স্বপ্ন দেখতে হয় আকাশ সমান বড়। আর আকাশ ছোঁয়ার সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়। তা হলেই হয়ত একজন নেট বোলার থেকে হওয়া যায় নিলাম ঘরের অন্যতম আকর্ষণ। এরপর অনুসন্ধান হবে, আলোচনা হবে তারপর হবে গল্প বলা। এ সব কিছুর মধ্যমণি হয়েছেন গত দুই বছরে ভারতের তরুণ ক্রিকেটার প্রশান্ত সোলাঙ্কি।
মাত্র ২২ বছর বয়স মুম্বাইয়ের এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারের। এই বয়সেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মেগা অকশনে তাঁর দাম উঠেছে এক কোটির উপরে। তার থেকেও বড় বিষয় তাঁকে নিয়ে দুইটি দল নিলাম ঘরে করেছে লড়াই।
একজন সদ্যই লিস্ট ‘এ’ খেলা তরুণের চাওয়াতে তো আর এর থেকে বেশি কিছু থাকার কথা নয়। তবে এই দুই ফ্রাঞ্চাইজির লড়াই প্রশান্তের মনকে করে তুলেছিলো প্রশান্ত মহাসাগরের মতোই উতলা।
মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলার জন্যে ভারতের গুজরাট অঙ্গরাজ্যের আহমেদাবাদের এক হোটেলে কোয়ারেন্টাইন রয়েছেন তিনি। একলা রুমে বসে নিলাম দেখে নিজেকে সামলে নিতে বড্ড মানসিক অস্থিরতা হচ্ছিলো প্রশান্তের। তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন বাবা-মা। তা অবশ্যই টেলিফোনে। ‘আমি বসে শুধু প্রার্থণা করছিলাম যেন কেউ আমাকে নেয়। শেষমেশ চেন্নাই সুপার কিংসে যেতে পারায় আমার স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে।’ বলেছেন প্রশান্ত সোলাংকি।
অথচ স্বপ্ন বাস্তব হতে দেখা প্রশান্তকে কিছুদিন আগেও শুনতে হয়েছে কটুকথা। সেটা অবশ্য তাঁর অতিরিক্ত ওজনের জন্যে। কিছু করে দেখাবার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রায় ১৯ কেজি ওজন কমিয়েছেন তিনি ২০২০ এ হওয়া লকডাউনে। ৮৬ থেকে ৬৭তে নিজের ওজন নিয়ে এসেছেন তিনি। ব্যাস! নিজেকে হালকা মনে হতে শুরু করা প্রশান্ত যেন নতুন পাখা মেলে উড়তে চাওয়ার নতুন প্রত্যয়ে উজ্জীবিত হলেন নতুনভাবে।
মূলত একজন লেগ স্পিনার তিনি। বলের গতির তারতম্য ঘটতে পারেন তিনি। তা ছাড়াও বেশ তীক্ষ্ণ গুগলিও করতে পারেন তিনি। মোদ্দাকথা বেশ ভাল বৈচিত্র রয়েছে তাঁর বোলিং এ। তাঁর প্রমাণ অবশ্য তিনি রেখেছেন ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে।
২০২১ এর ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। মাত্র নয় ম্যাচ খেলেছেন প্রশান্ত এখন অবধি। কিন্তু তাঁর নেওয়া উইকেটের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ছাড়িয়েছে দুই দশকের ঘর। ২১ টি উইকেট রয়েছে ২২ বছর বয়সী তরুণের।
তবে চেন্নাই সুপার কিংসের রাডারে তিনি ছিলেন বেশ আগে থেকেই। কেননা ২০২১ সালে হওয়া আইপিএলের দ্বিতীয় ভাগে সুদূর আরব আমিরাতে তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলো চেন্নাই। মূলত নেট অনুশীলনে বৈচিত্র আনাই মূল লক্ষ্য ছিলো চেন্নাইয়ের। সেখান থেকেই হয়ত তরুণ এই লেগির দিকে সুনজর পড়ে চেন্নাই কর্তাদের। তাছাড়া এবার নিলামে কোন লেগ স্পিনারকে দলে ভেড়াতে পারেনি চেন্নাই।
আগের মৌসুম গুলোতে তাঁদের দলে থাকা ইমরান তাহিরকে এবার নেওয়ার ইচ্ছেটা দেখায়নি চেন্নাই। সেক্ষেত্রে বয়সটা হয়ত একটি প্রধান কারণ। তাছাড়া আগে থেকেই হয়ত প্রশান্তকে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো চেন্নাইয়ের। তাই আর অন্যকোন লেগ স্পিনারের জন্যে খুব একটা উতলা হতে দেখা যায়নি চেন্নাইকে। কিন্তু খুব সহজেই যে চেন্নাই প্রশান্তকে দলে নিতে পেরেছে তা কিন্তু বলার উপায় নেই. ২০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্য ছিলো প্রশান্ত সোলাংকির।
সেখান থেকে ১.২০ কোটি রুপিতে তাঁকে দলে নিতে হয়েছে চেন্নাইকে। চেন্নাই ও প্রশান্তের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলো রাজস্থান রয়্যালস। অবশ্য রাজস্থানের হাঁকে দামটা একটু বেড়েছে। এতটুকু নিশ্চিত যে তাঁকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে চেন্নাইয়ের। প্রশান্তের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভার সন্ধান পেয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। তরুণ এই লেগ স্পিনারকে এখন দরকার সঠিক পরিচর্যার।
নিশ্চয়ই প্রশান্ত সোলাংকির স্বপ্ন যাত্রার সমাপ্তি এখানেই ঘটছে না। মহাসাগর সমান স্বপ্নে বিভোর এই তরুণের বিস্তার হবে হয়ত একদিন পুরো পৃথিবী জুড়ে।