ক্রিকেট তবে ভদ্রলোকেরও খেলা

ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট। এই প্রবাদ শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ক্রিকেটের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত আছে এই প্রবাদ। তবে ক্রিকেট মাঠে অনাকাঙ্ক্ষিত এমন সব ঘটনা ঘটেছে তা কিনা বারে বারে প্রশ্ন সামনে এনেছে যে আদৌ কি ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট? এই যে সদ্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাণ্ডটাই তো এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে আরেকবার।

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে তারকায় ঠাসা দল মোহামেডান। তারকাদের মাঝে জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও রয়েছেন। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রুপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচে আবারও অখেলোয়াড়সূলভ আচরণ করে বসেন তিনি। দলের বিপর্যয়ের মুহূর্তে হাল ধরেছিলেন। করেছিলেন ৪৮ রান। হঠাৎই এনামুল হক জুনিয়রের বল প্রত্যাশার থেকে নিচু হয়ে যায়। আর উইকেটরক্ষকের দস্তানায় জমা পড়ে বল রিয়াদের ব্যাটের খোঁচা লেগে।

ব্যাস! নিজের টেম্পারমেন্ট হারিয়ে ফেলেন রিয়াদ। মাঠ ছাড়ার আগে তাঁর শরীরি ভাষায় আক্ষেপ, ক্ষোভ যেন স্পষ্ট। তিনি খানিক রাগও ঝাড়লেন বিসিবির গ্রাউন্ডসম্যানদের উপর। এরপর ডেসিং রুমের দরজায় মারেন লাথি। এই ঘটনাটার পুরোটাই ছড়িয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমালোচনা, নিন্দায় ভেসে যেতে থাকেন রিয়াদ। তবে এমন ঘটনা যে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন তা কিন্তু নয়। আবার রিয়াদও প্রথমবারের মত এমন দৃষ্টিকটু কাজ করেছেন তাও নয়।

এর আগেও মাঠকর্মীদের সাথে খারাপ ব্যবহারের নজির রয়েছে তাঁর। তাছাড়া ডিপিএলের গত মৌসুমে সাকিব আল হাসানের উইকেটে লাথি মারার ঘটনাও তো নিশ্চয়ই স্মৃতিতে মলিন হয়ে যায়নি। তাঁর সে ঘটনায় শাস্তিও পেয়েছিলেন সাকিব। নিষিদ্ধ ছিলেন তিন ম্যাচের জন্যে। তবে রিয়াদ এ দফায় কোন শাস্তির সম্মুখীন হননি। তবুও এসব কাজ কি তাঁদের শোভা পায়?

এই প্রশ্নটা ওঠা যেন স্বাভাবিক। আমাদের পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেটেও এমনটা বেশ মানতে দেখি, মাঠের ঘটনার রেষ মাঠেই শেষ করার। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে, ক্রিকেটের মত জনপ্রিয় একটা খেলাকে প্রতিনিধিত্ব করা খেলোয়াড়দের এমন আচারন আমাদের ভাবিয়ে তোলে। তবে ঠিক কি শিক্ষাটা পাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম? আজকের এই সাকিব, রিয়াদদের দেখেই তো একটা কিশোর স্বপ্ন দেখে, একটা ছোট শিশু ব্যাটটা হাতে তুলে নেয় একদিন দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবে বলে।

আর তাঁদের কাছ থেকেই যদি এমন আচরণের দেখা হরহামেশাই মেলে তাহলে সেই ছোট্ট শিশু কিংবা কিশোর হয়ত শিখছে মাঠের খেলায় কিছু হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া এভাবেই দেখাতে হয়। ছোট মন তো আর বিভিন্ন প্যাঁচের সমাধান করতে পারে না। এই যে সাকিব-রিয়াদরা এখন এমন এক জায়গায় বসে আছেন যে প্রতিনিয়ত তাঁদের সব খোঁজখবর রাখছেন সকলে। যেখানে তাঁদের উচিৎ শান্তি, সম্প্রতি, ধৈর্য্য, একাগ্রতা, সংগ্রামের মত উৎকৃষ্ট চারিত্রিক গুণাবলী ধারক ও বাহক হওয়া।

সেখানে ঠিক তাঁর বিপরীত কাজটাই যেন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাঁর। একরোখা মনোভাব, উশৃঙ্খলতা আর বারবার ভুল করেই যাওয়ার মানসিকতার প্রচার হয়ত নিজেদের অজান্তেই কিংবা যেনে বুঝেই করে ফেলছেন। বারেবারে কেন এমন সব কাণ্ড আমাদের খেলোয়াড়দের কেন্দ্র করেই ঘটতে হয়। হ্যাঁ, এটা হয়ত অনেকেই বলবেন অবকাঠামোগত দূর্বলতা রয়েছে। এটা তো দিনের আলোর মত স্পষ্ট। এ নিয়ে নতুন করে আলাপ করবার তো বিশেষ প্রয়োজন নেই।

সমস্যাটা হল অবকাঠামোগত দূর্বলতা, বৈরী পরিবেশ এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে নেবার সক্ষমতা না থাকলেও একজন ভাল মানের ক্রিকেটার হয়ে ওঠাও বেশ কষ্টসাধ্য এক কাজ। এখন তবে আরও একটা প্রশ্ন উঠতে পারে। আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা কি আদোতে ভাল মানের খেলোয়াড়? সে প্রশ্ন তোলা থাক। তবে বাংলাদেশ খেলোয়াড়দের প্রতি অনুরোধ আপনারা এবার তবে একটু শুধরান। আর কতকাল অকারণে এমন বিতর্কে জড়াবেন বলুন? সকল রাগ-ক্ষোভের জবাবটা মাঠের ক্রিকেট দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link