অধিনায়ক আকবর আলী যখন ব্যাট করতে নামলেন তখন দল হারিয়ে ফেলেছে তিন উইকেট। রান তুলেছে মোটে ৬২। বৃষ্টি শেষে পিচ একটু ব্যাটারদের বিপাকে ফেলছিল। আর সে মুহূর্তে প্রয়োজন দলের হাল ধরার । অধিনায়ক আকবর সে হালটা ধরলেন। তিনি যখন বাইশ গজে পা রাখলেন তখন দলের জয়ের জন্যে আরও ১০৮ রানের মত লাগে বৃষ্টি আইনে। পিচের বৈরিতা, ভারতীয় যুবাদের বোলিং তাণ্ডব, সেই সাথে বিশ্বকাপ ফাইনালের চাপ।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির নয় তারিখে আকবর নিজের টেম্পারমেন্ট দেখিয়েছিলেন। সকল চাপ সামলে একা দাঁড়িয়ে থেকেছিলেন বাইশ গজের একপ্রান্ত আগলে রেখে। মাঝে পারভেজ ইমন সঙ্গ দিয়েছেন খানিকক্ষণ, বাকিরা আসা-যাওয়ায় ছিল ব্যস্ত। তবুও ভয়ডরহীন এক লড়াকু সৈনিক সেদিন লড়েছিল, নিজের সবটুকু দিয়েই লড়েছিল আকবর আর আমাদের জিতিয়েছিল প্রথম কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা।
আকবরের নেতৃত্বাধীন সে দলটায় বেশ কিছু সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় ছিল। আশা করা হয় তাঁর ব্যাচের ছেলেরাই হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামী দিনের কাণ্ডারি। সে ধারণা যে একেবারেই ভুল না তা তো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন শরিফুল ইসলাম। বাংলাদেশ জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন সদর্পে। হয়ে উঠেছেন বোলিং আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র। তাছাড়া সে দলের শামীম হোসেন পাটোয়ারিকেও বাজিয়ে দেখা হয়েছে জাতীয় দলে।
আবার মাহমুদুল হাসান জয় তো রীতিমত এখন টেস্টে নিয়মিত পারফরমার। ২০২০ এর সে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের পারভেজ হোসেন ইমন, তৌহিদ হৃদয়, তানজিম হাসান সাকিব এদের সবাইকে নিয়ে কমবেশি আলোচনা হয়। আড্ডায় এদের নামটা হরহামেশাই শোনা যায়। তবে দলটাকে যে এক সুঁতায় গেঁথে রাখল তাঁকে নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। আকবর থেকে যান নিভৃতে, আলোর পেছনে।
তবে তিনি যেন এখন আর আড়ালে থাকতে নারাজ। মাঝেসাঝে পারফরমেন্স দিয়ে নিজেকে আর গড়পরতা মানের ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচনায় নিতে নারাজ। তিনি পারফরম করতে চান নিয়মিত। হতে চান দলের স্তম্ভ। সে কাজটা খুব ভালভাবেই করছেন আকবর এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। দলের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে থাকছেন চাপমুক্ত, খেলছেন দারুণ সব ইনিংস।
এবারের ডিপিএলে আকবর নেতৃত্ব দিচ্ছেন গাজি গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে। দলকে নেতৃত্ব দিয়ে খুব একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রাখতে পেরেছেন তা বলার সুযোগ নেই। তবে স্বস্তি ছড়াচ্ছে তাঁর ব্যাট। এবারের ডিপিএলে রয়েছেন ছন্দে। ডিপিএলে যখন বাকি ব্যাটাররাও সানন্দ্যে রান তুলছেন নিজেদের ব্যাট চালিয়ে তখন আর আকবর বাদ যাবেন কেন? তাইতো তিনিও রান করছেন নিয়মিত। ডিপিএলে ২৩ জন ক্রিকেটারের গড় ৪০ এর উপরে। নিতান্ত ভাল ব্যাটিং প্রদর্শনের নমুনা।
সে তালিকায় নিজেকেও আবিষ্কার করছেন আকবর। দশ ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পাওয়া আকবরের ব্যাটিং গড় ৪৪.২৫। দুইটা ফিফটির দেখা পেলেও শতকের দেখা পাননি তরুণ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৮৯ রানে অপরাজিত থেকেছেন এক ম্যাচে। আসলে খুব একটা সুযোগ তিনি পাননি নিজের ইনিংসটা লম্বা করার। ব্যাটিং অর্ডারের খানিকটা নিচের দিকে নেমে দলকে দ্রুত রান তুলতে সহয়তা করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর মোট রান এখন ৩৫৪। অথচ বাকি ২০ ম্যাচের লিস্ট এ ক্যারিয়ারে তাঁর মোট রান ৩৩৮।
তবে সবার থেকে আকবরের এবারের ইনিংসগুলো একটু আলাদা। কেননা বাকি সবাই যখন ওয়ানডে ফরম্যাট ভেবে রান করছেন রয়েসয়ে। ঠিক তখন আকবর রান করছেন বলের সাথে পাল্লা দিয়ে। এবারের ডিপিএলে দুইজন মাত্র ব্যাটারের স্ট্রাইকরেট ছাড়িয়েছে ১০০ এর গণ্ডি। আকবর তাদেরই একজন। আর দ্বিতীয় জন হলেন তাঁরই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সতীর্থ শামীম হোসেন পাটোয়ারি। আকবরের এখন পর্যন্ত লিস্ট এ ক্যারিয়ারে স্ট্রাইকরেট ৯৩.১৩।
এবারের ডিপিএলে আকবরের খেলা ইনিংসগুলো প্রমাণ করে ক্রমশই আকবর নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সাদামাটা একজন ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের বাকি সময়টা কাটাতে চান না। আলোর আড়ালে না থেকে তিনি আলোর উৎস হতে চান। নিজেকে পরিণত করে আকবর নিজেকে নিশ্চয়ই আবিষ্কার করতে চান বাংলাদেশ জাতীয় দলের উইকেটের পেছনে দস্তানা হাতে। সে পথটা সুগম নয় আকবরের অবশ্যই তা জানা।