অসমসাহসী নরিকাহিনী

১৯৬২ সালের মার্চ। বার্বাডোজের বিরুদ্ধে ট্যুর ম্যাচে চার্লি গ্রিফিথের বল মাথায় লেগে গেল প্রথম ইনিংসে ২ রানে অপরাজিত ভারত অধিনায়ক নরি কন্ট্রাক্টরের।

সেই অভিশপ্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ক্যারিবিয়ান পেসারের বাউন্সারে খুলি ভেঙেছিল ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার নরি কন্ট্রাক্টরের।গুরুতর আহত নরি কন্ট্র্যাক্টরকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যেতে হল হাসপাতালে, যেখানে তাকে নিয়ে যম আর মানুষের প্রবল টানাটানি চলেছিল। মাথায় আঘাত লাগার পরে ছয় দিন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন কন্ট্রাক্টর।

রক্ত দরকার হয়ে পড়ল অনেকটাই।পাঁচজন রক্ত দিয়েছিলেন তাঁর জীবন বাঁচানোর জন্য। এঁদের মধ্যে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি অধিনায়ক ফ্র্যাঙ্ক ওরেল, চাঁদু বোর্দে, বাপু নাদকার্নি, পলি উমরিগড় এবং সাংবাদিক কে এন প্রভু।

শোনা যায়, গ্রিফিথের সেই বল খেলার আগে নরি কন্ট্রাক্টরের ক্যাচ পড়ে গিয়েছিল শর্ট লেগে। সেই বলে আউট হয়ে গেলে গ্রিফিথের বলে মারাত্মক চোটটাই লাগত না নরি কন্ট্রাক্টরের। ওই বলটার আগে কন্ট্রাক্টরের পার্টনার ননস্ট্রাইকার এন্ডের ব্যাটসম্যান চিৎকার করে বলেছিলেন, গ্রিফিথ চাকিং করছে। তখন নরি কন্ট্রাক্টর তাঁকে বলেছিলেন, আম্পায়ারকে যেন জানানো হয় এই ব্যাপারে।

গ্রিফিথ যখন সেই অভিশপ্ত বলটা করেছিলেন, তখন ড্রেসিং রুমের জানালা কেউ খুলেছিলেন। তাতে ফোকাস নড়ে গিয়েছিল নরি কন্ট্র্যাক্টরের। গ্রিফিথের বলটা ঠিক মতো খেলতে পারেননি। যদিও সেই বল খেলা নিয়ে বিভিন্ন রকম মতামত পাওয়া যায়। কন্ট্রাক্টরকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন গ্রিফিথের স্ত্রী। তাকে নরি কন্ট্রাক্টর বলেছিলেন, ‘গ্রিফিথের কোনও দোষ নেই, সবটাই আমার দোষ।’

গ্রিফিথের বাউন্সার নরি কন্ট্র্যাক্টরের মাথায় আছড়ে পড়ার পরে একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল। পরে তামিলনাড়ুর হাসপাতালে তাঁর মাথায় ধাতব পাত বসানো হয়েছিল আড়াই ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করার পরে। সেই অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডক্টর চণ্ডী।

আনন্দবাজারের বার্তা সম্পাদক সন্তোষকুমার ঘোষ ৩১ বছরের এক অক্রীড়ক সাংবাদিককে ডেকে বললেন ‘মতি, তুমি একবার পঙ্কজ রায়ের কাছে যাও।তোমার বাড়ির কাছেই তো। ওর সঙ্গে কথা বলে দেখ কি কি কারণে গ্রিফিথের বল কন্ট্র্যাক্টরের মাথায় লাগতে পারে।’

ওটাই ছিল মতি নন্দীর প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট।পঙ্কজ রায়ের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা, তারপরে একটি ছোট্ট লেখা সন্তোষকুমার ঘোষের হাতে তুলে দেওয়া এবং তা আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়া।

১৯৬২ সালের পরে কেটে গিয়েছে ৬০ বছর। মাথায় তীব্র ব্যথা শুরু হওয়ায় সদ্য নরি কন্ট্রাক্টরের খুলি থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই ধাতব পাত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার ছেলে এই খবর জানিয়েছেন। মুম্বাইয়ের হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে তার বাবা এখন ভালোই আছেন বলে জানিয়েছেন কন্ট্রাক্টরপুত্র। তিনি এও জানিয়েছেন যে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকবেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। কন্ট্রাক্টরের বয়স এখন ৮৮।

৬ বছর ৩ মাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ভারতের হয়ে ৩১ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি, করেছেন ১ টি শতরানসমৃদ্ধ ১৬১১ রান, নিয়েছেন একটি উইকেট। খেলেছেন ১৩৮ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। চার্লি গ্রিফিথের বলে ভয়ঙ্কর সেই আঘাতের পরে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল। তার পরে অবশ্য কন্ট্রাক্টর ফিরে এসেছিলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link