দেরিতে ফোটা সুগন্ধী ফুল

খেলাধুলার জগতে বহুল প্রচলিত শব্দ যুগল ‘লেট ব্লুমার’। যার সার্থক উদাহরণ হলেন রঙ্গনা হেরাথ। যে ফুল দেরিতে ফোটে, তার সুঘ্রাণ যে কতটা তীব্র হতে পারে, সেটা হেরাথকে দেখলে বোঝা যায়। অন্যরা যে বয়সে শেষের ডাক শুনতে পান সেই বয়সে হেরাথের মত কেউ কেউ খুঁজে পান নবজীবনের দিশা। যার শুরুর গল্পটা আক্ষেপ আর অপূর্ণতার হলেও শেষটা প্রাপ্তি আর অর্জনে ভরপুর।

পুরো নাম হেরাথ মুদিয়ানসেলাগে রঙ্গনা কীর্তি বান্দারা হেরাথ। না ভুল পড়েন নি, নামের প্রথমেও হেরাথ, শেষেও হেরাথ! টেস্ট অভিষেক সেই ১৯৯৯ সালে। ক্যারিয়ারের অর্ধেকের বেশি সময় তিনি ছিলেন স্পিন জাদুকর মুত্তিয়া মুরালিধরনের ছায়া হয়ে। সত্যি বলতে ২০০৯-১০ সালের আগে হেরাথকে সেভাবে কেউ চিনতও না। জাতীয় দলে প্রায় সময়ই থাকতেন উপেক্ষিত, খেলার সুযোগ মিলত কালেভদ্রে। তবে মুরালির বিদায়ের পর যেদিন থেকে তিনি দলের স্পিন আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নিলেন, সেদিন থেকেই তাঁর ক্যারিয়ার যেন পুনর্জন্ম নিল। অসামান্য দক্ষতায় জেতাতে শুরু করলেন ম্যাচের পর ম্যাচ, সিরিজের পর সিরিজ। মেতে উঠলেন রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায়। নিজেকে নিয়ে গেলেন এক অনন্য উচ্চতায়।

মুরালি-উত্তর যুগের হেরাথ আর আগের হেরাথের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছি। ২০১০ সালের জুলাইয়ে মুরালির অবসরের পর টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া স্পিনারের নাম রঙ্গনা হেরাথ! মুরালির অবসরের আগে ২২ টেস্টে হেরাথের ছিল মাত্র ৭১ উইকেট, ইনিংসে ৫ উইকেট ছিল ৪ বার।

আর মুরালির অবসরের পর ৭১ টেস্টে তাঁর শিকার ৩৬২ উইকেট! ৫ উইকেট ৩০ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ৯ বার!

ক্যারিয়ারের প্রথম ২২ ম্যাচে যেখানে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মাত্র ১ বার, সেখানে পরের ৭১ ম্যাচের ১০টিতেই হয়েছেন ম্যাচসেরা; ৫ বার হয়েছেন সিরিজসেরা! মুরালিধরনের পর হেরাথই যে শ্রীলংকার এক নম্বর বোলার এ নিয়ে দ্বিমত করার কোন সুযোগই রাখেন নি তিনি।

হেরাথকে মনে করা হয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফিঙ্গার স্পিনার। প্রতিভা নয়, হেরাথের সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, শৃঙ্খলা এবং আত্মনিবেদন। একজন আদর্শ বাঁহাতি স্পিনার হওয়ার সব উপকরণই ছিল তাঁর মধ্যে। ফ্লাইট-লুপের মুন্সিয়ানা, লাইন-লেন্থের নিয়ন্ত্রণ, স্পিড এবং অ্যাঙ্গেলের সুক্ষ্ম বৈচিত্র্য – কী ছিল না বলুন! পাশাপাশি ছিল ন্যাচারাল ভ্যারিয়েশন আর্ম বল আর ‘মিস্টেরিয়াস’ ক্যারম বল। তবে হেরাথের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা ছিল অ্যাকুরেসি, বুদ্ধিমত্তা আর ব্যাটসম্যানের মাইন্ড রিড করতে পারার দক্ষতা। লম্বা স্পেলে ওভারের পর ওভার একটানা বোলিং করে যেতে পারতেন। সহজে ক্লান্ত হতেন না।

উইজডেনের ভাষায়, ‘His unrelenting accuracy, and his ability to subtly vary his pace and flight have made him a potent force even overseas, where conditions don’t always favour spin bowling.’

শ্রীলঙ্কার হয়ে ৯৩ টি টেস্ট, ৭১ টি ওয়ানডে এবং ১৭ টি কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন হেরাথ। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তাঁর রয়েছে পাঁচশ’র বেশি উইকেট এবং দুই হাজারের কাছাকাছি রান। টেস্টে ব্যাট হাতে করেছেন তিনটি হাফ সেঞ্চুরি।

টেস্টে মাত্র ২৮.০৭ গড়ে হেরাথের শিকার ৪৩৩ উইকেট। সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের ১০ম সর্বোচ্চ এবং নিজ দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার তিনি। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন ৩৪ বার; ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন নয় বার।

দেখে নিই হেরাথের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হাইলাইটস।

  • ১৯৯৯-২০০৮

১৯৯৯ সালে গলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরাথের টেস্ট অভিষেক। অভিষেকে তাঁর প্রাপ্তি ছিল ৯৭ রান খরচায় ৪ উইকেট। প্রথম শিকার রিকি পন্টিং।

২০০৪ সালে ওয়ানডে অভিষেক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। কোন উইকেট না পেলেও ১০ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছিলেন মাত্র ৩৭।

১৯৯৯-২০০৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৪টি টেস্ট খেলার সুযোগ পান হেরাথ। এই ১৪ টেস্টের পরিসংখ্যান নিতান্তই সাদামাটা। প্রায় ৪০ গড়ে পেয়েছিলেন মাত্র ৩৬ উইকেট!

  • ২০০৯

২০০৯ সালের জুলাই। মুরালির চোটে একরকম  অপ্রত্যাশিতভাবেই হেরাথ ডাক পেয়ে গেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে। আর প্রথম সুযোগেই বাজিমাত! গল টেস্টে দলকে জেতালেন ১৫ রানে ৪ উইকেটের বিধ্বংসী এক স্পেলে। চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ১৬৮। হেরাথের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ৫০ রানে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক গল টেস্টই ছিল হেরাথের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। গল টেস্টের সাফল্য হেরাথের মৃতপ্রায় ক্যারিয়ারে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল।

এরপর কলম্বোর পি সারা ওভালে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত নিলেন ৫ উইকেট। তিন ম্যাচের সিরিজে মাত্র ২৬ গড়ে তুলে নিলেন ১৭ উইকেট। তার পরের মাসেই কলম্বো টেস্টে ৮ উইকেট নিয়ে জেতালেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

২০০৯ সালকে বলা যেতে পারে হেরাথের প্রত্যাবর্তনের বছর। চারটা ‘ফাইভ-ফার’সহ উইকেট পেয়েছিলেন ৩৪টা।

  • ২০১০

২০১০ সালের জুলাইতে গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১০ উইকেটের এক অবিস্মরণীয় জয় পায় শ্রীলঙ্কা। বল হাতে মাত্র ২ উইকেট পেলেও হেরাথের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল ব্যাট হাতে। আটে নেমে খেলেছিলেন অপরাজিত ৮০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

  • ২০১১

২০১১ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরাথের টি-টোয়েন্টি অভিষেক, ভেন্যু ছিল পাল্লেকেলে। ৩ ওভার বোলিং করে মাত্র ১১ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন এক উইকেট।

একই বছর ডিসেম্বরে ইতিহাসে প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। ডারবানের কিংসমিডে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ২০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।

  • ২০১২

২০১২ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ১০ উইকেট শিকার করেন হেরাথ। গল টেস্টে ১২ উইকেট (৬/৭৪ ও ৬/৯৭) নিয়ে হন ম্যাচসেরা। দুই টেস্টের সিরিজে মাত্র ১৭.৯৫ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়ে জিতে নেন সিরিজসেরার পুরস্কার।

এরপর নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে ৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ মাত্র ১৩.৯০ গড়ে তুলে নেন ২০ উইকেট!

২০১২ সালকে বলা যায় হেরাথের ক্যারিয়ারের সেরা বছর। ৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট ও দুইবার ম্যাচে ১০ উইকেটসহ মাত্র ২৩.৬১ গড়ে নিয়েছিলেন ৬০ উইকেট।

  • ২০১৩

২০১৩ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে কলম্বো টেস্ট জয়ের নায়ক ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। ক্ল্যাসিক বাঁহাতি স্পিনের অনুপম প্রদর্শনী দেখিয়ে নিজের ঝুলিতে পুরেছিলেন এক ডজন উইকেট (৫/৬৮ ও ৭/৮৯)।

জুলাইতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং স্পেলটা করেছিলেন ভারতের বিপক্ষে। ১০ ওভার বল করে মাত্র ২০ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় অধিনায়ক ধোনির বীরত্বে মাত্র ১ উইকেটে হেরেছিল শ্রীলঙ্কা!

  • ২০১৪

২০১৪ সালের মার্চে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রঙ্গনা হেরাথ। ৫ উইকেটের সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে দুটো রান আউটও করেছিলেন তিনি।

সেদিন মাত্র ২১ বলের জাদুকরী এক স্পেলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন কিউইদের টপ এবং মিডল অর্ডার। ১২০ রানের ‘সহজ’ টার্গেট চেজ করতে গিয়ে কিউইরা অলআউট হয়েছিল ৬০ রানে!

নিঃসন্দেহে এটি ছিল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে হেরাথের সেরা সাফল্য। পাশাপাশি দেশের হয়ে টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারাটাও ছিল বিশেষ কিছু।

সে বছর জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৬ বছর পর টেস্ট সিরিজ জয়লাভ (১-০) করে শ্রীলঙ্কা। যেখানে হেরাথের অবদান ছিল ব্যাট হাতে ৬৫ রান এবং বল হাতে ৮ উইকেট।

আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে মাত্র ১৫.১৩ গড়ে হেরাথের শিকার ২৩ উইকেট! দুটি ম্যাচেই জয়লাভ করেছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা।

  • ২০১৫

২০১৫ সালের আগস্টে ভারতের বিপক্ষে ‘অভাবনীয়’ এক জয়ের অন্যতম প্রধান কারিগর ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। গল টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে হেরাথ একাই নেন ৭ উইকেট!

১৭৫ রানের মামুলি পুঁজিকে সেদিন রীতিমতো ‘এভারেস্ট’ বানিয়ে ছেড়েছিলেন হেরাথ। তাঁর স্পিন ফাঁদে ধরাশায়ী হয়েছিলেন যথাক্রমে রাহুল, রোহিত, রাহানে, ঋদ্ধিমান, হরভজন, অশ্বিন এবং ইশান্ত।

হেরাথের ৪৮ রানে ৭ উইকেট ভারতের বিপক্ষে যে কোন বাঁহাতি স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার। ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের হেডলি ভেরিটির ৭/৪৯ ছিল আগের সেরা।

অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে মাত্র ১৬.১৩ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়ে আরও একবার সিরিজ সেরা রঙ্গনা হেরাথ।

  • ২০১৬

২০১৬ সালের আগস্টে তৎকালীন টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের ১ নম্বর দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইতিহাসে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ জয়ের (৩-০) গৌরব অর্জন করে শ্রীলঙ্কা। মাত্র ১২.৭৫ গড়ে ২৮ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা যথারীতি রঙ্গনা হেরাথ।

গল টেস্টে মাত্র ‘দ্বিতীয়’ শ্রীলঙ্কান হিসেবে (প্রথমজন নুয়ান জয়সা) হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েন হেরাথ। পর পর তিন বলে ফিরিয়ে দেন অ্যাডাম ভোজেস, পিটার নেভিল আর মিচেল স্টার্ককে। ১৮৯২ সালে জনি ব্রিগসের পর টেস্ট ইতিহাসের মাত্র ‘দ্বিতীয়’ বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তিনি।

অক্টোবর-নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সফরের দুটি টেস্ট ম্যাচে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব করেছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। বল হাতে মাত্র ১৫.১১ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিরিজ জয়েও।

  • ২০১৭

২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন হেরাথ। ১-১ এ ড্র হওয়া সিরিজের সফলতম বোলারও (১৮.০ গড়ে ১৬ উইকেট) ছিলেন হেরাথ।

উল্লেখ্য, প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে অধিনায়কত্বের প্রথম তিন টেস্টেই জয় পেয়েছিলেন তিনি।

জুলাইতে কলম্বোর প্রেমাদাসায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের ‘ম্যাচ সেরা’ হেরাথের শিকার ছিল ১১ উইকেট।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইউএই সফরে আরও একবার হেরাথের স্পিন বিষে নীল হয়েছিল পাকিস্তান। মাত্র ১৭.৩১ গড়ে ১৬ উইকেট নিয়ে যথারীতি সিরিজসেরা হয়েছিলেন হেরাথ।

২রা অক্টোবর, ইতিহাসের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন রঙ্গনা হেরাথ।

হেরাথের বিষাক্ত বোলিংয়ে (২১.৪ ওভার, ৫ মেডেন, ৪৩ রানে ৬ উইকেট) আবুধাবি টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ১৩৪ রানের পুঁজি ডিফেন্ড করে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।

  • ২০১৮

২০১৮ সালের জুলাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ১৭.২৫ গড়ে ১২ উইকেট নিয়ে দলের সিরিজ জয়ে (২-০) অগ্রণী ভূমিকা রাখেন হেরাথ।

২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের বিদায়ী টেস্টে ৩ উইকেট নেন হেরাথ, ভেন্যু ছিল গল। ক্যারিয়ারের শুরু যেখানে, শেষটাও ঠিক সেখানে! কী অদ্ভুত মিল, তাই না?

প্রথম ইনিংসে ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটের উইকেটটি ছিল ‘গলে’ হেরাথের শততম টেস্ট উইকেট। এর আগে নির্দিষ্ট কোন ভেন্যুতে ১০০ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব ছিল শুধু মুত্তিয়া মুরালিধরন (কলম্বো, ক্যান্ডি, গল) আর জিমি অ্যান্ডারসনের (লর্ডস)। ‘তৃতীয়’ ক্রিকেটার হিসেবে অভিজাত এই ক্লাবে যোগ দিলেন হেরাথ।

বিদায়ের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হেরাথ অসংখ্য রেকর্ডে নাম তুলেছেন। বাঁ-হাতি স্পিনারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ড্যানিয়েল ভেটোরি (৩৬২)।

ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি বোলার রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)। ৪১৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ওয়াসিম আকরাম। টেস্টে বাঁহাতি বোলার হিসেবে সেরা বোলিং ফিগারের (৯/১২৭) মালিক রঙ্গনা হেরাথ। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে এই কীর্তি গড়েন তিনি।

টেস্টে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করতে হেরাথের লেগেছে মাত্র ৮৪ টেস্ট। তাঁর চেয়ে কম টেস্ট লেগেছে কেবল দুজনের; ডেল স্টেইন (৮০) আর মুরালিধরন (৭২)।

৯৩ টেস্টে ৩৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন হেরাথ যা বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাঁর চেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব রয়েছে মাত্র ৪ জনের। অনিল কুম্বলে (১৩২ টেস্টে ৩৫ বার),স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (৮৬ টেস্টে ৩৬ বার), শেন ওয়ার্ন (১৪৫ টেস্টে ৩৭ বার) ও মুত্তিয়া মুরালিধরন (১৩৩ টেস্টে ৬৭ বার)।

টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ১০ উইকেট পাওয়া বোলারদের তালিকায় হেরাথের অবস্থান স্যার রিচার্ড হ্যাডলির (৯ বার) সাথে যুগ্মভাবে ‘তৃতীয়’। যথাক্রমে এক ও দুই নম্বরে আছেন মুরালিধরন (২২ বার) এবং ওয়ার্ন (১০ বার)।

৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে অন্তত একবার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করা বোলার আছেন ৪ জন। তাঁরা হলেন যথাক্রমে- মুত্তিয়া মুরালিধরন, ডেল স্টেইন, রঙ্গনা হেরাথ এবং সাকিব আল হাসান।

টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক শেন ওয়ার্ন (১৩৮)। দুই নম্বরে থাকা রঙ্গনা হেরাথের শিকার ১১৫ উইকেট। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেয়া বোলারের নাম রঙ্গনা হেরাথ (১২ বার)! যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ার্ন ও মুরালি নিয়েছেন ৭ বার করে।

দুই টেস্টের সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি রঙ্গনা হেরাথের দখলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৪ সালে দুই টেস্টের সিরিজে ২৩ উইকেট নিয়ে ভেঙেছিলেন আরেক স্বদেশীর রেকর্ড। এর আগে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মুরালি পেয়েছিলেন ২২ উইকেট।

টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক করা বোলারের নাম রঙ্গনা হেরাথ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার দিন তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর ১৩৯ দিন।

বয়স ৩৫ পূর্ণ হওয়ার আগেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল কত কত ক্রিকেটারের! অথচ ৩৫ পেরোনোর পর টেস্টে সবচেয়ে বেশি ২৩০ উইকেটের মালিক রঙ্গনা হেরাথ। ইতিহাসে আর কোন বোলার যেখানে ২০০ উইকেটই নিতে পারে নি! ১৯২ উইকেট নিয়ে হেরাথের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ল্যারি গ্রিমেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link