ফর্মহীনতা, টানা ব্যর্থতা, ধীরগতির ইনিংস – সব মিলিয়ে বছর খানেক আগেও আইপিএলের মঞ্চে হতাশ চোখে দেখা গেছে ডেভিড ওয়ার্নারকে। বাজে পারফরম্যান্সের পর অধিনায়কত্ব থেকেও বাদ পড়েন। এমনকি বেঞ্চেও কাটাতে হয়েছে কয়েক ম্যাচ। আগের আসরগুলো যার ব্যাটে ছিল রানের ফোয়ারা – সেই ওয়ার্নারকে দেখা গেল নিষ্প্রভ। খারাপ সময়ে হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
মেঘের অপর প্রান্তে সূর্য হাসে, আছে এক উজ্জ্বল নীল আকাশ; তেমনি ব্যর্থতার উলটো পিঠে সাফল্য আছে। সেই ব্যর্থতা কাটিয়েছেন ওয়ার্নারও। বছর ঘুরতেই এল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসর। আগের আসরে ‘সুপার ফ্লপ’ ওয়ার্নারকে মেগা নিলামে ৬.২৫ কোটি রুপিতে দলে ভেড়ালো দিল্লী ক্যাপিটালস।
দিল্লীর জার্সি গায়ে স্বরূপে ফিরেছেন ওয়ার্নার। প্রত্যাশাও এমন-ই ছিল। কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ছিলেন উড়ন্ত ফর্মে। ওয়ার্নারের দাপটে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা সহজেই ধরা দিয়েছে অজিদের হাতে। গেল আইপিএলের পর থেকে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন এই অজি ওপেনার। আইপিএলের পঞ্চদশ আসরের আগে অনুমেয় ছিল চড়া মূল্যেই বিক্রি হবেন ওয়ার্নার।
স্ট্রাইক রেট, গড় – সব দিক থেকেই গেল দুই আসরের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছেন ওয়ার্নার। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৮ ম্যাচ। এই ৮ ম্যাচে ৫২ গড় আর ১৫৫ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩১৩ রান। এই ৮ ম্যাচের চারটিতেই ফিফটির দেখা পেয়েছেন তিনি।
আগের আসরের ব্যর্থতার কালো ছায়া সরিয়ে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক রানে ফিরেছেন ওয়ার্নার। ফর্ম ক্ষণস্থায়ী, ক্লাস চিরস্থায়ী – এই বাণী ক্রিকেট পাড়ায় বেশ প্রচলিত। ওয়ার্নারের ক্লাসটা সবার জানা। তাঁর সামর্থ্য নিয়ে কোনো সংশয় নেই। হয়ত মাঝে কিছুটা থমকে গিয়েছিলেন – কিন্তু বাজে ফর্মটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ওয়ার্নার এখন উড়ন্ত ফর্মে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফর্মটা ওয়ার্নার বয়ে এনেছেন আইপিএলেও। আইপিএলের জার্সি বদলানোর সাথে সাথে পুরনো অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। আগের আসরে রান খরা কাটিয়ে ফর্মের তুঙ্গে আছেন এই অজি তারকা। গেল ম্যাচেই হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে খেলেছেন রেকর্ডগড়া ৯২ রানের এক ইনিংস। ক্রিস গেইলকে টপকে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ ফিফটির মালিক এখন ওয়ার্নার। ক্রিস গেইলের ৮৮ ফিফটির রেকর্ড ভেঙে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ৮৯ ফিফটির মালিক এই অজি তারকা।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে প্রায় লম্বা সময় ধরেই খেলেছেন ওয়ার্নার। ২০১৬ সালে তাঁর অধীনেই প্রথমবার শিরোপা জেতে হায়দ্রাবাদ। দলের বাকিরা ব্যর্থ হলেও ব্যাট হাতে ওয়ার্নার ছিলেন বরাবরই উজ্জ্বল। অধিনায়ক হিসেবে পারফরম্যান্সটাও ছিল নজরকাঁড়া। কিন্তু গেল আসরেই দেখা গেল উলটো চিত্র। ওয়ার্নারের খারাপ সময়ে পাশে পায়নি দলকে। প্রথমে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হল, এরপর একাদশ থেকেও বাদ দেওয়া হয়।
রীতিমতো অপমান করা হয় ওয়ার্নারকে। এবার সেই ক্ষোভটা ব্যাট হাতে হায়দ্রাবাদের বিপক্ষেই ঝাড়লেন তিনি। ৫৮ বলে ৯২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন এই অজি তারকা। নিজের পুরনো দলের বিপক্ষে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন দিল্লীর এই ওপেনার।
কঠিন রাস্তা প্রায়শই সুন্দর গন্তব্যে নিয়ে যায়। ক্যারিয়ারে কঠিন রাস্তাটা পার করেই এসেছেন ওয়ার্নার। জাতীয় দল বলুন কিংবা আইপিএল – ব্যর্থতার ঘেরাটোপ ঘুচিয়ে রানের ধারায় ফিরেছেন তিনি। ফর্মে থাকা ওয়ার্নার প্রতিপক্ষের জন্য সবসময়ই ভয়ংকর। বছর খানেক আগে হতাশ, বিষন্ন মনে সাইড বেঞ্চিতে বসে থাকা সেই ওয়ার্নার এখন ছুঁটছেন আগের মতই অদম্য গতিতে।