বিজয়ের রেকর্ড এবং ধোঁয়া ধোঁয়া

বিজয় ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসের কত বড় পারফরমার, তার চেয়ে এক মৌসুমে ভালো খেলা ক্রিকেটার কে ছিলেন; এসব কিছুই আমরা জানি না। আমরা পেছন ফিরলে কেবল দেখি অন্ধকারচ্ছন্ন ধোঁয়া ধোঁয়া কিছু কথাবার্তা।

এনামুল হক ‍বিজয় সবসময় একটু অন্যরকম। অন্যরকম বলেই ১৬ ডিসেম্বরে জন্ম তাই নিজের নামটা নিজে ‘বিজয়’ রেখেছেন।

নামকরণের আরও সার্থকতা পাওয়া গেলো-স্বাধীনতার এই পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে এসে তিনি দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের এক মৌসুমের সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়ে গেলেন। বিজয়ের সাফল্য কেবল এটুকু নয়। তিনি বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ঘরোয়া কোনো লিস্ট-এ টুর্নামেন্টে এক মৌসুমে হাজার রান স্পর্শ করেছেন। ধারাবাহিকভাবে তিনি পারফরম করে গেছেন। তাঁর ব্যাট হেসে, রান এসেছে।

সুতরাং বিজয়কে নিয়ে আমরা অবশ্যই গর্ব করতে পারি। কিন্তু কতোটা গর্ব করতে পারি? আমরা কী বলতে পারি যে, বিজয় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো এক মৌসুমের সর্বোচ্চ রান স্কোরার।

না, পারি না। আমরা আসলে কিছুই বলতে পারি না। বিজয় ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসের কত বড় পারফরমার, তার চেয়ে এক মৌসুমে ভালো খেলা ক্রিকেটার কে ছিলেন; এসব কিছুই আমরা জানি না। আমরা পেছন ফিরলে কেবল দেখি অন্ধকারচ্ছন্ন ধোঁয়া ধোঁয়া কিছু কথাবার্তা।

গত ক’দিন ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সুবাদে জানা গেলো, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এর আগে অন্তত দু’জন ব্যাটসম্যান এক হাজার রান করেছেন এক মৌসুমে। ২০০১ সালের লিগে মোহামেডানের কেনিয়ান ক্রিকেটার স্টিভ টিকোলো ১৬ ইনিংসে করেছিলেন ১ হাজার ২২৭ রান। এ ছাড়া গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কাছে যে রেকর্ড সংরক্ষিত আছে, তাতে দেখা যায়, ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে তিনি ১০০৮ রান করেছিলেন।

এ ছাড়া আর কেউ নেই?

এখানেই আসল মজাটা। আসলে আমাদের কাছে কোনো রেকর্ডই নেই। বিসিবির কাছে নেই, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট রেকর্ড সংগ্রাহক ক্রিকেট আর্কাইভের কাছে নেই; কারো কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কিছুদিন আগেরই কোনো ঘটনা লিপিবদ্ধ নেই।

১৯৭৩ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন নক আউট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। যাকে আজকের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পূর্বসুরী বলা যায়। এরপর প্রথম বিভাগ ক্রিকেট শুরু হয়; সেটাই ছিলো তখনকার সর্বোচ্চ স্তরের লিগ। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ অবধি তিন মৌসুম সর্বোচ্চ স্তরের ঢাকা লিগের নাম ছিলো ‘সিনিয়র ডিভিশন ক্রিকেট লিগ’। আর ১৯৮৭ সালে শুরু হয় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ।

কী ভাবছেন? ১৯৮৭ সাল থেকে সব রেকর্ড সংরক্ষিত আছে?

মোটেও না। ২০১৩ সালে এসে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ লিস্ট ‘এ’ স্ট্যাটাস পায়। তারপর থেকে আইসিসি, ক্রিকইনফো বা এ ধরণের সংস্থাগুলো রেকর্ড সংরক্ষণ করছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে কোনো রেকর্ড সংরক্ষণের নজির নেই। ক্রিকেট আর্কাইভ নামে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কিছু কিছু স্কোর কার্ড আছে; রেকর্ড নেই।

এই দায় কার?

এই দায়টা দুই কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) নিতে হবে। প্রথমত তারা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ারও এক যুগের বেশি সময় পরে এসে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে লিস্ট-এ স্বীকৃতি এনে দিতে পেরেছেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম আর্ন্তজাতিক একদিনের ম্যাচ খেলে ফেলে। তখন দেশে বর্তমান কাঠামোর প্রিমিয়ার লিগ শুরু হতে যাচ্ছে। অথচ সেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লিগটিকে লিস্ট-এ স্বীকৃতি পেতে আরও ২৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। বলাই বাহুল্য, এই সময়টা নষ্ট হয়েছে বোর্ডের কোনো উদ্যোগ না থাকায়।

এটা একটা দিক। আরেকটা দিক হল বোর্ডের নিজস্ব কোনো রেকর্ড রক্ষণের ব্যবস্থা নেই। লিস্ট-এ হোক আর নাই হোক, পৃথিবীর সব বোর্ড নিজেদের রেকর্ড সংরক্ষণ করে থাকে। বিসিবির এসব বালাই নেই। তারা বলতেই পারবে না ২০০২ সালে কে সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন; কে সেরা বোলার ছিলেন।

এর ভেতরে বাংলাদেশে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের ত্রাস সব ব্যাটসম্যানরা খেলে গেছেন। দর্শকের স্মৃতি বলে এই সময়ে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করেছেন এসব ব্যাটসম্যান। এমনকি দেশের মিনহাজুল আবেদীন নান্নু থেকে মুশফিকুর রহিম অনেকেই রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুর আজ আর কোনো খোঁজ নেই।

মাত্র দেড় দশক আগের ঘটনাও এখন আর খুজে পাওয়া সম্ভব না। মানে, আমরা আসলে ইতিহাসটাকেই হারিয়ে ফেলেছি। তাহলে কিসের ওপর দাঁড়িয়ে লড়াই করবো?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...