বেশকিছু দোলাচলে দুলছে ভারত ক্রিকেট দল। টেস্ট দল বর্তমানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিনের পরের দিন ‘বক্সিং ডে’ -তে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে প্রথম টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত।
সেই প্রথম টেস্টের দল নিয়েই খানিক দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মূলত একাদশ কেমন হবে সেই নিয়েই যত দুশ্চিন্তা। কোন রকম ইনজুরি সমস্যা না থাকলে পাঁচ জন খেলোয়াড়ের দলে থাকা প্রায় নিশ্চিত। লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, বিরাট কোহলি, ঋষাভ পান্ত ও জাসপ্রিত বুমরাহ এই পাঁচ জনের একাদশে অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত।
রইলো বাকি ছয় জন। এই ছয়টা স্পট নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে নানা মহলে। কেমন হতে পারে ভারতের একাদশ। কাদের সম্ভাবনা বেশি দলে থাকার সেই দিক নিয়েও আলোচনা চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় কাদের সম্ভাবনা রয়েছে একাদশে সুযোগ পাওয়ার তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
- বোলার কয়জন চার নাকি পাঁচ?
এর আগের বক্সিং ডের পর ভারত এ পর্যন্ত টেস্ট ম্যাচ খেলেছে ১৫টি। প্রতিটি টেস্টেই ভারত দলে সুযোগ পেয়েছিলেন পাঁচজন বোলার। রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিনটন সুন্দর সেই ১৫টি টেস্টের ১৩টিতে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন অল রাউন্ডার কোটায়। দুইজনের কেউ নেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। তাতেই যেন দলে বোলার ক’জন থাকবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
যদি রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ম্যানেজমেন্ট বিবেচনা করে একজন ভাল মানের ব্যাটার হিসেবে তাহলে হয়ত চিন্তার অবসান হয়ে যায়। তাছাড়া সাত নম্বর পজিশনে ব্যাটটা মোটামুটি ভালই চালাতে পারেন, নিজেকে অন্তত প্রমাণ করেছেন ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডে বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে। তাছাড়া এ বছর তাঁর ব্যাটিং গড়ের উন্নতিও হয়েছে। ১৬.৭২ থেকে হয়েছে ২৮.০৮।
অন্যদিকে ব্যাটিং চাহিদা মেটাতে পারেন শার্দুল ঠাকুরও। তাঁর নামের পাশে রয়েছে তিনটি অর্ধশতক। সেক্ষেত্রে বোলার এবং ব্যাটার কম্বিনেশনের ঝামেলা মিটে যায়। যদি টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা করে যে সাত এবং আট নম্বর পজিশনে ব্যাটিং এর কাজটা সামলে নিতে পারবেন শার্দুল ও অশ্বিন।
- আজিঙ্কা রাহানে, হনুমা বিহারি এবং শ্রেয়াস আইয়ার
হনুমা বিহারি এবং শ্রেয়াস আইয়ার এই দুইজন সমানে সমান টক্কর দিচ্ছে দলে নিজেদের জায়গা খুঁজে নিতে। সেক্ষেত্রে দল থেকে হয়ত নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিতে হতে পারে আজিঙ্কা রাহানেকে। কেননা বেশ কিছুদিন ধরেই রাহানে রয়েছেন অফফর্মে। সেক্ষেত্রে সদ্য অভিষেক হওয়া শ্রেয়াস এবং ইতোমধ্যে ভারতের হয়ে ১২টি টেস্ট খেলা হনুমা বিহারির যেকোন একজন সুযোগ পেতে পারেন দলে।
গত বছর মেলবর্নে দলের জয়ে অবদান রাখা শতকের পর রাহানের গড় হয়েছে ১৯.৫৭। ছয়টি ইনিংসে তাঁর রান যথাক্রমে ১৮, ১০,১৪,০,৩৫ এবং ৪। এমন ফর্মে থাকা একজন খেলোয়াড়কে ভারতের মত দলের মিডেল অর্ডারে রেখে দেওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
আবার অভিজ্ঞতার বিবেচনায় তিনি স্থান পেয়েও যেতে পারেন একাদশে। যদি তিনি একাদশে সুযোগ না পান তবে পাঁচ নম্বরে হয়ত শ্রেয়াস কিংবা বিহারির কোন একজনকে দায়িত্ব নিতে হতে পারে এবং ছয় নম্বরে যথারীতি মোটামুটি স্থির থাকা ঋষাভ পান্ত থাকবেন।
- ইশান্ত শর্মা নাকি মোহাম্মদ সিরাজ
ভারতের পেস আক্রমণে একজন সুনিশ্চিত তিনি জাসপ্রিত বুমরাহ। তাছাড়া মোহাম্মদি শামিও মোটামুটি দলে জায়গা পেয়ে যাবেন তা বলে দেওয়া যায়। কারণ তাঁদের বিকল্প এই মুহূর্তে দলে নেই। কিন্তু শঙ্কা বা আলোচনা রয়েছে ইশান্ত শর্মাকে ঘিরে। কেননা তিনিও রয়েছেন আজিঙ্কা রাহানের মতো অফ ফর্মে। সেক্ষেত্রে বোলিং কম্বিনেশন বিবেচনায় হয়ত শার্দুল ঠাকুর এবং মোহাম্মদ সিরাজ দুইজনই দলে জায়গা করে নিতে পারেন কিংবা তাঁদের যে কোন একজন।
২০১৮ থেকে গত বছর অবধি দারুণ ছন্দে থাকা ইশান্তের হঠাৎ করেই কেমন সাদামাটা বোলারে পরিণত হয়েছেন ২০২১ এ এসে। যেখানে এর আগের তিন বছরে তিনি উইকেট নিয়েছেন ২১.৩৭ গড়ে ৮৫টি মাত্র ২৬ ম্যাচ থেকে। সেখানে এবছর তাঁর গড় ৩২.৭১ এবং আট টেস্টে উইকেট সংখ্যা মাত্র ১৪টি।
অন্যদিকে মোহাম্মদ সিরাজ যিনি কিনা মাত্র দশ টেস্ট খেলেই অভিজ্ঞ ইশান্তের সাথে একাদশে জায়গা পাবার লড়াইয়ে নেমে গেছেন নিজের ভাল পারফর্মেন্সের ফলশ্রুতিতে। কিন্তু বিরুপ কন্ডিশনে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতে চাইবে টিম ইন্ডিয়া নিঃসন্দেহে। সেক্ষেত্রে অনুশীলনে কঠোর নজড় থাকতে পারে ইশান্তের উপর।
এসকল কিছুই সম্ভাবনা। অনেক কিছুই ঘটতে পারে এখনো তো টেস্ট শুরু হতে বেশ ক’দিন বাকি। এর মধ্যে ইনজুরি কিংবা অন্য নানান কারণে চিন্তার বিষয়বস্তুতে আসতে পারে পরিবর্তন। শেষমেশ কোন একাদশ নিয়ে ভারত খেলতে নামে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে সেটা সময় বলে দেবে।