কপালে তোমার ‘তিলক’ দিলাম এঁকে

আসরের প্রথম সেঞ্চুরি। ব্যাটার জশ বাটলার। রাজস্থান রয়্যালস আট উইকেটে করে ১৯৩ রান। ইংলিশ ওপেনারের কৃতিত্ব অবশ্যই প্রাপ্য। তবে, ১৯ বছর বয়সী তিলক ভার্মাকে ভুলে গেলে চলবে কি করে। তাঁর ৩৩ বলে ৬১ রানের ইনিংসটার কারণেই মুম্বাই খানিকটা লড়াই করলো ম্যাচে।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে প্রথমবার আইপিএলে সুযোগ পাওয়া ভার্মা ইতোমধ্যেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। মিডল অর্ডারের নিয়মিত মুখ সুরিয়াকুমার যাদবের ইনজুরিতে দলে সুযোগ পান তিলক। আর সুযোগ পেয়েই নিজের সেরাটা দিয়েছেন এই তরুণ ব্যাটার।

রাজস্থান রয়্যালসের দেওয়া ১৯৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে মাত্র ৪০ রানে ২ উইকেট হারায় মুম্বাই। চাপের মুখে থাকা মুম্বাইকে পথ দেখান ঈশান কিষাণ ও তিলক ভার্মা। তৃতীয় উইকেটে ঈশান কিষাণের সাথে ৮১ রানের জুটির পথে ৪৯ রান করেন ১৯ বছর বয়সী তিলক। সুরিয়াকুমার যাদবের ইনজুরিতে তিলক ভার্মা বনে গেছেন মুম্বাইয়ের নতুন তারকা। দুই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া তিলক এখন পর্যন্ত পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশ দুর্দান্তই খেলেছেন।

দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই কামলেশ নাগরকটিকে পর পর দুই বলে দুই চার মেরেছিলেন তিলক। এরপর রাজস্থানের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নেমে নবদ্বীপ সাইনিকে অফ সাইডে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। একই ওভারে সাইনিকে লং অফের উপর দিয়ে অসাধারণ এক ছক্কাও হাঁকান এই তরুণ তারকা।

স্পিনের বিপক্ষেও ছিলেন অসাধারণ। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যুজবেন্দ্র চাহালদের বেশ ভালোভাবেই সামলেছেন তিনি। ইনিংসের দশম ওভারে চাহালকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে হাঁকান ছক্কা। দুই বল বাদেই ফাইন লেগের উপর দিয়ে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন চার মারেন তিলক। একই দৃশ্য ছিল অশ্বিনের বলেও! ইনিংসের সপ্তম ওভারে পুল শটে অশ্বিনকে ছক্কা হাঁকান এই তরুন তুর্কি। ১৫তম ওভারে তিলককে মিডল স্টাম্পে ৯৯ কি.মি ঘন্টায় একটি বল ছুঁড়েন অশ্বিন! যদিও ওই বলটিতে বেঁচে যান তিলক। তবে ওই ওভারেই অশ্বিনের বলে বোল্ডা হয়ে ফিরেন তিনি।

ম্যাচ শেষে তিলক বলেন, ‘অশ্বিনের বিপক্ষে আমি খুব স্নায়ুচাপে ছিলাম। তবে আমার পরিকল্পনা ছিল ছোট বাউন্ডারি সাইডটার ফায়দা নেওয়া। এক পাশের বাউন্ডারি ছোট ও আরেকপাশ বড় হওয়ায় আমার মনে হচ্ছিল উইকেট নেওয়ার জন্য সে স্টাম্পে বল করবে। তাই আমি সেটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম সে রান আটকানোর জন্য চেষ্টা করছে তখন আমি বুঝতে পারছিলাম সে স্টাম্পের বাইরে বল করবে। যার জন্য আমি আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছি। এরপর যখন সে স্টাম্পে বল করলো, আমি ভেবেছিলাম আমি তাঁর ওপর চড়াও হবো আর বাউন্ডারি মারবো। কিন্তু শেষ বলটা গ্রিপড হয়ে টার্ন করে! আমি আরও ভাল চেষ্টা করবো পরবর্তীতে।’

ক্যারিয়ারের একদম শুরুতে আছেন তিলক ভার্মা। কিন্তু ইতিমধ্যেই পেস ও স্পিনের বিপক্ষে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন এই তরুন উদীয়মান তারকা। শারীরিক শক্তিমত্তাও প্রকাশ করেছিলেন রিয়ান পরাগকে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে! যে ছক্কা গিয়ে আঘাত হানে ক্যামেরাম্যানের মাথায়! স্পিন ও পেসে দুর্দান্ত খেলা এই তরুনকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলে ভিড়িয়েছে ১.৭ কোটি রুপিতে। মুম্বাই অবশ্য অনূর্ধ্ব ১৯ থেকেই ভার্মার দিকে রেখেছিল তীক্ষ্ণ নজর।

তিলক বলেন, ‘মুম্বাই অনেক বড় এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় একটি ফ্র‍্যাঞ্চাইজি। তারা আমার পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছে, আমার বোলিং নিয়ে কাজ করেছে। তারা আমাকে মেরে খেলার স্বাধীনতা দিয়ে আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। শচীন টেন্ডুলকার, রোহিত শর্মা, কাইরেন পোলার্ড, জাসপ্রিত বুমরাহর মতো খেলোয়াড়েরা যুক্ত আছে মুম্বাইর সাথে। ধন্যবাদ জানাতে চাই মুম্বাইকে যারা আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে উঁঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। হার-জিত খেলার অংশ। আমরা আমাদের শতভাগ দিব মাঠে।’

প্রথম দুই ম্যাচে হেরে হতাশাজনক শুরু মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের। অবশ্য দুই ম্যাচেই ব্যাট হাতে ভাল করেছে তিলক। দিল্লীর বিপক্ষে ১৫ বলে ২২ রান ও রাজস্থানের বিপক্ষে করেন ৩৩ বলে ৬১ রান। যদিও ইনজুরির কারণে আপাতত একাদশে নেই সুরিয়াকুমার। তবে সুরিয়া ফিরলেও মিডল অর্ডারে তিলক ভার্মা হতে পারেন মুম্বাইয়ের তুরুপের তাস!

তিলক পা টা মাটিতেই রাখছেন। তাঁর স্বপ্নটাও নেহায়েৎই সামান্য। বলছেন, আপাতত বাবা-মার জন্য নিজেদের মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই করে দিতে পারলেই নিজেকে সফল মানবেন তিনি। তবে, ভারতবর্ষের ক্রিকেট তাঁকে নিয়ে নিশ্চয়ই আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link