বাবর আজম, এক যুদ্ধংদেহী বাদশাহ

হলফ করে বলা যায়, উপমহাদেশ ছাড়া এমন দৃশ্য বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। ফলে, যার কথা বলবো তিনি যে এই অঞ্চলেরই কেউ সেটা বলাটা বাহুল্যতা মাত্র।

তিনি ক্রিজে নামলেই ঘটনাটা ঘটে। যুদ্ধংদেহী সাজ পোশাকে তিনি নামছেন, শ্যাডো করছেন, হেলমেটটা ঠিকঠাক করছেন – আর গ্যালারি তাঁর নাম ধরে চিৎকার করছে। দেখে মনে হয়, যেন কোনো রকস্টার কনসার্টের মঞ্চে উঠেছেন কেবল। এখনই তাঁর সুরে উদ্বেল হবেন সবাই।

যার কথা বলছি, তিনি অবশ্য কোনো শিল্পী বা রকস্টারের চেয়ে কম নয়। আর তাঁর জনপ্রিয়তা বা সমর্থকদের মধ্যে ইমপ্যাক্ট দেখলে মনে হয় যেন তিনি একা নন, তাঁর সাথে গোটা গ্যালারি, দর্শক মহল কিংবা গোটা দেশই খেলছে।

ভারতের বিরাট কোহলির ক্ষেত্রেও এটা ঘটে। কিংবা ঘটে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও। আর শচীন টেন্ডুলকার তো এই দৃশ্যটাকে একটা স্বর্গীয় রূপ দিয়ে তবেই মাঠের ক্রিকেট ছেড়েছেন।  তবে, পাকিস্তানে মাঝের কয়েকটা বছর এই দৃশ্যটা বেশ অচেনাই ছিল।

তবে, সেটা ফিরিয়ে এনেছেন বাবর আজম, পাকিস্তান ক্রিকেটের  কিংবা কারও কারও মতে ক্রিকেট বিশ্বের নতুন বাদশাহ। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তাঁর সাথে বিরাট কোহলির তুলনা হত। তবে, দিন দিন যেন বিরাট কোহলিকে তিনি ছাড়িয়েই চলেছেন।

কিন্তু, বাবর তো খুব পুরনো কেউ নন। ২০১৫ সালে ওয়ানডে ও ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। টেস্টও প্রথম খেলেন ২০১৬ সালেই। মানে, মোট ছয় কি সাত বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তাঁর। এই ছোট্ট সময়েই তিনি নিজের ব্যাটিং নিয়ে বিশ্বের তাবৎ ক্রিকেট বোদ্ধাদের ভাবাতে ও মুগ্ধ হতে বাধ্য করছেন। কেন তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবা পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের আইকন – তা বুঝি আর খুব বেশি ভেঙে বলার দরকার নেই।

আকমল ভাইদের কাজিন বাবর আজম। এই আকমল ভাইদের সাথে মানে কামরান আকমল, উমর আকমল কিংবা আদনান আকমলদের সাথেই  লাহোরে জন্ম নেওয়া বাবরের ক্রিকেটের হাতেখড়ি। কিন্তু, আকমলরা যেখানে নিজেদের প্রতিভা বা সম্ভাবনার ছিটেফোঁটাও কাজে লাগাতে পারেননি, সেখানে বাবর হয়ে উঠেছেন মহীরূহ। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট, যুব ক্রিকেট হয়ে পাকিস্তানের কান্ডারি তিনি।

পাকিস্তান অবশ্যই গর্বিত এক ক্রিকেট জাতি। তাঁদের আর যাই হোক কিংবদন্তির কোনো কমতি কোনো কালেই ছিল না। তবে, আচমকা জ্বলে উঠে হঠাৎ নিভে যেতে তাঁদের কোনো জুড়ি ক্রিকেট বিশ্বে নেই। তাঁরা ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বৈত এক চরিত্র – এই ভালো তো এই খারাপ। মাঝামাঝি যেন কিছুই নেই।

এই নিয়ে হাসি-তামাশার পাত্রও পাকিস্তান ক্রিকেট কম হয় না। তবে, বাবরের যুগে এসে সেদিন হয়েছে বাসি। বাবর একটা শক্ত আর স্থায়ী পাকিস্তান দল দাঁড় করানোর মন্ত্রে উজ্জীবিত। অনেকটা তাঁর নিজের ব্যাটিংয়ের মত – সুন্দর, নান্দনিক ও মজবুত।

 

আশির শেষভাগে পাকিস্তান বেশ নৃশংস এক দল ছিল। সেই সূত্র ধরে অনেকটা রূপকথার এক গল্প লিখেই তাঁরা ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয় করে। তবে, নব্বই দশকের পর থেকে পাকিস্তান আর সেই অর্থে সাহসী বা তেজী কোনো দল ছিল না। বরং ৯২’এর স্বর্ণালী দিনের আলো অনেকটাই ম্লান হয়েছে দুর্নীতি, বিতর্ক আর নানারকম কেলেঙ্কারির থাবায়। আর এরপরের একটা বড় সময় তো পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেরই দেখা মেলেনি।

তবে, এসব নেতিবাচকতা এখন অনেকটাই অতীত। সাথে সাথে পাকিস্তান ক্রিকেট দলটাও ভয়ডরহীন হয়ে উঠছে। তাঁদের ঘিরে  সমর্থকদের উন্মাদনাও বাড়ছে আর এই উন্মাদনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন বাবর আজম। পাকিস্তানের সমর্থকরা অন্তত একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকতেই পারেন যে, তাঁদের স্বপ্নগুলো সঠিক হাতেই আছে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link