বাইশ গজে ঘূর্ণির ঝড় তুলতেন। জাদুতে মুগ্ধ করতেন। সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার যাকে অনায়াসে বলে দেওয়া যায় তিনি শেন ওয়ার্ন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। কিন্তু, তাতে কি স্মৃতি মুছে যেতে পারে! মুগ্ধতা ছড়ানো ওয়ার্ন বেদনার মহাসাগরে ভাসিয়ে চলে গিয়েছেন ঠিকই কিন্তু, কতই না নান্দনিকতা দেখিয়েছেন তিনি ১৬৩ গ্রামের গোলক হাতে। তবে ক্রিকেটের ওই সবুজ গালিচার বাইরে তিনি জড়িয়েছেন নানা রকম সব বিতর্কে।
যা কিনা কলুষিত করেছে তাঁকে। দিয়েছে ‘ব্যাডবয়’ তকমা। সে তকমার পেছনের কিছু গল্প থাকছে আজ। গল্পের পুরোটাতেই থাকছে শেন ওয়ার্নের জীবনের মুদ্রার অপরপিঠ।
- চুক্তিতে থেকেই ধূমপান
ধুমপান বিরোধী এক সংস্থার সাথে একবার বেশ বড় অংকের অর্থচুক্তিতে যুক্ত হয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন। সেই চুক্তি মোতাবেক একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁকে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। তবে সেই চুক্তির উল্লঙ্ঘন করেছিলেন তিনি।
তাও আবার প্রকাশ্যে ধূমপান করে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচে তাঁকে ড্রেসিং রুমের বারান্দায় তাঁকে ধূমপান করতে দেখা যায়। সেই ছবি তুলে ফেলে কিছু সমর্থক। ব্যাস! তাতেই শুরু হয় বিতর্কের। সেই বিতর্কের জল গড়ায় বহুদূর।
- পর্ণ তারকাকে মারধর
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শেন ওয়ার্নের বিপক্ষে অভিযোগ আসে যে, তিনি পর্ণ তারকা ভ্যালেরি ফক্সকে মারধর করেন। দাবি করা হয় নাইট ক্লাবে তিনি ফক্সের মুখে ঘুষি মেরেছিলেন। সে নিয়েও বেশ একটা জলঘোলা হয়। তবে শেষ অবধি তাঁকে সব ধরণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
- ডোপ টেস্ট কেলেঙ্কারি
জীবনের সবচেয়ে কলঙ্কময় এক সময়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন ২০০৩ সালে। তাঁর শরীরে নিষিদ্ধ পদার্থ পাওয়া যায় ডোপ টেস্টের মাধ্যমে। যার ফলশ্রুতিতে এক বছরের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় তিনি ২০০৩ সালের বিশ্বকাপটাও খেলতে পারেননি। অথচ বেশ দাপটের সাথে সেই বিশ্বকাপটা ঘরে তুলেছিলো অস্ট্রেলিয়া।
- বাজিগরের সাথে চুক্তি
ক্যারিয়ারের প্রথম বিতর্কের সাথে ওয়ার্নের মোলাকাত হয় ১৯৯৪ সালে। ভারতীয় এক বাজিগরের সাথে তিনি সহ তাঁর সতীর্থদের ক্রিকেট বহির্ভূত এক চুক্তি করার প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই চুক্তি অনুযায়ী তাঁরা সেই বাজিগরকে পিচ ও আবহাওয়ার সব খবরাখবর জানিয়ে দিয়েছেন।
- বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও শেষে তালাক
২০০৫ সালে তাঁর স্ত্রী সিমিওনি তাঁকে তালাক দিয়ে দেয়। এর পেছনে কারণ ছিলো ওয়ার্নের বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সব সম্পর্ক। এক শিক্ষার্থী লরা সেয়ার্স, টিভি সহকারী মিশেল মাস্টার্স ও কেরি নামক ভিন্ন ভিন্ন নারী বিভিন্ন সময় তাঁদের সাথে ওয়ার্নের সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলেছেন জনসম্মুখে। তাছাড়া কেরির এক বন্ধু বলেছিলেন যে, ওয়ার্ন পরিস্থিতি নেই সময় নেই সব সময় ঘনিষ্ঠ হতে চাইতেন তাঁর বান্ধবীর সাথে।
এমন সব কেলেঙ্কারিতে নিজেকে জড়িয়েছিলেন ক্রিকেটের এই কিংবদন্তি। যাকে দেখে হয়ত লাখ লাখ তরুণ হতে চেয়েছিলেন ঘূর্ণি জাদুকর। তবে এই সব বিতর্ক হয়ত ভাবিয়েছে ঠিক কোন দিকটা গ্রহণ করা উচিৎ তাঁর মতো একজন পাবলিক ফিগারের কাছ থেকে এমনসব বিতর্ক নিশ্চয়ই কেউ কখনো আশা করেনি। তবুও এসব কিছুই ঘটেছে। মুদ্রার তো পিঠ দুটোই।