আইপিএল: দশ দলের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা

শেষ হয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৫তম তম আসরের নিলাম। আর মাস দেড়েক বাদেই পর্দা উঠবে আইপিএলের এবারের আসরের। প্রথমবারের মতো দশটি ফ্র‍্যাঞ্চাইজি দল অংশ নিবে আইপিএলে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই আসরে শিরোপা জিততে পূর্বের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে দলগুলোর মাঝে। আইপিএলের এবারের আসরকে সামনে রেখে প্রত্যেক ফ্র‍্যাঞ্চাইজি নিজেদের সেরা দল গোছানোর চেষ্টা করেছে।

শেষ হয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৫তম তম আসরের নিলাম। আর মাস দেড়েক বাদেই পর্দা উঠবে আইপিএলের এবারের আসরের। প্রথমবারের মতো দশটি ফ্র‍্যাঞ্চাইজি দল অংশ নিবে আইপিএলে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই আসরে শিরোপা জিততে পূর্বের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে দলগুলোর মাঝে। আইপিএলের এবারের আসরকে সামনে রেখে প্রত্যেক ফ্র‍্যাঞ্চাইজি নিজেদের সেরা দল গোছানোর চেষ্টা করেছে।

তারকায় ঠাঁসা এই টুর্নামেন্টে এবারের আসরের দলগুলোর শক্তিমত্তা ও দূর্বলতা এবং প্রতিটি দলের সম্ভাব্য একাদশ কেমন হতে পারে তা নিয়েই আমাদের এই বিশেষ পর্ব।

  • মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স

শক্তিমত্তা – রোহিত শর্মার সাথে ওপেনিংয়ে থাকবেন ঈশান কিষাণ। মিডল অর্ডারে সুরিয়াকুমার যাদব, কাইরন পোলার্ড ও টিম ডেভিডরা থাকায় দলটা বেশ ব্যালেন্সড থাকবে। এছাড়া বোলিং বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন জাসপ্রিত বুমরাহ।

দুর্বলতা – আগের আসরে খেলা ট্রেন্ট বোল্ট, কুইন্টন ডি কক, রাহুল চাহার, পান্ডিয়া ভাইদ্বয় এবার না থাকায় গেলো আসরের চেয়ে শক্তিমত্তায় বেশ পিছিয়ে গেছে দলটি।

সুযোগ – ২০২৩ আইপিএলে পেস বিভাগের জন্য অন্যতম সেরা দল হতে পারে মুম্বাই। বুমরাহর সাথে সেখানে যোগ দিবেন জোফরা আর্চার। এছাড়া টাইমল মিলসের ভেরিয়েশন্স ও বেবি এবি’ খ্যাত ডেওয়াল্ড ব্রেভিসও আছেন দলে।

হুমকি – ইনজুরি কিংবা বদলি খেলোয়াড় হিসেবে বেঞ্চে খুব বড় নাম নেই মুম্বাইর। অজি পেসার রিলি মেরেডিথ, স্পিনার মুরগান অশ্বিনরা থাকলেও তাদের থেকে কত ভালো সার্ভিস পাবে দল সেটা নিয়েও আছে সংশয়।

সম্ভাব্য একাদশ – রোহিত শর্মা, ঈশান কিষাণ, সুরিয়াকুমার যাদব, তিলক বর্মা, কাইরন পোলার্ড, টিম ডেভিড, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, জয়দেব উনাদকাত, মায়াঙ্ক মারকান্দে, জাসপ্রিত বুমরাহ, টাইমল মিলস।

  • চেন্নাই সুপার কিংস

শক্তিমত্তা – মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে থাকা দলের জন্য সবচেয়ে বড় পজিটিভ দিক। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা সবশেষ আইপিএল ফাইনাল থেকে তাঁদের আগের ৮ খেলোয়াড়কেই ধরে রেখেছে।

দুর্বলতা – ফাফ ডু প্লেসিস, সুরেশ রায়নাদের না থাকায় অভিজ্ঞতায় কিছুটা ঘাটতি আছে দলটির। একই সাথে দলে কোনো অভিজ্ঞ লেগ স্পিনারও নেই।

সুযোগ – ডু প্লেসিসের জায়গায় ডেভন কনওয়ে হতে পারেন আদর্শ একজন। পেস বোলিং অলরাউন্ডার রাজবর্ধন হ্যাঙ্গারজিকর যিনি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন, তিনিও আছেন সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড় হিসেবে। রহস্যময়ী স্পিনার মাহিশ থিকশানা হতে পারেন ট্রাম্প কার্ড।

হুমকি – ৪০ বছর বয়সী ধোনি ও ৩৮ বছরের ডুয়াইন ব্রাভোর বদলি খেলোয়াড়ও প্রয়োজন হতে পারে সামনের আসরগুলোতে!

সম্ভাব্য একাদশ – রুতুরাজ গাইকোয়াড়, ডেভন কনওয়ে, মঈন আলী, শিভাম দুবে, আম্বাতি রাইডু, রবীন্দ্র জাদেজা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দীপক চাহার, ডুয়াইন ব্রাভো, রাজবর্ধন হ্যাঙ্গারজিকর, অ্যাডাম মিলনে।

  • রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু

শক্তিমত্তা – বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ায় অধিনায়কত্ব সংকটে ভুগতে পারে ব্যাঙ্গালুুরু। তবে অভিজ্ঞতার দিক থেকে ডু প্লেসিসও পেতে পারেন এই দায়িত্ব। এছাড়া অধিনায়কত্বে না থাকলেও অভিজ্ঞ প্লেসিস, ম্যাক্সওয়েল ও বিরাট ত্রয়ো দলকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে পারবেন।

দুর্বলতা – এবি ডি ভিলিয়ার্স না থাকায় মিডল অর্ডার ও ফিনিশিংয়ে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য একমাত্র ভরসা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল!

সুযোগ – জশ হ্যাজেলউড, মোহাম্মদ সিরাজ, হার্শাল প্যাটেল, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাদের নিয়ে অন্যতম সেরা বোলিং ইউনিট ব্যাঙ্গালোরের।

সম্ভাব্য একাদশ – বিরাট কোহলি, ফাফ ডু প্লেসিস, অনুজ রাওয়াত, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মহিপাল লমরর, দীনেশ কার্তিক, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, হার্শাল প্যাটেল, শাহবাজ আহমেদ, মোহাম্মদ সিরাজ, জশ হ্যাজেলউড।

  • সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ

শক্তিমত্তা – মারকো জানসেন, নটরাজন, উমরান মালিক, ভূবনেশ্বর কুমারদের নিয়ে পেস বিভাগ বেশ শক্তিশালী।

দুর্বলতা – রশিদ খানের না থাকা, উইলিয়ামসনের ইনজুরি, জনি বেয়ারস্টো, ডেভিড ওয়ার্নারদের দল বদল – সব মিলিয়ে বাকিদের তুলনায় খানিকটা পিছিয়ে আছে দলটি।

সুযোগ – ওয়াশিংটন সুন্দর নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন। মিডল ওভারে রান আটকে দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দ্রুত রান তুলার সামর্থ্য আছে তাঁর।

হুমকি – নিকোলাস পুরানকে ১০.৭৫ কোটি রুপিতে নেওয়াটা দলের জন্য হুমকি হতে পারে। গেলো আসরে পাঞ্জাবে চরম বাজে সময় কাটিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান।

সম্ভাব্য একাদশ – রাহুল ত্রিপাঠি, গ্লেন ফিলিপস, কেন উইলিয়ামসন, নিকোলাস পুরান, অভিষেক শর্মা, আব্দুল সামাদ, রোমারিও শেফার্ড, ওয়াশিংটন সুন্দর, ভুবনেশ্বর কুমার, থাঙ্গারাসু নটরাজন, উমরান মালিক।

  • গুজরাট টাইটান্স

শক্তিমত্তা – রশিদ খান এবং অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া দলের জয়ে মূল ভূমিকা পালন করতে পারেন।

দুর্বলতা – ব্যাটিং বিভাগ অপেক্ষাকৃত দূর্বল। পান্ডিয়ার ইনজুরি সমস্যাও বিপাকে ফেলতে পারে দলকে।

হুমকি – ব্যাটিং কোচ এবং মেন্টর গ্যারি কারস্টেনের আইপিএল রেকর্ড দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর সাথে খুবই বাজে। মোহাম্মদ শামির বোলিং ইকোনমি রেটও বেশ উপরে!

সম্ভাব্য একাদশ – শুভমান গিল, জ্যাসন রয়, ঋদ্ধিমান সাহা, বিজয় শংকর, ডেভিড মিলার, হার্দিক পান্ডিয়া, রাহুল তেওয়াতিয়া, রশিদ খান, মোহাম্মদ শামি, লকি ফার্গুসন, সাই কিশোর।

  • লখনৌ সুপার জায়ান্ট

শক্তিমত্তা – দিপক হুডা, ক্রুনাল পান্ডিয়া, কৃষ্ণাপ্পা গৌতম, জ্যাসন হোল্ডার ও মার্কাস স্টোয়েনিসকে নিয়ে বেশ দুর্দান্ত অলরাউন্ডার ইউনিট তৈরি করেছে লখনৌ। ওপেনিংয়ে আছেন ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল ও কুইন্টন ডি কক।

দুর্বলতা – ব্যাকআপ অপশন খুব একটা নেই। স্পিন বিভাগে অনভিজ্ঞতা।

সুযোগ – পাওয়ারপ্যাক ব্যাটিং লাইনআপের জন্য বড় স্কোর করাটা সহজ হতে পারে।

হুমকি – মিডল ওভারে উইকেটশিকারী বোলারের অভাব।

সম্ভাব্য একাদশ – লোকেশ রাহুল, কুইন্টন ডি কক, মনীষ পান্ডে, মার্কাস স্টোয়িনিস, দিপক হুডা, ক্রুনাল পান্ডিয়া, জেসন হোল্ডার, কৃষ্ণাপ্পা গৌতম, মার্ক উড, আবেশ খান, রবি বিষ্ণয়।

  • দিল্লী ক্যাপিটালস

শক্তিমত্তা – পৃথ্বী শ ও ডেভিড ওয়ার্নারের ওপেনিং জুটি। এরপর মিশেল মার্শ ও ঋষাভ পান্ত সহ টপ চারে শক্তিশালী লাইনআপ। শার্দুল ঠাকুর ও অক্ষর প্যাটেল থাকায় ব্যাটিং ডেপথ বেশি।

দুর্বলতা – নর্কের সাথে জুটি হিসেবে কাগিসো রাবাদা নেই। স্পিন বিভাগ কিছুটা দূর্বল।

সুযোগ – টপ চারে ম্যাচ উইনিং ব্যাটার আছে।

হুমকি – নতুন বলে দুই প্রান্তেই উড়ন্ত শুরুর পরিকল্পনা থাকলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে হুমকির মুখে পড়তে পারে দল।

সম্ভাব্য একাদশ – পৃথ্বি শ, ডেভিড ওয়ার্নার, মিশেল মার্শ, ঋষাভ পান্ত, মানদ্বীপ সিং, রভম্যান পাওয়েল, অক্ষর প্যাটেল, শার্দুল ঠাকুর, কুলদ্বীপ যাদব, আনরিচ নর্কে, চেতন সাকারিয়া।

  • পাঞ্জাব কিংস

শক্তিমত্তা – জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, শাহরুখ খান, ওডেয়ান স্মিথরা থাকায় দলে পাওয়ার হিটারের আধিক্য বেশি। আসন্ন আইপিএলে ছক্কা হাঁকানোর জন্য সবচেয়ে সেরা দল হতে পারে পাঞ্জাব কিংস!

দুর্বলতা – স্পিন বিভাগ অনেকটাই রাহুল চাহারের উপর নির্ভরশীল!

সুযোগ – বাউন্ডারি মারার জন্য দলে বেশ কয়েকজন পাওয়ার হিটার আছে।

হুমকি – মিডল অর্ডারে বোলারদের জন্য উইকেটশিকার করাটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

সম্ভাব্য একাদশ – মায়াঙ্ক আগারওয়াল, শিখর ধাওয়ান, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন, রাজ বাওয়া, শাহরুখ খান, ওডিন স্মিথ, হারপ্রিত ব্রার, কাগিসো রাবাদা, রাহুল চাহার, আর্শদ্বীপ সিং।

  • রাজস্থান রয়্যালস

শক্তিমত্তা – জশ বাটলার, যশস্বী জ্যাসওয়াল, দেবদূত পাদ্দিকাল, সাঞ্জু স্যামসন ও শিমরন হেটমায়ার এই টপ পাঁচ দলের মূল শক্তি।

দুর্বলতা – জিমি নিশাম, রিয়ান পরাগকে নিয়ে ষষ্ঠ বোলিং অপশন প্রতিপক্ষের জন্য রান তুলতে সহজ হতে পারে।

সুযোগ – ব্যাকআপ হিসেবে রসি ভ্যান ডার ডুসেন আছে। এছাড়া টপ অর্ডারের দাপটে ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের সুযোগ থাকবে।

হুমকি – ডেথ ওভারের জন্য ওবেড ম্যাকয় সবচেয়ে সেরা অপশন হলেও তাঁকে একাদশে জায়গা দিতে পারবে কিনা দল সেটি নিয়েও আছে সংশয়।

সম্ভাব্য একাদশ – জশ বাটলার, যশস্বী জ্যাসওয়াল, দেবদূত পাদ্দিকাল, সাঞ্জু স্যামসন, শিমরন হেটমায়ার, রিয়ান পরাগ, জেমস নিশাম, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যুজবেন্দ্র চাহাল, ট্রেন্ট বোল্ট, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা।

  • কলকাতা নাইট রাইডার্স

শক্তিমত্তা – দুই রহস্যময় স্পিনার সুনীল নারাইন ও বরুণ চক্রবর্তী দলের শক্তিমত্তা।

দুর্বলতা – উইকেটকিপিং অপশন খুবই কম এবং অপেক্ষাকৃত দূর্বল। পাওয়ারপ্লে এবং ডেথ ওভারে পেস বিভাগে রয়েছে দুর্বলতা।

সুযোগ – অ্যালেক্স হেলস ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার হতে পারেন দলের তুরুপের তাস।

হুমকি – সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলের ফিটনেস সমস্যা দলকে আগের আসরের মতো ভোগাতে পারে।

সম্ভাব্য একাদশ – ভেঙ্কটেশ আইয়ার, অ্যালেক্স হেলস, শ্রেয়াস আইয়ার, নিতিশ রানা, শেলডন জ্যাকসন, আন্দ্রে রাসেল, প্যাট কামিন্স, সুনিল নারাইন, শিভাম মাভি, উমেশ যাদব ও বরুণ চক্রবর্তী।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...