কখনো ঝাঁকড়া চুল, কখনো কেশহীন। তবে ঠোঁটের সাদা রঙ লেপ্টে থাকা যেন ছিল একেবারে চিরন্তন ধ্রুব। তিনি যখনই মাঠে নেমেছেন ঠোঁটে থাকা সে সান্সক্রিম তাঁকে সবার মাঝে করেছে অনন্য। তবে মাঠের ক্রিকেটেও তিনি ছিলেন অনন্য, অপ্রতিরোধ্য একজন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে তিনি একজন কিংবদন্তি।
আন্ড্রু সায়মন্ডসকে মাঠের আলাদা করার আরও এক উপায় ছিল। তিনি ছিলেন বড্ড ক্ষ্যাপাটে। তাঁর শরীরি ভাষায় আলাদা এক ধরণের তেজ ছিল। তিনি যেন সদা প্রস্তুত ছিলেন প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে। নিজের জায়গা থেকে এক চুলও ছাড় দিতে নারাজ তিনি। মাঠের ক্রিকেটের নিজের সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দিতেই যেন তিনি নামতেন।
প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের বিপক্ষে শরীরি ভাষা হোক কিংবা মুখের তিনি যেন সবার উপর একটা প্রভাব ফেলতেই বেশি পছন্দ করতেন। সেটা তিনি করেও গেছেন তাঁর দলের হয়ে। সে দলে থাকা মানেই প্রতিপক্ষের সব আঘাতের প্রতিদান দেওয়া হবে টিম অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে। সেটা ব্যাট দিয়ে হোক কিংবা বল হাতে। শুধু প্রতিপক্ষের আঘাতের জবাব নয়।
তিনি যেন পালটা আঘাতও করতেন সমানতালে। তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবেই বিবেচিত হওয়া অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বছরটাই যেন কেমন এক অপয়া হয়ে সামনে আসছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে। শুরুর দিকে একদিনে দুই কিংবদন্তি রড মার্শ ও শেন ওয়ার্নকে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। যারা কি না অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের শোভা বাড়িয়েছেন। হয়েছেন কিংবদন্তি।
প্রয়াণের সে মিছিলে এবার যুক্ত হয়েছেন আন্ড্রু সায়মন্ডস। যে কোন মৃত্যুই মর্মান্তিক। তবে সায়মন্ডসের মত আগ্রাসী ক্রিকেটারের প্রয়াণ হয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায়। রাতের বেলায় গাড়ি দুর্ঘটনার স্বীকার হন তিনি। এরপর রাস্তা থেকে গড়িয়ে পড়ে যায় তাঁর গাড়ি। দুর্ঘটনাস্থলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আশেপাশে থাকা মানুষজন দৌড়ে এসে জরুরী সেবায় ফোন করেন। ততক্ষণে প্যারাম্যাডিকরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে খানিকক্ষণ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে গেছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা সায়মন্ডকে চিনতেই নাকি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যেরদের খানিক সময় ব্যয়ও হয়। অথচ মাঠের ক্রিকেটে সায়মন্ডসের আলাদা সত্ত্বা সবার মাঝেই ফুটে ওঠে দিনের তীব্র আলোর মত। সব আলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি মৃত্যু নামক একটা পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। আলোকরশ্মি থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন তিনি অনন্ত নিদ্রায় শায়িত।
তাঁর এমন মৃত্যু যেন মেনেই নিতে পারছে না পুরো বিশ্ব ক্রিকেট। মাঠে আগ্রাসনের দূত হলেও মাঠের বাইরের সায়মন্ডস ছিলেন সদা হাস্যজ্জ্বল এক পরম বন্ধু। প্রতিপক্ষ থেকে শুরু করে সতীর্থ সবাই যেন ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাইতো পুরো ক্রিকেট বিশ্ব ভেসেছে শোকের নোনা জলে। উপমহাদেশে তখনও সূর্য তাঁর আলো নিয়ে হাজির হয়নি। এর আগেই ঘটে যায় আরও একটি শোকাবহ ঘটনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সায়মন্ডসের মৃত্যুতে মর্মাহত হয়ে নিজেদের স্মৃতির পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। কতশত স্মৃতিতে তিনি থাকবেন চির উজ্জ্বল। হয়ত তাঁর সেই অবয়ব দেখা যাবে না ক্রিকেটাঙ্গনে তবে তিনি ক্রিকেটে থাকবেন চিরকাল। ক্রিকেট তাঁকে আষ্টেপৃষ্টে বাহুডোরে আগলে রাখবে।