প্রায় সাড়ে চার বছর পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের স্কোয়াডে সুযোগ পান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রঙিন জার্সিতে লম্বা সময় ছিলেন দলের বাইরে। টেস্ট ফরম্যাটেই আধিপত্য ছিল এই অলরাউন্ডারের। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) প্রতি আসরেই বল হাতে দুর্দান্ত পারফরম করলেও জাতীয় দলে ডাক পেতেন না। যুজবেন্দ্র চাজাল, কুলদ্বীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজাদের ভীড়ে রঙিন পোশাকে নিজের জায়গা খুঁজে পাননি তিনি।
এরপর হুট করেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে চাহালকে হটিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ডাক পান অশ্বিন। দীর্ঘসময় পর দলে ফিরে যেন সবাইকে চমকে দেন তিনি। চাহালকে বাদ দেওয়ায় সমালোচনা যেমন ছিল – অশ্বিন ফেরায় তেমনি আলোচনাও ছিল ব্যাপক। অভিজ্ঞতার বিচারেই দলে রাখা হয়েছে এমনটাই জানানো হয় নির্বাচক প্যানেল থেকেও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র তিন ম্যাচে সুযোগ পেলেও ছিলেন দুর্দান্ত। মাত্র পাঁচ ইকনমিতে শিকার করেন ৬ উইকেট! এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও বোলিং নৈপুণ্য দেখান এই অফ স্পিনার।
চলছে আইপিএলের পঞ্চদশ আসর। বরাবরের মতই এবারের আসরে বল হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন অশ্বিন। দিল্লী ক্যাপিটালস থেকে এবারের আসরে পাড়ি দিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসে। রয়্যালসের জার্সি গায়ে উইকেট কম পেলেও ৭.২৫ ইকনমিতে বল করেন তিনি। টি-টোয়েন্টির বিচারে বেশ ভালই বলা চলে।
ব্যাটার হিসেবে আইপিএলের মঞ্চে কালে-ভদ্রে ক্যামিওর দেখা মিললেও বড় ইনিংস সেভাবে চোখে পড়েনি। টেস্ট ফরম্যাটে ব্যাট হাতে প্রায়সই বড় ইনিংস খেলেন তিনি। তবে টি-টোয়েন্টিতে বড় ইনিংসের দেখা পাননি তিনি; অবশ্য সেই সুযোগও পেয়েছেন কম। তবে এবার ব্যাট হাতেও দাপট দেখালেন অশ্বিন। নিজের পুরনো দল দিল্লী ক্যাপিটালসের বিপক্ষেই করলেন আইপিএল ইতিহাসে ব্যক্তিগত প্রথম ফিফটি।
বাকিদের ব্যর্থতার দিনে দেবদূত পাদ্দিকালের সাথে দুর্দান্ত কে জুটির পথে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি করেন অশ্বিন। ব্যাট হাতে প্রথমবারের মত খেলার সুযোগ পান তিনে। অশ্বিনকে তিনে পাঠানোয় অনেকের চোখই কপালে উঠেছিল। ভ্রু কুঁচকে ছিলেনও অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও খানিকটা সমালোচনা চলছিল। অভিজ্ঞ প্রোটিয়া তারকা ভ্যান ডার ডুসেন কিংবা পাদ্দিকালকে না নামিয়ে অশ্বিনকে প্রোমোট করাটা অনেকেই ভাল চোখে দেখেননি।
তবে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান ব্যাট হাতেই দিলেন এই অলরাউন্ডার। ৩৮ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে করলেন পঞ্চাশ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। দল হারলেও ব্যাট হাতে অশ্বিন ছিলেন উজ্জ্বল। আইপিএল ক্যারিয়ারে ১৭৯ ম্যাচ খেললেও এর আগে ফিফটির দেখা পাননি তিনি। ২০১৮ আইপিএলে সর্বোচ্চ ৪৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ব্যাট হাতে একটা ভাল ইনিংসের আক্ষেপ তো ছিলই। সেটিও পূরণ করলেন নিজের প্রাক্তন দলের বিপক্ষে।
আসরের আগেই জানতেন এবার উপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ মিলতে পারে কিছু ম্যাচে; টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই এমন সিদ্ধান্ত হয়। আর সেই সুযোগটা লুফে নিয়ে দারুনভাবে কাজে লাগালেন অশ্বিন।
মাস কয়েক বাদেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের। গেল আসরের মতই অশ্বিন প্রত্যাশা করবেন স্কোয়াডে থাকার। চাহাল, কুলদ্বীপরাও বল হাতে আছে দুর্দান্ত ফর্মে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পেসারদের আধিক্য থাকবে দলে সেটা প্রায় নিশ্চিত। তবে স্পিনারদের মধ্যে চাহাল থাকছেন সেটাও অনুমেয় করা যায়। সেই সাথে অভিজ্ঞতার আলোকে এবারও হয়ত টিকে যেতে পারেন অশ্বিন। তবে এর জন্য অশ্বিনকে বাকি ম্যাচগুলোতেও দেখাতে হবে নজরকাড়া পারফরম্যান্স।