সব বন্ধুত্বের শুরুটা খুব মধুর হয় না। সব সম্পর্কের শুরুটা ভাল হয় না, স্মরণীয় হয় না। এই যেমন ‘আমি যখন তাঁকে প্রথম দেখেছিলাম তখন তাঁকে বেশ দাম্ভিক এক তরুণ ভেবেছিলাম’ – এমন অভিমত প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স। ভারত ক্রিকেট দলের সদ্য সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির ব্যাপারে প্রথম দেখায় ঠিক এমনটাই নাকি মনে হয়েছিলো তাঁর।
এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং বিরাট কোহলি ক্রিকেটের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র। এরা দুইজনই ক্রিকেটকে আলোকিত করেছেন নিজদের দূর্দান্ত ব্যাটিং দিয়ে। একজন খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে, আরেকজন এখনও খেলছেন ভারতের হয়ে। এই দুই ভিন্ন মহাদেশের দুই কিংবদন্তির মাঝে রয়েছে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক অবশ্য গড়তে ষোল আনা ভূমিকা রেখেছিলো ভারতের ফ্রাঞ্চাইজ ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)।
২০১১ সালে মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি খ্যাত এবি ডি ভিলিয়ার্স যুক্ত হয়েছিলেন আইপিএলের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুতে। সেই সময়ে ব্যাঙ্গালুরু ফ্রাঞ্চাইজিটির অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিরাট কোহলি। দীর্ঘ প্রায় এক দশক এই দুই খেলোয়াড় খেলেছেন এক সাথে। বছরের একটা লম্বা সময় একসাথে সময় কাটানোয় তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
সেই সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করতে গিয়েই ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে ভালভাবে আলাপ হওয়ার আগেই আমাদের বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে খেলার মাঠে। সে আমাকে চিনতো আমি তাঁকে চিনতাম। আমি আগেও বলেছি একেবারে শুরুর দিকে আমি যখন তাঁকে প্রথম দেখেছিলাম তখন তাঁকে বেশ দাম্ভিক এক তরুণ ভেবেছিলাম।’
উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে এমন খানিক দাম্ভিকতা, দেমাক স্বাভাবিক বলেই মনে হয় ডি ভিলিয়ার্সের কাছে। তিনি বলেন, ‘যদিও আমি দেখেছি সে তাঁর সম্মান ও আদর্শের জায়গায় ঠিকঠাক। তবুও আমার মনে হয়েছে তাঁর ভেতর দেমাকি ভাবটা রয়েছে। আমি তাঁর প্রতি আমার ধারণাটা ধরে রাখিনি। কারণ সেই বয়সে দেমাক খানিক প্রয়োজন এবং সেটা খুব স্বাভাবিক।’
বিরাটের প্রতি এমন মনোভাব থাকা সত্ত্বেও ভিলিয়ার্স পরবর্তী সময়ে হয়েছেন বিরাটের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। ভিলিয়ার্স তাঁদের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে আরো বলেন, ‘আমি ব্যাঙ্গালুরু পৌঁছানোর পর থেকেই আমাদের সম্পর্ক শুরু হয়৷ আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শুরুটা হয় ২০১১ সালে যখন আমি প্রথম রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলা শুরহ করি। সম্ভবত সে সময়েই আমরা ভাল বন্ধু হয়ে যাই। আমি খুব একটা যোগাযোগ রক্ষা করার মতো মানুষ নই। তবুও কি করে যেন বিরাটের সাথে আমার যোগাযোগটা নিয়মিত হতে লাগলো।’
ভারতের আইপিএল ছাপিয়ে বিরাট আর ভিলিয়ার্সের বন্ধুত্ব দেখেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। নিজেদের মধ্যে দারুণ এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন বিরাট আর ভিলিয়ার্স। ক্রিকেট যে দুই মহাদেশের দু’টি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মাঝে বন্ধুত্বের মতো গভীর বন্ধনের সৃষ্টি করতে পারে সেই দৃষ্টান্ত।
যদিও সব ধরণের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। অন্যদিকে অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর মানসিক এক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন বিরাট। ক্রিকেট থেকে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব টিকে থাকুক ক্রিকেট পরবর্তী জীবনেও। এমনটাই হয়ত প্রত্যাশা সকলের।