এই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধরী স্টেডিয়ামের মাটিতেই সেই ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। সেটাও ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পরপরই আবার বাংলাদেশ সফরে আসছে আফগানিস্তান। তাঁর আগে ব্যাট হাতে নিজের প্রস্তুতিটা সেড়ে নিলেন সাকিব আল হাসান।
এরমাঝেও সাকিব ব্যাট হাতে বেশ কিছু কার্যকর ইনিংস খেলেছেন। বাংলাদেশকে অনেক ম্যাচও জিতিয়েছেন। তবে ৪৫ ইনিংস ধরে আজকের দিনটার অপেক্ষায় ছিলেন সাকিব। এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল ফরচুন বরিশাল, অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটও।
বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় তিন বছর ধরে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছেন না। এছাড়া সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না সাকিবের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাট হাতে সাকিবের ধার যেন দিন দিন কমছিল।
শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও ব্যাট হাতে বলার মত পারফর্মেন্স নেই। বিশেষ করে গতবছর আইপিএলে ব্যাট হাতে একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৪২ ও ৪৬ রানের ইনিংস খেলেছেন তবে সেগুলো পূর্ণতা পাচ্ছিলনা।
তারচেয়েও বড় কথা সাকিবের ইনিংস গুলো ঠিক সাকিব সুলভ ছিল না। ম্যাচের পরিস্থিতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মত করে ব্যাট চালানো সাকিবকে মিস করছিল বাংলাদেশ। যদিও বল হাতে সবসময়ই দলকে সার্ভিস দিয়েছেন। কখনো উইকেট নিয়ে, কখনো কিপ্টে বোলিং করে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ তৈরি করেছেন।
ফলে ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭০ রানের অপরাজিত সেই ইনিংসটাই ব্যাটার সাকিবের শেষ বিজ্ঞাপন হয়েছিল। শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটেও মাঝে খারাপ সময় কাটিয়েছেন ব্যাট হাতে। যদিও ওয়ানডে ফরম্যাটে গতবছর ভালো ভাবেই ফিরে এসেছিলেন।
তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাটসম্যান সাকিবের প্রত্যাবর্তনের একটা অপেক্ষা ছিল। সেই যাত্রাটা অবশ্য শুরু করেছেন এই বিপিএলেই। এমনকিন গতকালও খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৪১ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন। সেটিও দলের জন্য দারুণ কার্যকর ছিল। তবে সেটাকে হাফ সেঞ্চুরিতে নিয়ে যেতে না পারার একটা আক্ষেপ ছিল।
আক্ষেপের সাথে একটা অপেক্ষাও ছিল। সাকিব আল হাসান যে এর মাঝে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোন কার্যকর ইনিংস খেলেননি সেটা বলা ঠিক হবেনা। ছোট ফরম্যাটে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট ইনিংস খেলেছেন সাকিব। তবে বড় ইনিংস সবসময়ই ব্যাটসম্যানকে একটা আত্মবিশ্বাস যোগায়। আর অপেক্ষাটা অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় এই হাফ সেঞ্চুরিতো অবশ্যই অনেক বেশি সস্তিরও।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সময়ের হিসেবে ঠিক ৩০ মাস পর ৫০ রানের ইনিংস খেললেন। সবমিলিয়ে এরমাঝে ইনিংস খেলেছেন ৪৫ টি। ৪৫ ইনিংসের অপেক্ষার পর অবশেষে এই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। সাকিবও ব্যাট হাতে তাঁর চেনা রূপে ফেরলেন। সবচেয়ে বড় কথা অনেকদিন পর সাকিবের ব্যাটিংটায় তাঁর নিজস্বতা খুঁজে পাওয়া গেল।
ওদিকে বল হাতে সাকিব বরাবরই যেকোন দলের নির্ভরতা। এবারো ফরচুন বরিশালের হয়ে নিয়মিত সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এবার ব্যাট হাতেও সাকিবকে পেতে শুরু করেছে বরিশাল। ব্যাট হাতে সাকিবের এই ফেরা বরিশালের জন্য যতটা স্বস্তির ততটাই স্বস্তির বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যেও।