স্বপ্নের মত দিন পার করছেন তরুণ উমরান মালিক। এ স্বপ্ন দেখা তিনি হয়ত বন্ধ করে দিতে চাইবেন না। তিনি হয়ত চাইবেন আজীবন এমন একটা ঘুমের ঘোরে থাকতে। এমন স্বপ্ন ভেঙে উঠতে কে চায় বলুন? তবে উমরান হয়ত জেগে থেকেই এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি হয়ত তাঁর মস্তিষ্কের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে এমন অসাধারণ সব সময়ের এক কাল্পনিক চিত্র মঞ্চায়ন করেছেন।
মাত্র বছর পাঁচেকের মাথায় একজন অতিসাধারণ বালক থেকে এখন বিশ্ব ক্রিকেটের আলোচনার বিষয়বস্তু। গতির ঝলকের তৃষ্ণাতুর নয়নের ঝর্ণা হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন উমরান মালিক। শুধু যে তিনি গতি উৎপন্ন করে ক্ষান্ত হয়ে যাবেন না তা পূর্ব অনুমেয় ছিল। তিনি তো এসেছেন রাজ করতে। বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন দিনের গতির অগ্রদূত হয়ে।
নিজের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত তিনি তুলে নিলেন পাঁচ উইকেট। এ এক স্বপ্ন যাত্রা নয় তো কি! এমনকি তাঁর গোটা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের এটাই প্রথম ফাইফার। এমন এক বর্ণীল দিনের বর্ণনা করা নিশ্চয়ই যায়। এমন এক কৃতীত্বের প্রশংসা তো তিনি প্রাপ্য।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ও গুজরাট টায়টান্সের মধ্যকার ম্যাচে বয়েছে রানের বন্যা। দুই দল মিলিয়ে রান করেছে ৩৯৪। ব্যাটারদের তাণ্ডবলীলায় হায়দ্রাবাদের সেনাপতি যেন উমরান মালিক। ১৯৬ রান তাড়া করতে নামা গুজরাট উইকেট হারিয়েছে পাঁচটি। যার সব’কটি গেছে উমরানের পকেটে। প্রথম উইকেট হিসেবে উমরান তুলে নেন শুভমন গিলকে। অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে রুম বানিয়ে কভার অঞ্চল দিয়ে শট খেলতে চায় গিল।
তবে গতির কাছে পরাস্ত গিলের অফ স্ট্যাম্প উড়ে যায় ১৪৪ কিলো/ঘন্টার আঘাতে। সেখান থেকেই শুরু উমরানের শিকার। এরপর তিনি ভারতের অন্যতম সেরা মারকুটে ব্যাটার হার্দিক পান্ডিয়াকেও খাবি খাইয়েছেন উমরান। বাউন্স আর গতিতে কুপকাত পান্ডিয়াকেও তিনি তাঁর নিজের শিকার বানান। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে উমরানকে উইকেট দিয়ে ফেরেন পান্ডিয়া।
পরিকল্পনামাফিক ফিল্ডিং সাজানোর ফলাফল লুফে নেয় উমরান। আর ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ না হওয়ায় প্যাভিলনে ফেরেন টাইটান্স অধিনায়ক। সেখানেই শেষ প্রথম স্পেল। এরপর ১৪তম ওভারের দিকে আবার বোলিংয়ে আসেন উমরান। তখন খেলা জমে উঠেছে। উত্তেজনার পারদ আকাশ ছুঁয়েছে। বাইশ গজে তখন ঋদ্ধিমান সাহা ভিন্ন এক রুপে ব্যাট করে যাচ্ছেন হায়দ্রাবাদের বোলারদের তুলোধুনো করে।
অভিজ্ঞ ঋদ্ধিমানকে আবার সে গতির বিষবাণে ঘায়েল করেছেন উমরান। ১৫২ কিলো/ঘন্টা! ভাবুন তবে, ঋদ্ধিমান বোধকরি বলকে চোখের পলকে হারিয়ে ফেলেছেন। তার পরক্ষণেই আবিষ্কার করেছেন সে বল আঘাত করেছেন স্ট্যাম্পে। হাফ সেঞ্চুরি করা ঋদ্ধিমানেরও প্রস্থান উমরানের হাতে। এদিন যেন স্ট্যাম্পের আঘাত করতেই মত্ত ছিলেন উমরান।
নিজের লাইন লেন্থ ঠিক রেখে ক্রমাগত এক একটি আগুনের গোলা ছুঁড়ে দিয়েছেন ব্যাটারদের দিকে। নিজের শেষ ওভারে তাই পরপর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন উমরান। প্রথমটা হার্ডহিটার ব্যাটার ডেভিড মিলারের। ১৪৮ কিলো/ঘন্টার গুডলেন্থের বল স্ট্যাম্প বরারবর অগ্রসর হতে থাকে। সে বলেই লেগ সাইড দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকানোর প্রয়াসে নিজের উইকেটের বিসর্জন দিয়ে আসেন মিলার।
ঠিক তাঁর পরের বলেই ১৪৬ কিলো/ঘন্টার এক বলে স্ট্যাম্প উড়ে যায় অভিনব মনোহরের। ফুলার লেন্থের ওমন গতিশীল বলকে রুখে দেওয়ার কোন উপায়ই জানা ছিল না অভিনবে। ব্যাস, উমরানের পঞ্চম উইকেটে পরিণত হন তিনি। আর সে সাথেই উড়তে থাকা উমরান যেন নতুন উদ্যমে পাখা মেলার স্পৃহা পেল। এই উমরান মালিক যেন এসেছেন ক্রিকেটের বর্ণিল আকাশে উড়ে বেড়াতে। তিনি উড়ছেন, তিনি হয়ত উড়তে ভুলে যাবেন না কখনোই।