উথাল পাথাল সোনালি হাঁস

অনাকাঙ্ক্ষিত কিংবা অপ্রত্যাশিত ঘটনায় জীবনের অনেকটা সময় কাটে হতাশায়। অবশ্য খারাপ সময়টা তো সবসময় থাকে না। নিকষ কালো ছায়াটা জীবন থেকে সরাতে প্রয়োজন প্রচেষ্টা আর ধৈর্য্যশক্তি। তাহলে খারাপ সময় কেটে গিয়ে আলোর রেখাটা একদিন ঠিক দেখা দিবে। জীবনের সব মূহুর্ত নিশ্চয়ই আনন্দঘন হয়না। তেমনি ক্রিকেট মাঠে ব্যাট হাতে বেশ খারাপ সময় পার করছেন ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলি। ২২ গজটা ক্রিকেটারদের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানেও খারাপ সময় আসে আবার ভাল সময় আসে।

গেল তিন বছর ধরে সেঞ্চুরি খরা তো আছেই। সেই সাথে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতেও রানের দেখা পাচ্ছেন না বিরাট কোহলি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরটা এখন অবধি বিরাটের জন্য হতাশাজনক। নেই বড় কোন ইনিংস, নেই বিরাটসুলভ সেই আগ্রাসী ব্যাটিং। বিরাটের এমন খারাপ সময়ে বোলাররা আছে স্বস্তিতেই। এইত আইপিএলে গেল ম্যাচে লখনৌ সুপার জায়েন্টসের বিপক্ষে গোল্ডেন ডাকে ফিরেছেন বিরাট।

আইপিএল ইতিহাসে চতুর্থবার গোল্ডেন ডাকে ফিরলেন তিনি। লঙ্কান পেসার দুশমন্থ চামিরা ফিরিয়েছেন বিরাটকে স্বর্ণালি হাঁসের লজ্জাজনক ফিগারে। ইনিংসের প্রথম ওভারে চামিরার পঞ্চম বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট অফে লোকেশ রাহুলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন অনুজ রাওয়াত।

তৃতীয় উইকেটে ব্যাটিংয়ে নামেন বিরাট কোহলি। শর্ট অব গুড লেন্থে করা চামিরার পরের বলেই পুশ করতেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ লুফে নেন দিপক হুডা। পর পর দুই বলে দুই উইকেট শিকারে বিরাট কোহলিকে গোল্ডেন ডাকে ফেরান এই লঙ্কান পেসার।

বিরাট গোল্ডেন ডাকে ফিরলেও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসের ৯৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ১৮ রানের জয়টা অবশ্য ঠিক তুলে নেয় ব্যাঙ্গালুরু।

২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে আশিষ নেহরার বলে প্রথমবার গোল্ডেন ডাকে আউট হন বিরাট। এরপর ২০১৪ সালে সন্দ্বীপ শর্মার বলে দ্বিতীয়বারের মত গোল্ডেন ডাকে ফিরেন বিরাট। তিন বছর বাদে ২০১৭ আসরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে পেসার নাথান কুলটার নাইলের বলে গোল্ডেন ডাকে আউট হন এই ভারতীয় তারকা। এরপর পাঁচ আসর পর চলতি আইপিএলে নবাগত দল লখনৌ সুপার জায়েন্টসের বিপক্ষে নিজের প্রথম বলেই শূন্য রানে ফিরেন বিরাট।

চলতি আসরে খেলেছেন ৭ ম্যাচ। এই ৭ ম্যাচে ২০ গড়ে করেছেন মোটে ১১৯ রান। ফিফটির দেখাও মেলেনি এখন অবধি।

অপরদিকে, প্রথমবার আইপিএলে সুযোগ পেয়ে অনেকটাই ভাল পারফরম করছেন পেসার চামিরা। ২০১৮ সালে মাত্র ৫০ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় রাজস্থান রয়্যালসে। যদিও এক ম্যাচেও অভিষেকের সুযোগ হয়নি চামিরার। চলতি আসরের মেগা নিলামের আগে ২ কোটি রুপিতে তাঁকে দলে নেয় লখনৌ।

এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ৯.৫৬ ইকোনমিতে ৩৪ গড়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। রান খরুচে ছিলেন একাধিক ম্যাচে। প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম করতে না পারলেও দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উইকেট নিজের ঝুলিতে নিয়েছেন এই লঙ্কান পেসার।

ব্যাট হাতে এবারের আইপিএলে একেবারেই ছন্দে নেই বিরাট। জাতীয় দলের জার্সি গায়েও আগের সেই বিরাটের দেখা মিলছে না। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে রানের দেখাটা ঠিক মিলছে। তবে পুরনো বিরাট যেন কোথায় হারিয়ে গেছেন। পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস থাকলেও সেটিকে টেনে নিতে পারছেন না সেঞ্চুরি পর্যন্ত। সেই সাথে ধারাবাহিকতাটাও নেই।

দ্রুত আউট হয়ে দলকেও ঠেলে দিচ্ছেন ব্যাকফুটে। এই বিরাটই কিন্তু দলের অন্যতম আর ভরসা ছিলেন বছরখানেক আগেও। এখনও আছেন। কিন্তু সেই আস্থার পূর্ণ প্রতিদানটা হয়ত দিতে পারছেন না।সমর্থকরাও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বিরাটের রাজকীয় এক প্রত্যাবর্তনের। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link