পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন সবার আগে বাদ। ক্রিকেট বলেই হয়ত এমনটা ঘটতে দেখা খুব বেশি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও প্রশ্ন তো জাগে কেন এমনটা হল? সমস্যাটা কোথায়? সমস্যার তো শেষ নেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তাঁদের এমন ভরাডুবির একটাই উত্তর হতে পারে আর সেটা হচ্ছে – সঠিক পরিকল্পনার অভাব।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অবস্থান টেবিলের তলানিতে। সম্ভাবনার সকল অংকের অবসান ঘটিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে দলটি। যদিও মুম্বাইয়ের এখনও চার ম্যাচ খেলা বাকি তবুও আশা নেই। কেননা মাত্র চারটি পয়েন্ট জড়ো করতে পেরেছে রোহিত শর্মার দল, দশ ম্যাচ থেকে।
টুর্নামেন্টের হিসেব অনুযায়ী আর মাত্র চারটি ম্যাচ বাকি তাঁদের। এই চার ম্যাচের সবগুলোতেও জয়লাভ করলেও আর প্লে-অফ খেলার সম্ভাবনা নেই। কেননা টেবিলের শীর্ষ তিন স্থানে থাকা দলগুলোর পয়েন্ট ছুঁতে পারার মত সুযোগ নেই মুম্বাইয়ের। তাছাড়া টেবিলের চতুর্থ স্থানে থাকা রয়েল চ্যালেঞ্জার্সের পয়েন্ট ১২, তিন ম্যাচ হাতে রয়েছে তাঁদের। সুতরাং মুম্বাইয়ের বাকি ম্যাচগুলো হতে চলেছে শুধুই নিয়ম রক্ষার ম্যাচ।
এমন ভরাডুবির পেছনে যে কারণটা সবার সামনে স্পষ্ট সেটা হচ্ছে বোলিং আক্রমণের অপ্রতুলতা। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাঁদের অন্যতম পেস আক্রমণের কাণ্ডারি জাসপ্রিত বুমরাহর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মত কাওকে খুঁজে পায়নি বা দলে ভেড়াতে পারেনি। এই জায়গাটায় তাঁদের পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। মেগা নিলামকে সামনে রেখে তাঁরা ট্রেন্ট বোল্টের মত বোলারকে ছেড়ে দিয়েছে।
অদ্ভুতরকমভবে নিলাম থেকে তাঁকে আবার কিনে নেওয়ার তেমন কোন ইচ্ছেই যেন তাঁদের ছিল না। বদলে তাঁরা কিনেছেন টাইমল মিলস ও ড্যানিয়েল স্যামসকে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরা দুইজনের কেউই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁদের দুইজনের ইকোনমি ১২ এর কাছাকাছি। অন্যদিকে জাসপ্রিত বুমরাহও একা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তিনি দশ ম্যাচ থেকে নিয়েছেন কেবল মাত্র পাঁচ উইকেট। ইকোনমি সাতের ঘরে।
তাছাড়া নিজের বাজেটের একটা বড় অংশ খরচ করেছে মুম্বাই জোফরা আর্চারকে কিনতে। অথচ তাঁরা নিশ্চিত ছিল যে এ মৌসুমে আর্চারকে পাওয়া যাবে না। ইনজুরিতে রয়েছেন ইংলিশ এই পেসার। ঠিক এখানটায় বিশ্বক্রিকেটের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আরও একজন ভালমানের বোলারের অভাব ভুগিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে। এই বোলিং আক্রমণের অপ্রতুলতা তাঁদেরকে ম্যাচ জয়ে কাছাকাছি নিয়ে যেতেও পারেনি অধিকাংশ সময়ে।
অথচ ক্রিকেটে প্রচলিত যে বোলাররাই নাকি ম্যাচ জেতান। শুধু যে বোলিং মুম্বাইয়ের প্রধান সমস্যা তা নয়। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রোহিত শর্মার অফফর্মও বেশ বড় একটা কারণ তাঁদের এমন ভরাডুবির। মারকুটে ব্যাটার রোহিতের দশ ম্যাচের সংগ্রহ সর্বসাকুল্যে ১৯৮ রান। অন্যদিকে বিশাল অংকের ক্রয়মূল্যের ভারে যেন নুইয়ে পড়েছেন তরুণ ঈশান কিষাণ।
১৫.২৫ কোটি রুপির একটা অদৃশ্য চাপ যেন কিষাণকে জড়িয়ে ধরেছে। আর তিনি সে বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতেও পারছেন না। শুধু যে সমস্যার শেষ এখানেই তা নয়। মিডল অর্ডার ধুকছে মুম্বাইয়ের। প্রতিটা ম্যাচেই সুরিয়াকুমার যাদবকে ভীষণরকম চাপে মুখে খেলতে হচ্ছে। তিনি চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারলে ঠিক কতটা ভয়ানক সেটা নিশ্চয়ই সবার জানা। তবে তিনি নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারছেন না।
অন্যদিকে ১৮ বছয় বয়সী তরুণ ক্রিকেটার ডেওয়াল্ড ব্রেভিস নিজের প্রথম আইপিএলেই ব্যাট হাতে ঝলক দেখাচ্ছেন। তবে তিনি তো এখনই একটা দলের মিডল অর্ডার বয়ে নিয়ে চলার মত পূর্ণতা অর্জন করতে পারেননি। তাঁকে সময় দিতে হবে। তাঁর ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। তাছাড়া একজন পুরোদস্তুর ফিনিশারের অভাবটাও মুম্বাই দলে রয়েছে। সেটা কারও দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে বলে মনে হয়না।
হার্দিক পান্ডিয়ার ফিটনেস ইস্যুতে তাঁকে দলে ভেড়াতে আগ্রহ দেখায়নি মুম্বাই। অন্যদিকে হার্দিকেরও ইচ্ছে ছিল নতুন কোন ফ্রাঞ্চাইজির হয়ে খেলার। ঐ যে ফিনিশারের অভাবটা আর পূরণ করা যাচ্ছে না। কিরন পোলার্ডও পৌঁছে গেছেন তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে গোধুলি লগ্নে। তাঁকে দিয়েও আর ঠিক হচ্ছে।
এই যে এতএত সমস্যার প্রতিকার ভেবে রাখা উচিৎ ছিল মুম্বাই টিম ম্যানেজমেন্টের। আর তাছাড়া এবার সুযোগ ছিল দলকে ঢেলে সাঁজানোর। তবে পরিকল্পনার বেশ অভাব ছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের নিলাম শুরুর আগে। যার ফল হিসেবে এখন এমন ভরাডুবির সম্মুখীন হতে হয়েছে দলটিকে। তবে আগামী দুই মৌসুমেও দলের ভেতর আমুল পরিবর্তন আনার সুযোগ নেই।
দলে থাকা খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা বিচার করেই পরিকল্পনা করতে হবে মুম্বাইকে। অন্যদিকে প্রার্থনা করতে হবে দলে প্রধান অস্ত্রগুলো যেন থাকে ইনজুরি মুক্ত। আর সেই সাথে খেলোয়াড়দের ফর্মহীনতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন দলের সবার সহয়তা। এখন শুধু অপেক্ষা আগামী মৌসুমের।