তামাশা!
নিজের ক্যারিয়ারটা স্রেফ তামাশায় পরিণত হয়েছিলো। লোকেরা তাঁর বোলিং গড় নিয়ে ঠাট্টা করতো। লোকেরা বলতো, ব্র্যাডম্যান গড়ের বোলার। লোকেরা তার অস্তিত্বকেই উড়িয়ে দিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো, রূপকথার গল্পটা বড় নিষ্ঠুর ভাবে শেষ হতে চলেছে।
শেষ অধ্যায়গুলোতে কী লেখা আছে, সে তো অজানা।
তবে একটা কথা নিশ্চিন্তে বলা যায়, তিনি তামাশা হতে আসেননি। নিজে হাতে নিজের গড়ের কাব্য নতুন করে লিখেছেন। এই বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূরের নিউজিল্যান্ডের এক মাঠে দাড়িয়ে দফায় দফায় স্যালুট দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি তামাশা হতে আসেননি। তিনি হারতে আসেননি। আরেকটা স্যালুট দিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, সৈনিকেরা হারতে জানে না।
হ্যাঁ, এবাদত হোসেন হারিয়ে যাননি।
এবাদতকে নিয়ে লেখার একটা বড় সমস্যা হলো, কোন গল্পটা আমরা আগে বলবো! এবাদত মানেই রূপকথার হরেক পর্বের গল্প। সিলেটের ছেলে এবাদত ছিলেন বিমানবাহিনীর ভলিবল খেলোয়াড়। বাংলাদেশে এরকম বাহিনীগুলোর অনেক ভলিবল, হকি খেলোয়াড় আছেন। তাদের নিদারুণ পরিশ্রমের পরও তাঁদের নিয়ে কাব্য লেখা হয় না।
এবাদতের জীবনও হয়তো এমন নিস্তরঙ্গ ভাবে কেটে যেত। কিন্তু এবাদতের স্বপ্নে ছিলো গতির ঝড়। ব্যারাকে শুয়ে শুয়ে তিনি ব্রেট লি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্নে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ফাস্ট বল করার দৃশ্য দেখতেন। কিন্তু বিমানবাহিনীর একজন ভলিবল খেলোয়াড়ের জন্য স্বপ্নটা একটু অবাস্তব নয় কী!
এবাদত নিজেই মাঠে নামলেন স্বপ্নটা বাস্তব করার জন্য। ২০১৬ সালে রবি পেসার হান্টে অংশ নিলেন। এখানেও একটা টুইস্ট আছে। নিজের জন্মস্থান সিলেট থেকে নয়; ফরিদপুর থেকে অংশ নিলেন পেসার হান্টে। আর সবাইকে তাজ্জব করে দেশসেরা তিন গতিশীল বোলারের একজন হলেন।
এরপর দ্রুত গল্পটা রূপকথার পথ ধরে এগোতে থাকলো। বিসিবির ক্যাম্পে তাকে দেখে মুগ্ধ হলেন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ কোচ হিসেবে আসা আকিব জাভেদ। তিনি কিছু টিপস দিলেন। এরপর দ্রুত তার সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে গেলো।
ডাক পেলেন বিপিএলে। তবে আসল রূপটা দেখালেন বিসিএলে। এক মৌসুমে ২১ উইকেট তুলে নিয়ে পরিচিত নাম হয়ে উঠলেন। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে এক ম্যাচে নিলেন ১০ উইকেট। তবে ভাগ্যটা খুললো পরের বিপিএলে।
সিলেট সিক্সার্সের হয়ে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ১৭ রানে ৪ উইকেট তুলে নিলেন। এই ম্যাচটা সব দিক থেকেই তার ভাগ্য খুলে দিলো। এই ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়লেন তাসকিন আহমেদ। আর তাসকিনের বদলে টেস্ট দলে ডাক পেলেন এবাদত।
কিন্তু এরপর অ্যান্টি ক্লাইমেক্সের শুরু।
টেস্টে শুরু করলেন বড় ম্লানভাবে। ক্যারিয়ারটা হাস্যকর হয়ে উঠলো। ভারতের বিপক্ষে কলকাতায়, ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর থেকে আরও ম্লান, আরও ম্লান। শেষ পর্যন্ত এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের আগে তার বোলিং গড় দাড়িয়েছিলো ৮১.৫৪। কমপক্ষে ১০টি টেস্ট উইকেট নিয়েছেন, এমন বোলারদের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ গড়।
এই নিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি এবাদতকে। অবশেষে এবাদত ঘুরে দাড়ালেন। ঘুরে দাড়ালো বাংলাদেশের বায়ুসেনা।
হ্যাঁ, এবাদতকে সতীর্থরা বায়ুসেনা বলে ডাকেন। এবাদতও উইকেট নিয়ে স্যালুট দিয়ে নিজের পরিচয়টা জানান দেন। এমন সেনা কী হারতে পারে?