গতিতে মত্ত পুরো ভারত। গতিতে বিস্মিত সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধারা। পুরো ‘র পেস’। সবাই যেন অপেক্ষায় থাকছে এই বুঝি হবে কোন বিশ্ব রেকর্ড। ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের ছেলে উমরান মালিক যেন এখন সবার মুখে মুখে। প্রতি ম্যাচের গতিশীল বলের পুরষ্কারটাও যেন তাঁর হাতেই উঠছে নিয়ম করে। তিনি যেন তাঁর গতি দিয়েই এসেছেন জয় করতে গোটা পৃথিবী।
উমরান মালিক, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের পেস বোলিং আক্রমণের নতুন এই সেনসেশন রীতিমত আগুন ঝড় তুলছেন বাইশ গজে। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের চোখ ছানাবড়া করা এক একটি ডেলিভারি। জাপানের বুলেট ট্রেনও হয়ত হার মেনে নেবে উমরানের কাছে। এক একটি বজ্রপাতের মত দ্রুত তাঁর বল পৌঁছে যায় বাইশ গজের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। চোখের পলক ফেললেই যেন আর আন্দাজ করা যাবে না বল ঠিক কোথায়।
ঠিক এমন ভাবেই উমরান মুগ্ধ করে রেখেছেন ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের। অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা সাধারণত পেস বোলিংটা বেশিই খেলে থাকেন। তাঁরা যখন উমরানে মত্ত, তখন বুঝতে হবে তিনি এসেছেন পুরো ক্রিকেটের গতির রাজ্য রাজ করতে। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার পিটারসন কমেন্ট্রি বক্সে বসে বিস্মিত হচ্ছেন নিয়ম করে।
আরেক কিংবদন্তি ম্যাথু হেইডেন তো রীতিমত কমেন্ট্রি বক্সে বসে আবদার করছেন, ‘১৪৬ এ বোলিং করবে প্লিজ?’ উমরান এখন হটকেক। তিনি এখন সবার নয়নের মণি। তাঁর দিকেই সবার চোখ। তিনি যেন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অবশ্য তাঁর সতীর্থ দক্ষিণ আফ্রিকান মার্কো জেনসেনও আলোড়ন সৃষ্টি করছেন তাঁর বোলিং বৈচিত্র দিয়ে।
এটা ধারানো করা হয়ে আগামী কয়েক বছরে জেনসেন রাজত্ব করবেন বিশ্বক্রিকেটকে। তাঁর বৈচিত্রের ঝুলি বেশ হৃষ্টপুষ্ট। উচ্চতার সাথে বলের গতি যথেষ্ঠ, সেই সাথে সুইং ও সিম পজিশনও একেবারে ঠিকঠাক, লাইন লেন্থের হেরফের ঘটেনা সচারচর। সেই সাথে বা-হাতি। এসবে যেন কোন দু’টো থাকলেই একজন বোলার মোটামুটি বলার মত একটি ক্যারিয়ার গড়ে ফেলতে পারবেন।
আবার তিনটে থাকলে তিনি হয়ে যেতে পারেন দীর্ঘমেয়াদে সেরা বোলারদের একজন। তবে সবগুলো গুণ থাকা বোলাররা ঠিক কতদূর পথ পাড়ি দিতে পারেন সেটা খুব একটা জানা নেই। জেনসেনের সাথে তুলনায় উমরান হয়ত খানিক ব্যাকফুটেই থাকবেন। উমরানের শুধু একটি স্কিলই রয়েছে। আর সেটা গতি। সেটা দিয়ে তিনি ঠিক কতটা সময় থাকতে পারবেন ক্রিকেট অঙ্গণে তা নিয়ে সংশয় হতেই পারে সকলের।
তবে সে আলোচনা একটু দূরে রেখে খানিক সময়ের জন্যে শুধুই উপভোগ করা যেতে পারে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই খেলোয়াড়ের বোলিং। প্রায় প্রতিনিয়ত তিনি বল করে যেতে পারেন ১৪৫ কিলো/ঘন্টা গতিতে। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের তাঁর করা ৯০ শতাংশ বলের গতি ছিল ১৪০এর উপরে। অথচ ১৭ বছর বয়সেই তিনি ছিলেন না কোন কাঠামোর আওতাধীন।
মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় তিনি এখন অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু। তবে গতি দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখলেও তিনি হয়ত বেশিদিন টিকতে পারবেন না। সেটা হয়ত তিনি জানেন। আর তিনি হয়ত নিজের উন্নতির নিয়ে কাজও করবেন। সেক্ষেত্রে তাঁর জন্যে উত্তম মেন্টর হতে পারেন ডেল স্টেইন। প্রোটিয়া এই পেসার একসময় শাসন করেছেন ক্রিকেট দুনিয়া।
পেস আর বৈচিত্র্যের সংমিশ্রণে তিনি ছিলেন ভংয়কর একজন বোলার। তিনিই আবার দায়িত্বে আছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বোলিং কোচের দায়িত্বে। তিনিও হয়ত তরুণ এই বোলারের বোলিং দেখে খানিকটা হারিয়ে যান নিজের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতির সাগরে। বারেবারে রোমন্থন করার চেষ্টা করেন সে সব স্বর্ণালী দিন। তিনি হয়ত উমরানকে কোন না কোন এক টোটকা দিবেন। তিনি হয়ত চাইবেন না এমন কাওকে হারিয়ে যেতে দিতে।
তবে নিঃসন্দেহে তিনি যে বিশ্বক্রিকেটের একজন নতুন তারকা হতে চলেছেন। উমরান এতটাই গতিশীল যে তিনি যেন স্লোয়ার বল করতেই পারেন না। তাঁর স্লোয়ার বলগুলো সর্বসাকুল্যে ১৩০ কিলো/ঘন্টা ছোঁয়। এমন একজন গতিশীল বোলিংয়ের সাথে লাইন-লেন্থ আর সে সাথে যদি সুইংয়ের মিশ্রণ ঘটাতে পারেন উমরান, তবে তিনি হতে পারেন ভারত ক্রিকেটের এক ধ্বংসত্মাক বোলিং অস্ত্র।