‘কার্লোস ব্রাথওয়েট, রিমেম্বার দ্য নেইম’ কিংবা ‘লিটন দাস ইজ পেইন্টিং আ মোনালিসা হিয়ার’ এর মত কালজয়ী ধারাভাষ্য লাইনের প্রবক্তা ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপকে কে না চেনে? কিন্তু ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপকে ক’জন জানেন?
১৯৬৭ সালের ২৪ অক্টোবর, ত্রিনিদাদের রাজধানী পোর্ট অব স্পেনের বেলমন্টে জন্মগ্রহণ করেন সাবেক এই স্পিডস্টার।
আশির দশকের শেষভাগে হোল্ডিং-গার্নারদের বিদায়ের পর উইন্ডিজের নবগঠিত পেস কোয়ার্টেটের নবীনতম সদস্য রূপেই বিশপের আবির্ভাব। কোয়ার্টেটের বাকি সদস্যরা ছিলেন অভিজ্ঞ ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি অ্যাম্ব্রোস আর কোর্টনি ওয়ালশ। এদের মধ্যে সবচাইতে দ্রুততম ছিলেন ইয়ান বিশপ।
বিশপের উচ্চতা ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি। এই উচ্চতার কারণেই তাঁকে মনে করা হতো ‘বিগ বার্ড’ জোয়েল গার্নারের উত্তরসূরি।
১৯৮৮ সালে অভিষেকের পর থেকেই ভয়ানক গতি, বাউন্স আর আউটসুইং দিয়ে ক্রমাগত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন বিশপ। ক্যারিবীয়দের ফাস্ট বোলিং লিগ্যাসির অব্যাহত ধারায় প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ বিশপকে তাই পরবর্তী ‘গ্রেট’ হিসেবেই ধরে নিয়েছিলেন সবাই।
মাত্র ২১ টেস্টেই তিনি শততম উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছে যান। সেখান থেকে গল্পটা যেমন হওয়ার কথা ছিল, তা আদৌ হয়নি। পিঠের চোট সেই অমিত সম্ভাবনাকে আর পূর্ণতা পেতে দেয়নি। ১৯৯১ সালে মারাত্মক ব্যাক ইনজুরিতে পড়ে তার গোটা ক্যারিয়ারটাই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। বছরখানেক বাদে অ্যাকশন বদলে আবার ফেরত আসলেও আগের সেই গতি, ছন্দ কোনটাই আর ধরে রাখতে পারেন নি।
১৯৯৩ সালে আবারও পিঠের চোটে পড়ে মাঠের বাইরে চলে যান দুই বছরের জন্য। ১৯৯৫ তে ফিরে এলেও পুরনো বিশপকে আর কোনদিনই খুঁজে পাওয়া যায় নি। ১৯৯৮ সালে সবশেষ টেস্ট খেললেও বিশপের ক্যারিয়ার কার্যত অনেক আগেই শেষ। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৯ টেস্টে ছয়বার পাঁচ উইকেট পান, কিন্তু এরপর ২৪ টি টেস্ট পর গিয়ে সপ্তমবারের মত পাঁচ উইকেটের দেখা পান।
বিশপের শুরুটা যেমন আনন্দের, শেষটা তেমনি হতাশার। টেস্টে ২৪.২৭ গড়ে ১৬১ আর ওয়ানডেতে ২৬.৫ গড়ে ১১৮ উইকেটের পরিসংখ্যানে তাই প্রাপ্তির আনন্দের চেয়ে অপ্রাপ্তির হাহাকারই বেশি।
এবারে ‘ধারাভাষ্যকার’ ইয়ান বিশপকে নিয়ে কিছু বলা যাক। আমার কাছে উনি অত্যন্ত সেন্সিবল একজন কমেন্টেটর। কমেন্ট্রি বক্সে বিশপের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি আর কুল, কাম প্রেজেন্সটাই সব থেকে ভাল লাগে। হাই ড্রামা সিচুয়েশনেও মাথা ঠান্ডা রাখতে জানেন, কখনও ওভার এক্সাইটেড হতে দেখা যায় না। শ্রুতিমধুর ক্যারিবীয় একসেন্টে অ্যনালাইসিসটাও করেন বেশ চমৎকার। বলা যায় খেলোয়াড়ী জীবনের আক্ষেপটা ধারাভাষ্য কক্ষে বসেই মুছে ফেলছেন তিনি।