তামিমের গোড়ায় গলদ

তামিম ইকবাল খানের সম্পূর্ণ ক্যারিয়ারই একটা মিথ মনে হয়। ১৪ হাজারের ওপর আন্তর্জাতিক রান, ভালো ব্যাটিং গড়, ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, এই টেকনিকের সাথে মিলছে না। বেশ ভালো বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেও অসংখ্য রান করেছেন। টেকনিকের বেসিক জায়গায় এত বড় ফাঁকা রেখে রানগুলো কিভাবে করলেন, কেবল তিনিই বলতে পারবেন।

তামিমের সকল সমস্যা সামনের পায়ে। তার ব্যাটিংয়ের ট্রিগার মুভমেন্ট আগে থেকেই সামনের পা প্ল্যান্ট করে শরীরের ওজন এই পায়ের উপরে চাপিয়ে দেয়া। ফ্রন্ট ফুটে স্ট্যান্স নিয়ে সামনের পায়ে শরীরের ভর চাপিয়ে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, খুব সহজেই ব্যাক ফুটে ফিরে আসা যায় কিন্তু চাইলেও ফ্রন্ট ফুট আর সামনে বা পাশে সরানো যাচ্ছে না। আপনি শরীরের সম্পূর্ণ ব্যালান্স হারিয়ে ফেলবেন।

এই স্ট্যান্সে থাকা অবস্থায় শর্ট বল খেলতে কোন সমস্যা হবে না, আপনি শরীরের ভর পিছনের পায়ে পরিবর্তন করলেই চলছে। শরীরের বাহিরের বল খেলতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যতবার বল আপনার শরীরের ভিতরের দিকে আসবে, আপনি বিপদে পরবেন। বল এবং ব্যাটের লাইনের মাঝখানে আপনার পা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অ্যাক্রোস দ্য লাইনে ফ্রন্ট ফুটে চলে যাওয়ার কারণে বল সরাসরি আই লাইনে পাবেন না।

জ্যাক ক্যালিস, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও তামিম ইকবালের ফ্রন্ট ফুট স্ট্যান্সের পার্থক্য ছবিতে দেখতে পাবেন।

অর্থাৎ বলটিকে আপনি চোখের সামনে পাবেন না বরং পাশে থাকবে। সবথেকে বড় সমস্যা, আপনাকে বলটি খেলতে হবে পায়ের সামনে থেকে, অন্যথায় বল ব্যাটে লাগার আগে পায়ে লাগতে বাধ্য। সামনের পায়ে শরীরের সম্পূর্ণ ওজন চাপিয়ে দিয়ে সেটি আর সরাতে পারছেন না, বলটি খেলার জন্য আপনার হাতে একটা অপশনই খোলা আছে।

শরীরের উপরের অংশকে সামনের দিকে ঝুকিয়ে ব্যাটকে পায়ের সামনে নিয়ে আসা। ফলাফলে কোন ভিন্নতা নেই, হ্যান্ড আই কো-অর্ডিনেশন, শরীরের কাছে থেকে খেলা তো জলাঞ্জলি দিবেন ই, শরীরের উপরের অংশ সামনে ঝুকিয়ে শরীরের ভারসাম্যও নষ্ট করবেন। যেটিকে ধারাভাষ্যকাররা বলছেন, তামিম ‘ফল ওভার’ করছেন। তামিম আসলে সামনে ঝুকে যাচ্ছেন না, তার প্রাথমিক স্ট্যান্সের কারনে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন।

রোহিত শর্মার ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁর ব্যাটিং স্ট্যান্সও এমন ছিলো। তিনি পরিবর্তনের সাথে সাথে আশ্চর্য ধারাবাহিক হয়ে উঠেছেন। এটা ক্রিকেটের খুবই সাধারণ পাঠ। সকলেই জানেন, তামিমের মত একজন বড় খেলোয়াড়েরও না জানার কোন কারন নেই। কিন্তু পরিবর্তনের চেষ্টা খুব একটা চোখে পড়ে না। মুশফিকুর রহিম কিংবা ইয়াসির আলী রাব্বির ক্ষেত্রেও এটা দেখতে পাবেন। মিডল ওভারে বল ততটা মুভ করে না বলে দৃষ্টিকটু লাগে না। তাদের স্ট্যান্সও তামিমের মত কমিটেড নয়। তারপরেও একই ধরনের স্ট্যান্সে দুইজনেই ভিতরের দিকে ঢোকা বলগুলোতে বিপদে পড়েন।

ফ্রন্ট ফুট স্ট্যান্সের সবথেকে বড় সমর্থক সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকানরা। জ্যাক ক্যালিস, গ্র‍্যায়েম স্মিথ, মার্ক বাউচার থেকে শুরু করে এবি ডি ভিলিয়ার্সরা ফ্রন্ট ফুট স্ট্যান্সেই ব্যাটিং করেছেন। তামিমের সমাধানও সেখানেই। এরা প্রত্যেকেই বল ছোড়ার আগেই ফ্রন্ট ফুটে ট্রিগার মুভমেন্ট নিয়েছেন কিন্তু অ্যাক্রোস দ্যা লাইনে পা নেন নি কিংবা শরীরের ওজন সামনের পায়ে চাপিয়ে রাখেন নাই।

ফলে, বলের লাইন অনুযায়ী, পরবর্তীতে সামনের পা সরানোতে কোন সমস্যা তৈরি হয় নি। তামিমকেও সেটিই করতে হবে। ফ্রন্ট ফুটে ট্রিগার মুভমেন্ট নেয়া যায় কিন্তু ফ্রন্ট ফুটে আগে থেকেই কমিটেড থাকা যায় না। তামিম ইকবাল যত দ্রুত শিখবেন, ততই মঙ্গল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link