ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তেজনকর লড়াই। দুই দলের এই লড়াইটা যেন শুধু ২২ গজের নয়! ২২ গজ ছাপিয়ে লড়াইটা হয় দম্ভ আর অহংকারেরও। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ শুধু এই দুই দেশের সমর্থকরা নয়, বরং পুরো ক্রিকেট দুনিয়া অপেক্ষায় থাকে এই দুই দলের লড়াই দেখতে।
আর এই দুই দলের বিশ্বকাপ মঞ্চে লড়াই মানেই পাকিস্তানের উপর ভারতের আধিপত্য। বিশ্বকাপের মঞ্চ আর ভারত-পাকিস্তানের লড়াই! তাও আবার সেমিফাইনাল! উত্তেজনার মাত্রা সবকিছু ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।
মোহালিতে সেবার সেমিতে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। সেসময় ভারতের মানসিক কন্ডিশনিং কোচ ছিলেন প্যাডি আপটন। তাঁর ভাষ্যমতে ভারতের জন্য ওই ম্যাচের জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। কারণ পাকিস্তান ওই ম্যাচে জয় পেলে ফাইনালের আগে তাদের থাকতে হত মুম্বাইয়ের বিখ্যাত তাজ হোটেলে। আর ওই তাজ হোটেলেই হয়েছিল জঙ্গি হামলা। যার কারণে ওই ম্যাচ জয়ের জন্য ভারতের উপর রাজনৈতিক চাপটাই ছিল অনেক বেশি।
প্যাডি বলেন, ‘ম্যাচের আগে রাজনৈতিকভাবে চাপটা অনেক বেশি ছিল। এটা কেউ সবার সামনে না বলেও কারোই অজানা ছিল না। পাকিস্তান যদি সেমিফাইনাল জিতে যেত তাহলে তারা ফাইনালের আগে তাজ হোটেলে থাকতো। যেটা ওই সময় জঙ্গিবাদীদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল জঙ্গি হামলার জন্য। কেউ কিছু না বললেও সবাই জানতো এর একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। তাই এটা মোটেও শুভকর কিছু হত না যদি পাকিস্তান ম্যাচ জিততো এবং তাজ হোটেলে থাকত। তাই বাড়তি একটা চাপ তো ছিলই। এই ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য অবস্থান নিয়ে ভাবার উপায়ও ছিল না ভারতের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূলত দর্শকদের মাঝেই। খেলোয়াড়দের মধ্যে উগ্রতা বা শত্রুতা এমন কিছুই নেই। তাঁরা একে অপরকে বেশ ভাল জানে এবং সম্পর্কটাও ভাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ ভারতের জন্য সবসময়ই সহজ ছিল। তাঁদেরকে অতিরিক্ত কোনো প্রেষণা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।’
২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়াহাব রিয়াজের বিধ্বংসী স্পেলের পরেও শচীন টেন্ডুলকারের ৮৫ রানের অসাধারণ ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৬০ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের বোলিং নৈপুণ্যে ২৩১ রানেই থামে পাকিস্তানের ইনিংস। ২৯ রানের জয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত।
প্যাডি বলেন, ‘শচীন পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছে। শুধু যে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এমন না, সে দলের অন্যতম দক্ষ একজন। কিন্তু সে ছিল দলের একজন খেলোয়াড়। দলের মিটিংয়ে সে খুব বেশি কিছু বলতো না। তবে প্রয়োজনের সময় যে বলতো না এমন না। দলের প্রয়োজনে সে পরামর্শ দিত এবং সবাই তা শুনতো। এটা ছিল তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। এবং খেলোয়াড়েরাও জানতো শচীনের কেবিনেটে শুধুমাত্র বিশ্বকাপ ট্রফিরই অভাব। আমি জানি অনেক খেলোয়াড়ই বলেছিল আমরা এটা জিততে চাই এবং শচীনকে উপহার দিতে চাই। সে জানত সবার সমর্থন তাঁর জন্য আছে। কিন্তু সে কারও উপহারের অপেক্ষা করেনি। সে জানত এটা বাসায় নেওয়ার মত সময় তাঁর কাছে এসেছে। আমরা দেখেছি সে কেমন ইনিংস খেলেছে।’