কত সাধনার পর পাওয়া সেই রাত

প্রথম তিন আসরে প্লে অফ তো দূর - ছয়ের উপরে উঠতে পারেনি কলকাতা। তবে বিধাতা যেন ফিরে তাকালো ২০১১ আসরে। প্রথমবারের মত কলকাতা প্লে অফে; সফলতার কাছে গিয়েও এলিমিনেটরে বাদ পড়ে। তবে সেই আত্মবিশ্বাসটা পূর্ণতা পেল পরের আসরে। পূর্বের সব ব্যর্থতা, হতাশা বাক্সবন্দি করে এবার কলকাতা পৌঁছে গেল সফলতার শীর্ষে। নয় দলের ওই আসরে প্রথমবার শিরোপা জয় করে কলকাতা।

ফাইনালে ১৯১ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা। প্রথম বারের মত শিরোপা জয়ের হাতছানি কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর)। অপরদিকে, আগের দুই আসরে শিরোপা জিতে টানা তৃতীয় শিরোপা জয়ের সামনে চেন্নাই সুপার কিংস। তবে কলকাতার প্রথমে ধূলিসাৎ হয়ে যায় চেন্নাইয়ের হ্যাটট্রিক স্বপ্ন। তাও আবার সিলেবাসের বাইরে থেকে আসা মানবিন্দর বিসলার ব্যাটিং ঝড়ে।

সিলেবাসের বাইরে বলার কারণ : ফাইনালের আগে আইপিএলে ২১ ম্যাচে বিসলার ব্যাটে ছিল মাত্র এক ফিফটি। ফাইনালের আগে ছিল না উল্লেখযোগ্য কোনো ইনিংস। ২০১২ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ফাইনালে সেই বিসলার ভিন্ন রূপটা দেখা গেল। ৪৮ বলে ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংসে প্রথমবারের মত কলকাতাকে শিরোপা এনে দেন এই ওপেনার। মাত্র ২ বল বাকি থাকতে দুর্দান্ত এক জয়ে শিরোপা ঘরে তোলে কলকাতা।

আসরের শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি কলকাতার। দুই হারে পয়েন্টস টেবিলের তলানিতে ছিল। গেল আসরগুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনায় কলকাতার জন্য পরিচিত এক চিত্র। এরপর সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় গৌতম গম্ভীরের দল। পরের দশ ম্যাচের আট ম্যাচেই জয়; বিপরীতে এক হার ও এক ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। টানা জয়ে প্লে অফ প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় কলকাতার। লিগ পর্বে কলকাতার কাছে বাকি দলগুলো খুব একটা পাত্তা পায়নি বললেই চলে। লিগ পর্বে ১৬ ম্যাচে ১০ জয়ে ২১ পয়েন্টস নিয়ে দ্বিতীয়তে থেকে কোয়ালিফাই করে কলকাতা।

প্লে অফে দিল্লী ডেয়ারডেভিলসকে ১৮ রানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলে কলকাতা। আবারও শিরোপা জয়ের হাতছানি। এবার আর তীরে এসে তরী ডুবাতে চায় না গেল আসর ধরে ধুঁকতে থাকা দলটা। ফাইনালে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী চেন্নাই সুপার কিংস। মহেন্দ্র সিং ধোনির এই দলটা আগের দুই আসরেই শিরোপা জিতেছে। ফাইনালটা তাই বড় চ্যালেঞ্জিং হবে কলকাতার জন্য; সেটাই হয়েছিল।

সুরেশ রায়না-মাইক হাসির ব্যাটিং ঝড়ে ১৯০ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করে চেন্নাই। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই গম্ভীরের বিদায়; কলকাতার শিবিরে এক বড় ধাক্কা। এরপর জ্যাক ক্যালিসের সাথে বিসলার সেই স্মরণীয় জুটি। ১৩৬ রানের সেই জুটিতেই জয়ের ভিত পায় কলকাতা। গম্ভীর, লক্ষ্মী শুকলা, ইউসুফ পাঠানরা একপ্রান্তে ব্যর্থ হলেও বিসলা, ক্যালিরের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটের জয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা জয় করে কেকেআর।

প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের এক তাণ্ডব ইনিংস। আইপিএল ইতিহাসে নিজের নামটা স্মরণীয় করে রাখলেন ম্যাককালাম। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন এই ব্ল্যাকক্যাপস তারকা।

আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত এক জয়ে। প্রথম দুই জয়ে নিজেরদের শক্তিমত্তা জানান দিয়েছিল কেকেআর। এরপরই শেষ! প্রথম আসরে বিদায় নিল লিগ পর্বেই। পরের আসরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। আট দলের টুর্নামেন্টে এবার দলটার অবস্থান সবার শেষে। ভাগ্য বদল হয়নি পরের বারেও। ২০১০ আসরে অবস্থান ছয়ে!

প্রথম তিন আসরে প্লে অফ তো দূর – ছয়ের উপরে উঠতে পারেনি কলকাতা। তবে বিধাতা যেন ফিরে তাকালো ২০১১ আসরে। প্রথমবারের মত কলকাতা প্লে অফে; সফলতার কাছে গিয়েও এলিমিনেটরে বাদ পড়ে। তবে সেই আত্মবিশ্বাসটা পূর্ণতা পেল পরের আসরে। পূর্বের সব ব্যর্থতা, হতাশা বাক্সবন্দি করে এবার কলকাতা পৌঁছে গেল সফলতার শীর্ষে। নয় দলের ওই আসরে প্রথমবার শিরোপা জয় করে কলকাতা।

টেবিলের তলানিতে থেকে শিরোপা জয়ের গল্পটা সেদিন লিখা হয়েছিল চেন্নাইয়ে। মানবিন্দর বিসলা শূন্য থেকে বনে গেলে শিরোপা জয়ের নায়ক। আগের তিন আসরের হতশ্রী পারফরম্যান্সটা নিমিষেই চাপা পড়ে গেল শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মাধ্যমে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...