একটা তেতো গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ঘটনা। পরপর দু ম্যাচে ৫০ বলে অপরাজিত ৯২ এবং ৪০ বলে ৭৪ রানের দুটো ইনিংস খেললেন তিনি। খুব উচ্ছাস প্রকাশ করে একটা লেখা লিখেছিলাম-হঠাৎ আলোর ঝলকানি।
সেই লেখার বেশ কিছু নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ছিলো।
আবাহনীর হয়ে ৯২ রানের ইনিংস খেলার পথে শুরুর দিকে আম্পায়ারের একটা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত তার পক্ষে গিয়েছিলো। ফলে লোকেরা ধরেই নিয়েছিলো যে, তিনি নিজে খেলেননি। ইনিংসটা আম্পায়ার খেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু চোখে দেখা অবিশ্বাস করি কী করে? বারবারই মনে হচ্ছিলো এটা ফ্লুক নয়।
অবশেষে ব্যাট দিয়েই সেটা তিনি প্রমাণ করলেন। সারা দেশকেই জানিয়ে দিলেন, ফ্লুক ছিলেন না মুনিম শাহরিয়ার। থাকতেই এসেছেন ময়মনসিংহের এই তরুন। কে জানে মুনিমই হয়তো নেক্সট বিগ থিং।
মুনিম ছোটবেলা থেকে লড়াই করেই বড় হয়েছেন। কেউ তাকে সোনার চামচে করে ক্রিকেট মুখে পুরে দেয়নি। কখনো পরিবারের মতের সাথে, কখনো পরিস্থিতির সাথে লড়তে হয়েছে তাকে। এই যেমন এবার আবাহনীতে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু লড়াই ছিলো একাদশে ঠাই পাওয়া নিয়ে। লিটন দাসের অসুস্থতায় সেই সুযোগটা চলে এসেছিলো। আর কী অসাধারণভাবে সুযোগটা কাজে লাগালেন মুনিম।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এতে মুনিমের লড়াইটা শেষ হলো না। এরপর বিপিএলে তিনি দলই পেলেন না। আবাহনীর হয়ে অমন পারফরম্যান্সের পর দল পাওয়াটা অন্তত স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে কোনো দল ড্রাফট থেকে স্কোয়াডে নিলো না তাকে। আমরা একটু বিষ্মিত প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিলাম।
অবশেষে আবাহনীর দায়িত্বে থাকা খালেদ মাহমুদ সুজনের কল্যানেই কি না সুযোগ পেলেন বরিশাল দলে। তাও সুযোগ পাওয়া পর্যন্তই। ম্যাচ পাচ্ছিলেণ না। পাবেন কি করে? বরিশালে ওপেনারের ছড়াছড়ি। শেষ পর্যন্ত অনেককে টপকে এক গাদা ম্যাচ পার হয়ে যাওয়ার পর মুনিম সুযোগ পেলেন চট্টগ্রামের বিপক্ষে। সেখানে মাত্র ১ রান করে আউট। গল্পটা এখানে শেষ হতে পারতো। তা হয়নি।
আরেকটা সুযোগ পেলেন মুনিম। পরের মাচেই ২৫ বলে ৪৫ করে নিজেকে চেনালেন। আর আজ ক্রিস গেইলকে দর্শক বানিয়ে ২৮ বলে খেললেন ৫১ রানের ইনিংস। মাঠে সকলে যেনো হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলেন।
মুনিম তার এই ইনিংস দিয়ে বললেন, থাকতেই এসেছেন তিনি।