গ্লানি মোছা প্রলয়ের শাঁখ

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ কবিতার এই লাইনটি হালকা একটু পরিবর্তন করে নিয়েছেন হয়ত ঋদ্ধিমান সাহা। তাঁর মতে, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ সেথা শির’। বাংলার কবি, বাংলার ক্রিকেটার। সম্পর্কটা তো বড্ড কাছের। নিজেকে প্রমাণের চেষ্টায় কবিতা মন্ত্র হতে খানিক পরিবর্তনে নিশ্চয়ই দোষের কিছু নেই।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’ কবিতার এই লাইনটি হালকা একটু পরিবর্তন করে নিয়েছেন হয়ত ঋদ্ধিমান সাহা। তাঁর মতে, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ সেথা শির’। বাংলার কবি, বাংলার ক্রিকেটার। সম্পর্কটা তো বড্ড কাছের। নিজেকে প্রমাণের চেষ্টায় কবিতা মন্ত্র হতে খানিক পরিবর্তনে নিশ্চয়ই দোষের কিছু নেই।

সে যাই হোক। ঋদ্ধিমানের কথা ফিরি। ঋদ্ধিমান সাহা,  ভারতের ক্রিকেটে খুব একটা অপরিচিত নাম তিনি নন। এইতো সেদিন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তিনি রান করলেন। না রান করা না, রীতিমত রানের ফোয়ারা। ঋদ্ধিমান উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তাঁকে নিয়ে একটা মিথ আছে, তিনি নাকি খানিক ধীরগতি রান সংগ্রাহক। কই সাজরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে তো সে প্রমাণ মিলল না।

তিনি তো দিব্যি টি-টোয়েন্টি মেজাজে রান করে গেলেন ইনিংসের একেবারে শুরু থেকে শেষ অবধি। এগারো খানা চার মেরেছেন, সেই সাথে একখানা ছয়। ৩৮ বল খরচায় প্রায় ১৭৯ এর স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন ৬৮। তিনি নাকি ধীরগতির ব্যাটার! তবে এটা সত্য ব্যাটার হিসেবে ঋদ্ধিমান অতি সাধারণ একজন। ভারতের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে অতি সাধারণ হয়ে থাকাটা একটা অন্যায়।

ভারতবর্ষে তো আপনাকে একটু আলাদা হতে হবে। হ্যাঁ একটা জায়গায় ঋদ্ধিমান বেশ আলাদা। তিনি বেশ ভাল মানের উইকেটরক্ষক। মহেন্দ্র সিং ধোনির সমসাময়িক না হলে বোধহয় তিনি অনায়াসে একটা যুগ পার করে দিতে পারতেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। সে আবার ভিন্ন আলাপ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কি একটা মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়ে ঋদ্ধিমানকে, চিন্তা করুন তো একবার।

তাঁর জাতীয় দলের ক্যারিয়ার প্রায় শেষ বা শেষ। দীর্ঘকাল ধরে ক্রিকেট খেলে যাওয়া একটা খেলোয়াড়ের জাতীয় দলের ক্যারিয়ারটা লম্বা হবে না। এটা সে খেলোয়াড় মেনে নেন কি করে? তিনি তো খুব বেশি ভুলও করেন না, তবুও তিনি সুযোগটা ঠিক পাননা। অতিমানবীয় গুনাবলি নেই বলে? সে নাই থাকতে পারে। তাই বলে কি একজন কে নিয়ে কুৎসা রটানো যায়?

দিনকতক আগেই তো মাঠের বাইরে এক বিতর্কে নিজেকে আবিষ্কার করেন ঋদ্ধিমান। সেখানটায় তাঁর দোষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবুও প্রধান চরিত্র ছিলেন তিনি, প্রভাবক ছিল তাঁর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া। তিনি বোধহয় বাদ পড়েই গেলেন। আর হয়ত সুযোগ পাবেন না। এমন মানসিক পীড়া থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগত নিশ্চয়ই। সে জন্যে ক্রিকেট পাগল এই বাঙালির মাঠে ফেরার দরকার ছিল।

সে সুযোগটাও তো তিনি পেলেন না। জাতীয় দলের পরিকল্পনায় নেই তাই তিনি রঞ্জি ট্রফিতেও উপেক্ষিত। এও হয়! বয়স হয়েছে তাই বলে তো আর তাঁকে ফেলে দেওয়া যায় না। তিনি তো একেবারেই ফুরিয়ে যাননি। তিনি তো এখনও বেশ ভাল মানেরই একজন ব্যাটার। তাছাড়া দস্তানা হাতেও তিনি এখনও সেরাদের একজন। আরও একবার মানসিক আঘাত। সহ্য করে গেলেন ঋদ্ধিমান সাহা। অপেক্ষা রইলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মেগা নিলামের।

এখানেও তিনি ছিলেন প্রথম দিকে নিগৃহীত। তবে শেষের দিকে দল খুঁজে পান। গুজরাট টাইটান্স। ৩৭ বছর বয়সী ঋদ্ধিমান সব বঞ্চনার জবাব মাঠের ক্রিকেটেই দিতে। তিনি তাই করে দেখালেন। সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করলেন চাইলেই আপনি একজন ঋদ্ধিমানকে আড়াল করতে পারবেন না।

ঋদ্ধিমান সাহা আরও স্পষ্ট হোক। পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষটা রঙিন না হোক তবুও বিষন্নতা দূরে থাকুক। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে যাবেন তিনি নিশ্চয়ই, শিরদাঁড়া উঁচু করেই নেবেন প্রস্থান।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...