এত নো-বল চোখ এড়ায় কি করে!

অ্যাশেজে মহারণ চলছে। গ্যাবা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের ১৩ তম ওভার। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড দুই আদি ক্রিকেটীয় দলের বনেদী ফরম্যাটের লড়াই। ঐতিহাসিক গ্যাবায়। ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার বেন স্টোকস উড়িয়ে দিলেন স্ট্যাম্প। আউট ডেভিড ওয়ার্নার। তবে মাঠে থাকা আম্পায়ার চাইলেন থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য।

সচারাচর এখনকার দিনে যা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আউট হওয়ার পর টিভি আম্পায়ার বোলারের করা বলটি পর্যালোচনা করেন। কোন প্রকার ত্রুটি রয়েছে কিনা। মূলত নো-বল পর্যালোচনা করাই যার মূল লক্ষ্য। একটি উইকেটের মূল্য তো অনেক।

টিভি আম্পায়ারের মূল্যায়নে বেঁচে গেলেন ওয়ার্নার। স্টোকসের করা ১৩ তম ওভারের চতুর্থ বলটি ছিল নো-বল। সেই ওয়ার্নার শেষ অবধি ৯৪ রানের মহা গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন।

পরবর্তীতে অ্যাশেজ সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের পুন:রায় নিরীক্ষণে দেখা মেলে স্টোকস তাঁর পূর্ববর্তী পাঁচ ওভারে নো-বল করেছেন চৌদ্দটি। তার থেকে আশ্চর্যের বিষয় মাঠে থাকা আম্পায়ার মাত্র দুইটি নো-বল ধরতে পেরেছেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদার এক সিরিজে এত ভুল!

অবশ্য মানুষ মাত্রই ভুল! মাঠে থাকা আম্পায়ার যে সব সময় সঠিক হবেন তা ধ্রুব নয়। তাইতো নতুন নতুন সব প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং ক্রিকেটের সাথে সংযুক্তি। তবে এই নো-বলের পসরা সামনে আসার পর জানা গেলো যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটা বলে নো-বল পর্যালোচনা করার কথা সেই প্রযুক্তি বিকল হয়ে গিয়েছিল অ্যাশেজ শুরু হবার আগেই। যার ফলে গ্যাবায় টেস্ট পরিচালিত হচ্ছে পূর্বের নিয়মেই। যেখানে শুধু উইকেট পড়ার পর বোলারের পায়ের গতিবিধি নিরীক্ষণ করবেন টিভি আম্পায়ার।

প্রতিটি বল পর্যালোচনা করার এই প্রযুক্তি আইসিসি প্রথম ব্যবহার করে ২০১৯ সালে। তবে টেস্টে এই প্রযুক্তি প্রথম ব্যবহার করা হয় ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান গেল বছর।

ক্রিকেটে নো-বল একটি চিন্তার কারণ। কেননা নো-বলে একজন ব্যাটর আউট হয়ে যাওয়া কিংবা তাঁর বিপক্ষে একটা ফলাফল দেওয়া ব্যাটিং করা দলটির জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে। ক্রিকেটে এই নো-বলের যথাযথ নিরীক্ষণের অভাব এবং এর ফলে ফলাফলে তাৎপর্য যেন দৃষ্টগোচর হচ্ছে না কারোই। হবার কথাও না। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় ইংল্যান্ডের ট্যুর চলাকালীন সময়ে বেশ ব্যাপক পরিমাণ নো-বলের সিধান্ত দিতে ব্যর্থ হয়। পর্যালোচনা করে জানা যায় একটি বোলিং স্পেলে নো-বল হয়েছিল বারোটি।

পরবর্তীতে ২০১৯-২০ সালে অস্ট্রেলিয়া আতিথিয়েতা দিয়েছিল পাকিস্তানকে। সেই সিরিজ সম্প্রচার করা প্রতিষ্ঠান তাঁদের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখতে পায় দুইটি টেস্ট সেশনে প্রায় ২১ নো-বলের রায় দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। এমতবস্থায় প্রতিবল পরে বোলারদের পায়ের গতিবিধি নিরীক্ষণ যেন অবধারিত এক প্রয়োজনে পরিণত হয়ে গিয়েছে।

আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে কেন্দ্র করে এই ভিডিও নিরীক্ষণের নিয়মকে বৈধতাও দিয়েছে। নিয়মানুসারে থার্ড আম্পায়ার প্রতিটি বলের পর একজন বোলারের বোলিং অ্যাকশনের টিভি সম্প্রচার থেকে তাঁর পায় পপিং ক্রিজ অতিক্রম করছে কিনা সেই নিরীক্ষণ চালিয়ে রায় দিতে পারবেন যদি তা বিধিসম্মত না হয়।

এত আলোচনা ও সমালোচনার শেষে যা বোঝা গেল তা হল – ক্রিকেটে প্রযুক্তির ব্যবহার অব্যাহত থাকুক। অন্তত অ্যাশেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে। এতে বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট হোক নিখাঁদ বিনোদনের অন্যতম সেরা মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link