপরে নামেন তখনকার ইংল্যান্ড টিমের সবচেয়ে ইন ফর্ম এবং ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান গ্রাহাম থর্প। নাসের হুসেন সেদিন ওপেন করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে থর্প জুটি বাঁধেন। দলের রান ৭০ পার করে সৌরভ গাঙ্গুলির বলে বোল্ড হন নাসের।

থর্প কিন্তু আশা জাগাচ্ছিলেন ম্যাচ জেতানোর। দারুন সব বাউন্ডারি মারছিলেন। বল একটু পুরনো হবার পরে সুইংও তেমন হচ্ছিল না। ভারতকে বহু ম্যাচে ভোগানো ব্যাটসম্যান নিল ফেয়ারব্রাদার সতীর্থ গ্রাহাম থর্প এর সঙ্গে জুটি বাঁধার পরে বৃষ্টিতে সেইদিনের মত ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

পরের দিন খেলা আবার শুরু হয় সেই একই স্কোর থেকে। আস্তে আস্তে যখন দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান দলকে বিপদসীমা পার করবেন বলে ভাবছেন এমন সময় জাভাগাল শ্রীনাথ এর একটা রাউন্ড দা উইকেট বল কোনাকুনি ভাবে থর্পের প্যাডে আছড়ে পড়ে। শ্রীনাথ এর জোরালো আপিলে আঙুল তুলে দেন সেই জাভেদ আখতার। পরে টেলিভিশন রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে বল লেগস্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যেতো।

ওই বলের আগে থর্প আউট হবেন বলে মনে হচ্ছিল না। ফেয়ারব্রাদার ধৈর্যশীল ২৯ করেন ৬২ বলে, কিন্তু বাকি কোনো ব্যাটসম্যান প্রতিরোধ গড়তে পারেন নি। গাঙ্গুলি আরো দুটো উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের খেলার শুরুতে থর্পের সাথে ফেয়ারব্রাদারের জুটিটা জমে গেলে কি হতে পারতো কেউ বলতে পারেনা। ওই একটা সিদ্ধান্ত ভারতের সুপার সিক্সে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত করে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link