কোনো একটা কারণে প্রেসবক্সের ওয়াশরুমটা সেদিন বন্ধ ছিলো বা অনেক ভিড় ছিলো। আস্তে করে সামনে গিয়ে ধারাভাষ্যকারদের ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। ওখান থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে সবে ধুমপান শুরু করবো। এর মধ্যেই কাঁধে আলতো একটা টোকা-ম্যাচ আছে?
পেছন ফিরে দেখি তিনি।
আমি জানি, তিনি মিরপুরেই আছেন। আমি রোজ তাকে টিভিতে দেখছি। তারপরও তাকে এই নিশ্বাস ছোয়া দূরত্বে দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বোবার মত পকেট থেকে লাইটার বের করে দিলাম। একটা ছবি তুলতে চাইলাম। খুব হাসলেন; বললেন, ‘এই অবস্থায় ছবি? নাহ। আবার কেলেঙ্কারি হবে।’
কেলেঙ্কারি জীবনে কম করেননি। তার চেয়ে বেশি লোকেদের মুগ্ধ করেছেন। ঠিক মুগ্ধ করা নয়; পুরো বিশ্বকে একটা প্রজন্ম ধরে মোহগ্রস্থ করে রেখেছিলেন। উইকেটের পরিসংখ্যান দিয়ে কিচ্ছু বোঝা যাবে না। স্রেফ জেনে রাখুন, সর্বকালের সেরা সময়টা উপহার দিয়েছেন তিনি এই বিশ্বকে।
হ্যা, তিনি এক ও অদ্বিতীয় শেন ওয়ার্ন।
মৃত্যু ব্যাপারটা এমনই। আজ সকালেই তিনি থাইল্যান্ডে নিজের ভিলায় বসে টুইট করেছেন রড মার্শের মৃত্যু নিয়ে। বলছিলেন, খবরটা বিশ্বাস হচ্ছে না। দিনের শেষ হতে না হতেই সবচেয়ে বড় অবিশ্বাসের খবরটা উপহার দিলেন সেই ওয়ার্ন।
সারাটা জীবন ঘোরতর লড়াই ছিলো তার মুরালিধরণের সাথে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, উপমহাদেশে জন্মালে ওয়ার্ন অনেক আগেই মুরালির উইকেট সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতেন। আবার কেউ বলেন, বল না ছুড়লে মুরালি কিছুতেই ওয়ার্নকে ছুতে পারতেন না। কিন্তু ওয়ার্ন এসব কথার ধার ধারতেন না। তার কাছে মুরালিধরণ ছিলেন প্রাণের বন্ধু।
কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের কথা ধরুন। বাইশ গজে সবচেয়ে বড় দ্বৈরথটা ছিলো টেন্ডুলকার বনাম ওয়ার্ন। সেই টেন্ডুলকার কিনা, দুনিয়ায় ওয়ার্নের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন।
এমনই ছিলেন তিনি। সামান্য পরিচয়েও যে কাউকে ঘনিষ্ঠ করে ফেলতে পারতেন। ফ্লিপার, গুগলি কিংবা টার্নের দুনিয়া সেই ২০০৭ সালে ছেড়ে এসেছিলেন। কিন্তু আলোচনায় ছিলেন সবসময়। কখনো সিগারেট টেনে বিতর্ক তৈরি করে, কখনো সেক্স স্ক্যান্ডাল ঘটিয়ে, কখনো মাদক কাণ্ডে ফেঁসে গিয়ে, কখনো ফিক্সিং কান্ডে এবং সর্বোপরে কব্জির জাদু দিয়ে ওয়ার্ন ছিলেন আলোচনার টেবিলে।
মাত্র তো ৫২ বছর বয়স হয়েছিলো। এই বয়সে যেনো আরেকবার নিজের এই আনপ্রেডিক্টেবল চেহারাটা দেখাতেই চলে গেলেন হঠাৎ। দুনিয়া এখন স্রেফ গুমরে মরবে। খুজে ফিরবে সর্বকালের সেরা এই জাদুকরকে।
শেন ওয়ার্ন চলে গেলেন। টেন্ডুলকার, লারাও একদিন চলে যাবেন। এই ক্রিকেট দুনিয়া তার বাতি খুজে ফিরবে অন্ধকারের জগতে।