বোলিং মার্ক থেকে দৌড় শুরু করলেন। বৈচিত্র্যময় অ্যাকশনে বল করলেন। ফুলার লেন্থের বলে পরাস্থ হলেন শুভমান গিল। আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট! প্রথম দেখায় তরুণ মালিঙ্গার কথা মনে পড়তেই পারে। অ্যাকশনটা অনেকটাই অল্প বয়সের মালিঙ্গার মত। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে জুনিয়র মালিঙ্গা হিসেবে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও পা দিতে পারেননি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও খেলা হয়নি। তবে নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছেন আইপিএলের মঞ্চে।
মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসরে খেলার সুযোগ। প্রথমবারের মতন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দল পেয়েছেন। আর নিজের অভিষেক ম্যাচে খেলতে নেমেই নজর কাড়া বোলিং করেছেন মাতিশা পাথিরানা।
২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর কেড়েছিলেন পাথিরানা। সেসময় বোলিং অ্যাকশনের কারণে বেশ ভাইরাল হন এই তরুণ পেসার। অনেকেই ‘জুনিয়র মালিঙ্গা’ আখ্যা দিয়ে দিলেন। কিংবদন্তি লঙ্কান তারকা মালিঙ্গার মতই বোলিং অ্যাকশন, ইয়র্কারটাও দিতে পারেন দুর্দান্ত; বয়স বিবেচনায় গতিও ভালই। অল্প বয়সেই নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করছেন তিনি।
মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। চার ম্যাচে শিকার করেছিলেন সাত উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত অভিষেক হয়নি। এখানেই শেষ নয়, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খেলেছেন মাত্র এক ম্যাচ। এছাড়া শ্রীলঙ্কা বোর্ডের হয়ে দু’টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। লঙ্কানদের জার্সি গায়ে এখনও নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাননি তিনি।
গেল আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের ডাগ আউটে আরেক লঙ্কান সতীর্থ মাহিশ থিকশানার সাথেই ছিলেন পাথিরানা। মূলত রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবেই দলের সাথে ছিলেন তিনি। আইপিএলের পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামে চেন্নাইয়ের হয়ে থিকশানা দল পেলেও দল পাননি পাথিরানা।
তবে কথায় আছে কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ। টুর্নামেন্টের মাঝপথে অ্যাডাম মিলনের ইনজুরি আশীর্বাদ হয়ে আছে এই তরুণ পেসারের জন্য। ডাক পেলেন চেন্নাইয়ের স্কোয়াডে। টুর্নামেন্টে প্রথম সাত ম্যাচের পাঁচটিতে হেরে ততক্ষণে প্লে অফের দৌড়ে অনেকটাই ছিটকে গেছে চেন্নাই। দলের সাথে যোগ দিলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না পাথিরানা। তবে বড় বড় তারকা ক্রিকেটারদের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করাটাই যেন এই তরুণের জন্য বিরাট প্রাপ্তির একটি।
তবে অপেক্ষার অবসানও ঘটলো। আইপিএলের মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ ধরা দিল অবশেষে। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে চেন্নাইয়ের ১৩তম ম্যাচে অভিষেক হয় পাথিরানার। আর অভিষেক ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শুভমান গিলকে ফিরিয়েছেন এই তরুণ পেসার। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই অফ কাটারে গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার উইকেট তুলে নেন তিনি। অভিষেক ম্যাচে ২৪ রানের বিনিময়ে শিকার করেন ২ উইকেট।
পাথিরানার জন্য এই অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বেশ কাজে দিবে। জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই বিদেশী ক্রিকেটার কোটায় আইপিএলে সুযোগ পাওয়াটা বেশ ভাগ্যের ব্যাপার। শেষ ম্যাচেও সেরাটা দিতে পারলে হয়ত পরের আসরে দলের নিয়মিত মুখ হয়ে উঠতে পারেন তিনি। এর মধ্যে হয়ত সুযোগ পেতে পারেন জাতীয় দলেও। অল্প বয়সেই ক্রিকেট পাড়ায় নিজেকে জানান দিয়েছেন তিনি।
নামের পাশে ইতিমধ্যেই জুড়ে গেছে জুনিয়র মালিঙ্গা আখ্যা। সেই নামের ভারটা কতটা বইতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে পাথিরানা নিশ্চয়ই চাইবেন নিজের নামেই ক্রিকেটবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হতে।